বিপ্লব উদ্যানে মজাদার স্ট্রিটফুড

হুমাইরা তাজরিন »

‘শহরে আড্ডা দেওয়ার জায়গা খুব কম। সেই সঙ্গে মজাদার স্ট্রিটফুড পাওয়া তো রীতিমতো দুরুহ ব্যাপার। কিন্তু বিপ্লব উদ্যান এলাকা একেবারে আলাদা। কেননা ব্যস্ততম মোড়ের কাছে হলেও সবুজের সান্নিধ্যে এখানে আড্ডা দেওয়ার জায়গা যেমন আছে ঠিক তেমনি ফাঁকে সুলভমূল্যে মুখরোচক স্ট্রিটফুডের ব্যবস্থাও রয়েছে। তাই বন্ধুরা সময় পেলেই এখানে একত্রিত হই।’- নগরীর ২ নম্বর গেইট মোড় সংলগ্ন বিপ্লব উদ্যানের পাশে মজাদার স্ট্রিটফুড সম্পর্কে বলছিলেন আরাফাত হোসেন।

নগরীর ব্যস্ততম মোড় ২ নম্বর গেইট এলাকা। প্রতিদিন নগরীর বিভিন প্রান্তের মানুষ এখান দিয়ে আসা যাওয়া করেন। মোড়ের সঙ্গে রয়েছে ১৯৭৯ সালে ২ একর জায়গার উপর ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবী নারী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার স্মরণে র্নিমিত ‘ বিপ্লব উদ্যান’।

২০১৯ সালের শেষের দিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এই উদ্যান আধুনিকায়ন করার প্রকল্প গ্রহণ করে। ‘স্বাধীনতা স্তম্ভ’ নামে একটি ভাস্কর্যকে কেন্দ্র করে চারপাশে বসার কংক্রিট বেঞ্চি দিয়ে এই উদ্যানটি সাজানো হয়েছে। নানা প্রজাতির ফুলের গাছ সমৃদ্ধ উদ্যানটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। বিনা টিকিটে যে কেউ এখানে বসে আড্ডা দিতে পারেন।

তবে বিকেলটায় এখানে জনসমাগম বেশি হয়। পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে সব বয়সী মানুষ এখানে এসে সময় কাটান। এই লোক সমাগমকে কেন্দ্র করে এখানে গড়ে উঠেছে ভ্রাম্যমাণ বেশ কয়েকটি স্ট্রিট ফুডের দোকান।

আড্ডার ফাঁকে মুখরোচক এসব স্ট্রিটফুডের চাহিদা এখন তুঙ্গে। কেউ কেউ কেবল এসব খাবার খেতেই উদ্যানের আশপাশে ভিড় করেন। উদ্যানের অদূরে নামি দামি রেস্টুরেন্ট এড়িয়ে এসব খাবারই যেন নগরবাসীর পরম প্রিয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিকেল গড়াতেই নানা ধরনের স্ট্রিটফুডের কার্ট এসে সারিবদ্ধভাবে তাদের পসরা সাজানো শুরু করেছেন। ক্রেতারাও ধীরে ধীরে আসতে শুরু করেছেন। উদ্যানের অদূরে একটি অভিজাত শপিং মল থেকে কেনাকাটা সেরেই স্ট্রিটফুডের দোকানের সামনে ভিড় করছেন ক্রেতারা। আগে থেকেই যারা উদ্যানে আড্ডা দিচ্ছিলেন কার্ট খুলতেই যেন উল্লসিত হয়ে পড়েন। যে যার পছন্দ অনুযায়ী খাবারের দোকানের সামনে গিয়ে অর্ডার করছেন প্রয়োজন মতো। তবে বেশিরভাগ খাবার মিলছে বিকেল ৪ টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত।

ভ্রাম্যমাণ স্ট্রিটফুডের দোকানি মো. সোহেল বলেন, ‘ইন্ডিয়ান ফুডের দোকান এখানে বেশ কয়েকটি আছে। সবাই ইন্ডিয়ান স্টাইলে খাবার রান্না করে। তবে সবার স্বাদ এক রকম হয়না। আমরা খাবার পরিষ্কার পরিচ্ছন্নভাবে তৈরি এবং পরিবেশন করি। তাই আমাদের ক্রেতার সংখ্যাও বেশি। আমাদের বিক্রি নিয়ে আমরা বেশ সন্তুষ্ট। বিকেল থেকে রাত অব্দি টানা বিক্রি হয়।’

এখানে যেসব খাবার রয়েছে-

চিতই পিঠা
গ্রামবাংলার বেশ পরিচিত এই পিঠাটির আবেদন যেন ফুরাবার নয়। শীত শীত আমেজে মাটির পাতিলে চালের গুঁড়োর মিশ্রণকে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে চুলোর আঁচে বানানো হয় এই পিঠাটি। রন্ধন কৌশল সহজ হওয়ায় পিঠাটি গরম গরম বানিয়ে দ্রুত পরিবেশন করা যায়। সেই সঙ্গে শীতের টাটকা ধনে পাতার সুঘ্রাণ মিশ্রিত ভর্তা , ঝাঁঝালো সরিষা বাটা মাখিয়ে খেতে বেশ লাগে। অতি পরিচিত এই পিঠাটি বিক্রি হচ্ছে বিপ্লব উদ্যানের সামনে। দুইটি ভর্তাসহ প্রতি পিস পিঠার দাম ১০ টাকা মাত্র।

ভাঁপা পিঠা
শরতের রেশ কাটতে না কাটতেই শীতের আগমনের র্বাতা যেন উদ্যানের পাশের ভ্রাম্যমাণ ভাঁপা পিঠার দোকানগুলো থেকেই বিশেষভাবে মিলছে। চালের গুঁড়া, নারকেল কুচো আর গুড়সহ ভাঁপে রাখা এই পিঠা খেতে ইতোমধ্যে ভিড় করছেন ক্রেতারা। প্রতি পিস ভাঁপা পিঠার দাম ১০টাকা।

ফল মাখা
ফল বরাবরই স্বাস্থ্যকর খাবার। কিন্তু বাঙালির কি শুধু ফলে মন ভরে? তাই স্বাদে বৈচিত্র্য আনতে ছোট ছোট টুকরো করা ফলের সঙ্গে মেশানো হচ্ছে ধনে পাতা, শুকনো মরিচ গুঁড়া, কাসুন্দি, তেঁতুল আঁচার ও বিট লবণের মতো উপাদান। এসব উপাদানকে মাখিয়ে পরিবেশন করা হয় বলে খাবারটির নাম রাখা হয়েছে ‘মাখা’। এই মাখা তৈরি করতে ফল হিসেবে ক্রেতারা বেছে নিতে পারেন পেয়ারা,আমড়া কিংবা আনারসের যেকোনটি। প্রতি প্লেট মাখার দাম রাখা হচ্ছে ১০ থেকে ২০টাকা।

ফুচকা, ভেলপুরি ও পানিপুরি
ফুচকা উপমহাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্ট্রিটফুড। তাই এটি যেকোনো মোড়েই সহজলভ্য। তবে এর স্বাদ রক্ষা করাই যেন বড় চ্যালেঞ্জ। আলু ,সরিষার তেল, শুকনো মরিচ ও লবণের পুরকে ফুচকার মচমচে পুরি ফাটিয়ে পুরে দেওয়া হয় প্রয়োজন অনুযায়ী সুগন্ধি লেবু আর তেঁতুলের টকসহ খাওয়া হয় মুখরোচক এই খাবারটি। প্রতি প্লেট ফুচকাতে থাকে ৬ থেকে ১০ টি ফুচকা। দাম রাখা হয় ৩০ থেকে ৪০টাকা।

ফুচকা গোত্রের আরেকটি জনপ্রিয় খাবার পানিপুরি। এটিতে পুর হিসেবে তরলের আধিক্য বেশি থাকে। মূলত ভোজনরসিকদের চাহিদার তারতম্যের কারণে ফুচকার মধ্যে বিভিন্ন প্রকরণের উদ্ভব। পানিপুরির তরল পুর হিসেবে ব্যবহার করা হয় দই টক, বোম্বাই মরিচের টক, তেঁতুল মিষ্টি টক, পুদিনার টক ইত্যাদি। প্রতি প্লেট পানিপুরির মূল্য ৩০-৪০ টাকা।

ভেলপুরিতে পুরি থাকে তুলনামূলক কঠিন। সেখানে তরল টক এবং পুর থাকে প্রায় একই মাত্রায়। উপরে কুচি করে দেওয়া হয় শসা, ধনে পাতা , বিট লবণ এবং শুকনো মরিচের গুঁড়া। প্রতি প্লেট ভেলপুরির মূল্য ১০ থেকে ২০ টাকা।

ফলের শরবত
নগরবাসীর প্রিয় লেবুর শরবত ছাড়াও এখানে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন দেশি বিদেশি ফলের জুস বা শরবত। যেখানে আরো আছে মাল্টা, ড্রাগন ফল, পুদিনা ,লেবু ,পেঁপে, কমলা ,বেল ও কলার শরবত। লেবুর শরবত ছাড়া এই সব ফলের শরবতের দাম রাখা হচ্ছে ৪০ থেকে ১শ’ টাকা। প্রতি গ্লাস লেবুর শরবতের দাম ১০ টাকা।

কাবাব
ইতোমধ্যে ২ নম্বর গেইটের বিপ্লব উদ্যান এলাকা এই কাবাবের জন্য জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ৮ থেকে ১২ রকমের মুখরোচক কাবার উদরের সাথে সাথে মন ভরিয়ে দিচ্ছে নগরবাসীর। যার মধ্যে রয়েছে চিকেন বটি কাবাব, চিকেন থাই কাবাব, চিকেন লেগ কাবাব, চিকেন তান্দুরি কাবাব, চিকেন রেশমি কাবাব, বিফ কাবাব ও চিকেন বারবি কিউ উইংস। এরমধ্যে নরম তুলতুলে রেশমি কাবারের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। তার পরে মন ভোলাচ্ছে চিকেন বারবি কিউ উইংস। ঝাল স্বাদের সস সহকারে পরিবেশ করা এসব বাহারি কাবাবের দাম রাখা হচ্ছে ৩০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। এই কাবাবগুলো চাইলে খাওয়া যাবে পরোটাসহ। তবে এর জন্য লাগবে বাড়তি টাকা। প্রতিটি পরোটার দাম থাকছে ১০টাকা। বিকেলে কয়েক প্রকারের খাবার থাকলেও সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৮টার মধ্যে বেশিরভাগ কাবাব পাওয়া যায়।

ইন্ডিয়ান ফুড
ভ্রাম্যমাণ একাধিক ফুড কার্টের দোকান রয়েছে ‘ ইন্ডিয়ান ফুড’ নামে। এই কার্টগুলোতে ভারতীয় রন্ধন কৌশল অনুসরণ করে নানা মশলার মিশ্রণে ঘন ঝোলসহ বিভিন্ন পদের খাবার বিক্রি হচ্ছে। যার মধ্যে ছোলা মাসালা, চিকেন মাসালা, চিকেন লিভার মাসালা ও আলুর দম ইত্যাদি বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে ছোলা মাসালা ক্রেতাদের সবচেয়ে প্রিয়। এই খাবারগুলোর দাম রাখা হচ্ছে প্রতি প্লেট ৪০ থেকে ১০০ টাকা। সঙ্গে থাকছে ৫ থেকে ৭ টাকা দামের তেলে ভাজা লুচি।