সুপ্রভাত ডেস্ক :
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় অনুদান বন্ধ ও এটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবার তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে সংস্থাটি থেকে তার দেশকে প্রত্যাহার করার ঘোষণা দিলেন। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও অন্যদের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে ট্রাম্প বলেছেন, জাতিসংঘের এ সংস্থাটি থেকে তিনি নিজেদের সরিয়ে নিচ্ছেন এবং তহবিল অন্য কোথাও দেবেন।
এরই মধ্যে নিজের ইচ্ছার কথা জাতিসংঘ ও কংগ্রেসকে অবহিত করেছেন ট্রাম্প। যদিও প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে লেগে যাবে প্রায় এক বছর। জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টেফানি দুজারিক যুক্তরাষ্ট্রের নাম প্রত্যাহার করে নেয়ার আবেদনটি পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন, যা কার্যকর হবে ২০২১ সালের ৬ জুলাই থেকে।
কংগ্রেসের বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির অন্যতম সদস্য ও ডেমোক্র্যাট দলের সিনেটর রবার্ট মেনেন্দেজ টুইটে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, ‘কংগ্রেস প্রজ্ঞাপনটি দেখতে পেয়েছে, পোটাস (ট্রাম্প) এই মহামারীর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে সরিয়ে নিতে চলেছেন। এটা আমেরিকাকে অসুস্থ করে দেবে, একা করে দেবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সিবিএসকে বলেছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে কিছু সংস্কার আনতে ও তাদের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থেকে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন তারা, যদিও সংস্থাটি এ পরামর্শকে প্রত্যাখ্যান করে। ওই কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যেহেতু সংস্কার আনার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে, তাই আমরা আজ (মঙ্গলবার) তাদের সঙ্গে সম্পর্কটার সমাপ্তি টানলাম।’
এদিকে নভেম্বরের নির্বাচনে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চলা জো বাইডেন টুইট করেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের প্রথম দিনই আমি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় পুনরায় যোগদান করব এবং বিশ্ব মঞ্চে আমাদের নেতৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করব।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় সবচেয়ে বেশি তহবিল যোগান দেয় যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৯ সালে তারা ৪০ কোটি ডলার তহবিল দেয়, যা সংস্থাটির মোট বাজেটের ১৫ শতাংশ।
১৯৪৮ সালের রেজল্যুশন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র সরে যেতে পারবে, তবে এজন্য এক বছর আগে জানাতে হবে এবং এই সময় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ দিতে হবে। ট্রাম্প এ ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নেন, তা পরিষ্কার নয়। যদিও দুজারিক দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, এই শর্ত পালন করতে হবে। এটা ঠিক, যুক্তরাষ্ট্র সরে যাওয়ায় ভবিষ্যতের অনেক কর্মসূচি নিয়ে আর্থিক সংকটে পড়বে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
গত এপ্রিলে ট্রাম্প হুমকি দিয়ে বলেন, আগামী ৩০ দিনের মধ্যে তাৎপর্যপূর্ণ সংস্কার আনতে না পারলে তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় তারা অর্থ যোগান বন্ধ করে দেবেন। মে মাসে তিনি বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে আমরা সম্পর্ক শেষ করতে যাচ্ছি এবং এই তহবিল আমরা অন্য কোনো বৈশ্বিক পাবলিক হেলথ চ্যারিটিতে দিয়ে দেব।’
তিনি তখন আরো বলেন, ‘চীন সরকারের কুকর্মের ফল আজ বিশ্ব ভোগ করছে। তারাই বৈশ্বিক মহামারীকে প্ররোচিত করেছে।’
ট্রাম্পের মতে, ভাইরাস নিয়ে চীনই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে ভুল পথে পরিচালিত করছে। যদিও তিনি এ ব্যাপারে কোনো তথ্যপ্রমাণ দিতে পারেননি। শুধু বলেছেন, ‘বিশ্ব সংস্থার ওপর পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে চীন।’
হয়তো এই ক্ষোভ থেকেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিলেন।