বিষ দিয়ে মাছ শিকার বড় বিপর্যয় ডেকে আনবে

ফটিকছড়ি উপজেলার বিভিন্ন খাল ও হালদা নদীর সংযোগ অংশে বিষ প্রয়োগ করে নির্বিচারে মাছ শিকারের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা বলছেন, রাতের আঁধারে একটি সংঘবদ্ধ চক্র নদী ও খালে বিষ ঢেলে মাছ মেরে সকালে তা সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করছে।
বাংলাদেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীর নাজিরহাট ও রোসাঙ্গিরি অংশ, ধুরুং খালের পাইন্দং অংশ, তেলপারই খাল, ভূজপুর রাবারড্যাম সংলগ্ন এলাকা ও যোগিনীঘাটা এলাকায় নিয়মিত এভাবে মাছ শিকার চলছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণেই এই চক্র বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বিষ ব্যবহার করে মাছ মারা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ, কারণ এতে শুধু মাছ নয়, পানির অন্যান্য প্রাণী ও পরিবেশও ধ্বংস হয়ে যায়। এ ধরনের নিধনকৃত মাছ খাওয়া মানুষের স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর।

বাঙালিয়ানার ঐতিহ্যের একটা অংশ ছিল মাছে ভাতে বাঙালি। রীতিমতো তিন বেলা ভাতের প্লেটে মাছ থাকতেই হবে। মাছ বাঙালির দৈনন্দিন জীবনে খাদ্য তালিকায় ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এজন্যই আমরা মাছে ভাতে বাঙালি। আজও ম্লান হয়নি এ ঐতিহ্য। তবে ঐতিহ্য কিছুটা কমেছে।

সোনালী অতীতে বাংলাদেশী মানুষের দৈনন্দিন জীবনে প্রাকৃতিকভাবে মাছ চাষ, অল্প সময়ে অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় প্রাকৃতিক খাদ্য দিয়ে মাছ দ্রুত তাজা ও বৃদ্ধিকরন, এতে মাছের প্রাকৃতিক স্বাদ হ্রাস পাচ্ছে। এছাড়াও মনুষ্য সৃষ্টি সংকটের কারণে প্রাকৃতিকভাবে মাছ প্রজনন ও উৎপাদন কমে যাওয়াই প্রাকৃতিক মাছের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক মাছের বাজার মূল্য বেশ চড়া হওয়াই নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য মাছ কিনে খাওয়া দুঃসাধ্যের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। চড়ামূল্য ও চাষী মাছের স্বাদের কমতির কারণে ভোজন প্রিয় বাঙালি জীবনে মাছ খাওয়ার পরিমাণ কিছুটা কমেছে। সামুদ্রিক ইলিশতো এখন সোনায় সোহাগা। চড়া বাজার মূল্যের কারণে নিম্ন, মধ্যবিত্ত পরিবারে কিনে খাওয়ার কোন উপায় নেই।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা নদী গবেষক ড. মো. মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন, বিষ প্রয়োগ করে মাছ মারাটা খুবই ক্ষতিকর একটা বিষয়। শুধু শাখা খালের জন্য না আমাদের দেশের নদীর জীববৈচিত্র্য ও মাছ শূন্য হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে বিষ প্রয়োগে মাছ নিধন। মাছ মারার জন্য রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা অবৈধ, অনৈতিক এবং পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এটি জলজ জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে, বহু প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী মেরে ফেলে এবং মানব স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর।

বিষ দিয়ে মাছ শিকার বন্ধ করা না হলে যে বিপর্যয় ঘটবে তা রোধ করা সম্ভব হবে না।