রাজিব শর্মা »
বাজারে বেড়ে চলেছে ভোজ্যতেলের দাম। গত ১৫ দিনের ব্যবধানে সকল ধরনের ভোজ্যতেলের দাম লিটার প্রতি বেড়েছে ৫ টাকার চেয়ে বেশি।
রোববার খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাই ঘুরে তেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে পণ্যটির দাম বাড়তির তথ্য জানা যায়।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল খুচরা বিক্রি হয়েছে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ১৪৮ থেকে ১৫০ টাকা, এর আগে বিক্রি হয়েছিল ১৪৩ থেকে ১৪৫ টাকা। এই দুই সপ্তাহে খোলাবাজারে সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ৫ থেকে ৭ টাকা। অন্যদিকে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ থেকে ১৬৭ টাকা, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা। প্রতি লিটার রাইস ব্রান তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭৪ থেকে ১৭৬ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগেও ১৭০ থেকে ১৭৬ টাকা। পাশাপাশি প্রতি লিটার খোলা পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে ১৩৭ থেকে ১৩৯ টাকা। আর প্রতি লিটার পাম অয়েল সুপার বিক্রি হয়েছে ১৪৫ টাকা। এক কথায় বলা যায়, প্রায় সব ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে ৫ থেকে ৭ টাকা।
সরকারি বাজার তদারকি প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্যমতে দাম বাড়তির চিত্র দেখা যায়। সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতেও মাসের ব্যবধানে ভোজ্যতেলের দাম বাড়তির চিত্র দেখা যায়। তথ্যমতে বাজারে লুজ খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৫১ থেকে ১৫৫ টাকা, পাম অয়েল সুপার ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা, আর পাম অয়েল লুজ ১৩৭ থেকে ১৪০ টাকা, আর বোতলজাত সয়াবিন এক লিটার ১৬৫ থেকে ১৬৫ টাকা, ২ লিটার ৩২৫ থেকে ৩৩০ টাকা, ৫ লিটার সয়াবিন ৭৭০ থেকে ৮১০ টাকা। তথ্যমতে লিটার প্রতি ৪ থেকে ৫ টাকা বাড়তি দেখা যায়।
বকসিরহাটের খুচরা ব্যবসায়ী মো. আলী সওদাগর বলেন, খাতুনগঞ্জের পাইকারি আড়তে সয়াবিন ও পাম অয়েলের দাম লিটার প্রতি ৫ টাকার বেশি বেড়েছে। আর নানা ব্র্যান্ডের বোতলজাত সয়াবিনে ১০ টাকার চেয়ে বেশি বেড়েছে।
রেয়াজউদ্দিন বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী মো. রফিক বলেন, আমরা খাতুনগঞ্জ থেকে খোলা ভোজ্যতেল সংগ্রহ করি। আর বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সয়াবিন ও রাইস ব্যান কোম্পানি থেকে কেনা হয়। গত ১৫ দিন ধরে তেলের দাম ক্রমশ বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা আমাদের বলছেন, সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে। তিনি আরও বলেন, খুচরা বিক্রেতারা সয়াবিন তেলের দাম বাড়ায় না। তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে হাতে গোনা কয়েকটি কোম্পানি। তারা সরকারের সঙ্গে বসে তেলের দাম নির্ধারণ করে মূল্য বাড়ায় বা কমায়। আবার কোনো ঘোষণা ছাড়াই মিল পর্যায় থেকে দাম বাড়িয়ে দেয়। এবারও সরকার পতনের পর তারা বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করছে।
এদিকে ক্রেতা ও খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাই পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ী মো. সরওয়ার উদ্দিন বলেন, সয়াবিন তেলের সরবরাহ প্রায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কমেছে, তাই বুকিংয়ের হার অনেক বেড়েছে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারেও তেলের দাম বাড়ছে। কাজেই তার প্রভাব দেশীয় তেলের বাজারে পড়েছে।
পাইকারি ব্যবসায়ী মো. আলতাব হোসেন বলেন, সরকার পতনের পর দেশীয় বাজারে আমদানি বুকিং কমেছে। কোম্পানিরাও আমাদের চাহিদা অনুযায়ী সয়াবিন দিতে পারছে না। এখন যেসব তেল স্টক আছে তার মধ্যে মধ্যস্বত্ব কারবারিরা তেলের দাম বাড়িয়েছে। এই মুহূর্তে বাড়তি দরে কিনতে হচ্ছে বলে জানান এ ব্যবসায়ী।
নাম প্রকাশের অনুরোধে একটি করপোরেট কোম্পানির উপমহাব্যবস্থাপক বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে, তাই স্থানীয় বাজারেও বেড়েছে। জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাজারে টনপ্রতি ৯৪৯ থেকে ৯৮৬ ডলারে সয়াবিন বুকিং করেছি। আগস্টের মাঝামাঝিতে একটু দাম কমছিল কিন্তু দেশের রাজনৈতিক জটিলতায় বুকিং করতে পারিনি। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে এসে তা বেড়ে হয়েছে এক হাজার ৩০ থেকে এক হাজার ৪০ ডলার। যার কারণে আমদানিকারকরা আপাতত সয়াবিন ও পাম তেলে বুকিং করছে না। এতে সররাহ কমেছে। যার ফলে বাজারে তেলের দাম বেড়েছে।
এদিকে আন্তর্জাতিক বাজার সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন সময়ে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম ছিল ৯৮৬ ডলার, জুলাইয়ে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৭৯ ডলারে। আগস্টে সয়াবিন তেলের দাম কিছুটা কমলেও সেপ্টেম্বরের ৪ তারিখ পর্যন্ত তা টনপ্রতি এক হাজার ৩১ ডলারে বিক্রি হয়েছে।
তবে আর্ন্তজাতিক বাজারে কিছুটা বাড়তি দেখা গেলেও ইতিপূর্বে যেসব ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে তাতে সরকারি তথ্যমতে বাজার সংকট ও দাম বাড়তির কথা না।
বাংলাদেশ বাণিজ্য ও ট্যারিফ কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ভোজ্যতেলের বার্ষিক চাহিদা ২২ লাখ টন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২৩ লাখ টন আমদানি করা হয়েছে। সেই হিসেবে ১ লাখ টন ভোজ্যতেল বেশি আমদানি হয়েছে। বাজারে তেলের সংকট হওয়ার কথা নয়। ইতপূর্বের বুকিং রেট অনুসারে যদি সয়াবিন বাজারে আসে তার দাম বর্তমানে বাড়ার কথা নয়।