সালাহ উদ্দিন সায়েম »
‘কলেজে পড়ার জন্য গ্রাম থেকে যখন বাবা-মাকে ছেড়ে শহরে আসি, তখন প্রতি সপ্তাহে তাদের একটি করে চিঠি লিখতাম। জবাব না পেলেই দুশ্চিন্তায় পড়ে যেতাম। এখন আমার সন্তানও দূরে থাকে। কিন্তু সে আর চিঠি লেখে না। ফোনে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করে, ভিডিও কলেও কথা বলে।
চট্টগ্রাম জিপিওতে (জেনারেল পোস্ট অফিস) সুপ্রভাতকে কথাগুলো বলছিলেন ৬৮ বছর বয়সী নুরুল কবির।
একটি সময়ে চিঠিই ছিল যোগাযোগের মাধ্যম। চিঠি লিখে তার উত্তরের জন্য প্রহর গুনবার দিনগুলোও ছিল অনেক মধুর। নীল খামে প্রিয় মানুষের চিঠি পাওয়ার স্মৃতি এখনও নস্টালজিক করে তোলে অনেককে। এভাবে অনেক বরেণ্য ব্যক্তিত্বের চিঠি পরবর্তীতে ইতিহাসের অংশ হয়ে উঠেছে। একটি সময়ে পত্রোপন্যাসের সৃষ্টিও হয়েছিল বাংলাসহ বিশ্ব সাহিত্যে। এখন চিঠির সেই দিন নেই।
কুরিয়ার সার্ভিস, মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটের সঙ্গে প্রতিযোগিতার পাল্লায় পিছিয়ে পড়ছে ডাক বিভাগ। এখন ইন্টারনেট ও অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মানুষ মুহূর্তে একে অপরের কাছে শর্ট মেসেজ আদান-প্রদান এবং অডিও ও ভিডিও কলে কথা বলছে ।
সময়ের প্রবাহে দ্রুত প্রযুক্তিগত অগ্রগতির কারণে প্রায় হারিয়ে গেছে এক সময়ের জনপ্রিয় খোলা ডাক, টেলিগ্রাম। তাই পথে-ঘাটে জরাজীর্ণ অবস্থায় দেখা যায় ভাঙাচোরা ডাকবাক্সগুলোকে। তবে ডাক বিভাগে ব্যক্তিগত চিঠির আদান-প্রদান না হলেও দাপ্তরিক চিঠির সংখ্যা কমেিেন।
এমন প্রেক্ষাপটে আজ ৯ অক্টোবর বিশ্বের অন্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব ডাক দিবস।
পোস্ট অফিসের কার্যক্রমে ধীরগতির কারণে ডাক বিভাগের মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রমের প্রতি মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বিকাশ, ডাচ বাংলা, ইউ ক্যাশ, শিওর ক্যাশসহ অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ভিড়ে ডাক বিভাগের নগদ মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম হিমশিম খাচ্ছে।
তবে ডাক বিভাগের ইলেকট্রনিক মানি ট্রান্সফার সার্ভিস (ইএমটিএস) ও পোস্টাল ক্যাশ কার্ডের ডিজিটাল কার্যক্রমের কারণে প্রতিষ্ঠানটির সেবার মান বৃদ্ধি পেয়েছে।
জানা গেছে, ইলেকট্রনিক মানি ট্রান্সফার সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে খরচ কম, সময়ও কম লাগে। আবার কেউ যদি মনে করেন যে টাকা পাঠানো হয়েছে, তা তখনই তিনি তুলবেন না সে সুযোগও পাবেন ১৪ দিন। ১৫ দিন হয়ে গেলে শুধু সংশ্লিষ্ট পোস্ট অফিসে জানালে জরিমানা ছাড়াই ওই টাকা তোলা যাবে। তবে কেউ যদি বলেন, তাঁর আত্মীয় পোস্ট অফিস পর্যন্ত কষ্ট করে যেতে চাইছেন না, তাহলে সেই আত্মীয় যাতে ঘরে বসেই টাকা পান, ডাক বিভাগ সে ধরনের সেবাও দিচ্ছে।
ডাক বিভাগ ২০১০ সাল থেকে চালু করেছে পোস্টাল ক্যাশ কার্ড। এ কার্ড ব্যবহারকারীরা যেসব পোস্ট অফিসে এই সুবিধা আছে, সেখান থেকে টাকা তুলতে ও অন্য কারও অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে পারবেন।
এদিকে আধুনিকতার ছোঁয়ায় কুরিয়ার সার্ভিসগুলো নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থার মাধ্যমে বাজার দখল করে নিচ্ছে। অন্যদিকে পরিবহন ব্যবস্থার সনাতন পদ্ধতির কারণে ডাক বিভাগ গ্রাহকদের কাক্সিক্ষত সেবা দিতে পারছে না। এর ফলে সাধারণ মানুষ অতিরিক্ত মাশুল দিয়ে বেসরকারি কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে তাদের পণ্য আদান-প্রদান করছেন। এতে কমে যাচ্ছে ডাক বিভাগের গ্রাহক ও আয়।
বাংলাদেশ ডাক বিভাগের চট্টগ্রাম বিভাগের ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেল মুহাম্মদ আবদুল্লাহ সুপ্রভাতকে বলেন, ‘প্রযুক্তির কারণে ব্যক্তিগত চিঠির সংখ্যা কমে গেলেও দাপ্তরিক চিঠির সংখ্যা কিন্তু কমেনি। তাছাড়া, এখন তো ডাক বিভাগে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। ডিজিটাল প্রযুক্তির আওতায় ডাক বিভাগ এখন ডিজিটাল সার্ভিস দিচ্ছে গ্রাহককে।
প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বেসরকারি মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান ও কুরিয়ার সার্ভিস কিন্তু গ্রামে-গঞ্জে সেবা দিচ্ছে না। ডাক বিভাগ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেবা দিচ্ছে। জনবল সংকট ও নানা সীমাবদ্ধতার কারণে ডাক বিভাগের গতিশীলতা কিছুটা কম থাকাটা স্বাভাবিক।