করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় সরকার বিধিনিষেধের মেয়াদ আরও ১ মাস বাড়ালো। ১৬ জুন মধ্যরাত থেকে ১৫ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত বিধিনিষেধ বলবৎ থাকবে। মন্ত্রিপরিষদ থেকে গত বুধবার জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্থাস্থ্যবিধি মেনে খোলা থাকবে। ব্যাংকের লেনদেন সাড়ে ৩টা পর্যন্ত চলবে। আগের মতোই বিনোদন কেন্দ্র, পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার বন্ধ থাকবে। জন সমাগম ঘটে এমন সব রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে, হোটেল রেস্তোরাঁ সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে তবে অর্ধেক আসন সংখ্যায় ভোক্তাদের খাবার পরিবেশন করতে হবে। গণপরিবহন স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগের মতো অর্ধেক আসনে যাত্রী নিয়ে চলাচল করবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখন আর খুলছে না।
করোনা পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে, বিশেষজ্ঞদের এমনই অভিমত। গত বুধবার মৃত্যু ৬০ জনের, শনাক্ত প্রায় ৪ হাজার। চট্টগ্রামে মৃত্যু ৩ জনের, শনাক্ত ১০৭। দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে বিধিনিষেধ থাকলেও পরিস্থিতির তেমন উন্নতি নেই, ভারতীয় ধরণ ‘ডেল্টার’ সামাজিক সংক্রমণের আশংকা করছেন স্ব্স্থ্যাবিদগণ। সীমান্তবর্তী জেলা, উপজেলা হাসপাতালগুলি সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে। চট্টগ্রামের উত্তরের কয়েকটি উপজেলায় সংক্রমণ বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা প্রয়োজন হলে বাড়ির বাইরে বা এলাকার বাইরে অথবা জেলার বাইরে চলাচলের ক্ষেত্রেও কঠোর বিধি নিষেধের কথা বলেছেন।
সরকার বিধিনিষেধের মেয়াদ বাড়িয়েছে তবে এটা প্রতিপালনে প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে। মাঠ পর্যায়ে আইনশৃংখলা রক্ষাবাহিনী, জনপ্রতিনিধি, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো এ ব্যাপারে যথোচিত ভূমিকা পালন করুক- এটি জনগণ দেখতে চায়।
টিকা নিয়ে উদ্বেগে আছে মানুষ। চীনের উপহার হিসেবে পাওয়া ১১ লাখ টিকা প্রদান শুরু হবে ১৯ জুন থেকে। যারা অক্সফোর্ড- অ্যাস্ট্রোজেনেকার ডোজ নিয়ে দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায়, তারা বিপাকে পড়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া অ্যাস্ট্রোজেনেকার ১০ লাখ টিকা কোভ্যাক্সের মাধ্যমে আগস্ট মাসে আসবে বলে জানা গেছে। চীন ও রাশিয়ার টিকা কবে পাওয়া যাবে তা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে চুক্তি করা টিকা পাওয়ার ব্যাপারে পুনরায় চেষ্টা চালানো প্রয়োজন।
দেশে যে সকল কোম্পানির টিকা উৎপাদন সক্ষমতা আছে তাদের উৎপাদনে যেতে ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের অনুমতি ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের ব্যাপারে প্রচেষ্টা চালাতে হবে। কেননা দেশের ৭০-৮০ ভাগ লোককে টিকার আওতায় আনা ছাড়া করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।
জেলা-উপজেলায় স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ অব্যাহত রাখতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। স্বাস্থ্য প্রশাসনকে করোনার উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে ঢিলেমি, দুর্নীতি, অদক্ষতা-অব্যবস্থাপনা পরিহার করে কর্তব্যনিষ্ঠার পরিচয় দিতে হবে। সংসদে এবং সংসদের বাইরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজকর্মের কঠোর সমালোচনা হচ্ছে, সরকার সামগ্রিকভাবে এর দায় এড়াতে পারে না।
মতামত সম্পাদকীয়