সুপ্রভাত ডেস্ক »
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ সবাইকে পরিশোধ করতে হবে। যে যতটুকু খরচ করবে ততটুকু বিল দিতে হবে। আর বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে।’
শনিবার (২৫ মে) সকালে বঙ্গবাজারে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন। এর আগে তিনি বঙ্গবাজার পাইকারি নগর বিপণিবিতানসহ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) চারটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।
এই চার প্রকল্প হল– বঙ্গবাজার নগর পাইকারি বিপণী বিতান, পোস্তগোলা ব্রিজ থেকে রায়েরবাজার স্লুইসগেট গেট পর্যন্ত আট লেনের ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক মণি সরণি‘ (ইনার সার্কুলার রিং রোড)’, ধানমন্ডিতে নজরুল সরোবর এবং শাহবাগে ‘হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শিশু উদ্যান‘ আধুনিকীকরণ প্রকল্প।
বিদ্যুৎ–পানি ব্যবহারে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাই সাশ্রয়ী হবেন। পানির কল ছেড়ে, শেভিং কিংবা কাপড় কাচা বা দাঁত মাজবেন না। পানি অপচয় করবেন না। যাতে অপচয় না হয়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘পুকুর দেখলেই দালানকোঠা তোলার প্রবণতা থেকে বের হতে হবে। আর প্রকল্পে জলাধার রাখার পরিকল্পনা রাখতে হবে। যেখানে–সেখানে অবকাঠামো তৈরি করা যাবে না। কেননা পরিকল্পিত নির্মাণ কাজ করতে হবে।’
ডেঙ্গু প্রতিরোধের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মশার প্রজনন ক্ষেত্র যেন তৈরি না হয় সেজন্য জমা পানি নিয়মিত ফেলতে হবে। আর স্বাস্থ্যকর পানি পেতে ছয় মাস পরপর পানির ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেখানে–সেখানে পশু কোরবানি দেয়া যাবে না। পশুর বর্জ্য রিসাইকেল করা যায়। আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন জবাইখানাও করতে হবে।’
আসন্ন ঈদুল আজহায় যেখানে সেখানে পশু কোরবানি না করার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামীতে পশু কোরবানির জন্য আরও আধুনিক ব্যবস্থা রাখতে বলা হয়েছে সিটি করপোরেশনগুলোতে। শুধু সিটি করপোরেশন নয়, দেশব্যাপী আধুনিক ব্যবস্থা রাখতে হবে সেই নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। যেন শহর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে।
পার্কে যেন মাদকসেবনের জায়গা না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, ‘নগরীর সৌন্দর্যবর্ধনের দায়িত্ব স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের। আর খালি জায়গা থাকলে সবাইকে গাছ লাগাতে হবে।’
ঢাকার যানজট নিরসনে আরও কয়েকটি মেট্রোরেলপথ তৈরির কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ যত উন্নত হচ্ছে মানুষের কাজকর্ম ততো বাড়ছে। আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হয়। এরইমধ্যে রাজধানীবাসীর যাতায়াতের জন্য ঢাকাতে একটি মেট্রোরেলপথ তৈরি করা হয়েছে। আরও কয়েকটি মেট্রোরেলপথ নির্মাণ করা হবে। কিছু উপর দিয়ে যাবে, আবার কিছু পাতাল দিয়ে যাবে। সেভাবেই পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
মানুষের কল্যাণে কাজ করাই সরকারের লক্ষ্য জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে উন্নতির সাথে সাথে মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন হয়েছে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কেউ বাস করবে না। রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে দিনমজুর সবাইকে উন্নত ফ্লাটে আবাসনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।’
অনুষ্ঠানে ডিএসসিসির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘আগামী ৩ বছরের মধ্যে বঙ্গবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের কাছে দোকান হস্তান্তর করা হবে।’
২০২৩ সালের ৪ এপ্রিল রাজধানীর বঙ্গবাজার শপিং কমপ্লেক্সে ঈদের কয়েক সপ্তাহ আগে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ২ হাজার ৯৩১টি দোকান পুড়ে যায়। এর এক বছর পর নতুন মার্কেট নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হলো।
১০তলা বিশিষ্ট বিপণিবিতানে ১০৬ দশমিক ২৮ কাঠা জমির ওপর ৪টি ব্লক, ৫টি সাধারণ সিঁড়ি, ৬টি জরুরি সিঁড়ি এবং ৮০–১১০ বর্গফুটের ৩ হাজার ২১৩টি দোকান থাকবে।
ভবনে ৮টি লিফট থাকবে, যার ৪টি যাত্রীদের ও পণ্যের জন্য ৪টি ব্যবহার করা হবে। সহজে যাতায়াতের জন্য বাজারের চারপাশে ৭–১০ ফুট চওড়া রাস্তা থাকবে।
এছাড়া ভবনটিতে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা এবং ১৬৯টি গাড়ি ও ১০৯টি মোটরসাইকেলের জন্য পর্যাপ্ত পার্কিংয়ের জায়গা থাকবে।
বঙ্গবাজার, গুলিস্তান, মহানগর ও আদর্শ হকার্স মার্কেট থেকে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিকদের জন্য ২ হাজার ৯৬১টি দোকান বরাদ্দ দেওয়া হবে। নিয়ম অনুযায়ী আবেদনের ভিত্তিতে অতিরিক্ত ২৪৪টি দোকান বরাদ্দ দেওয়া হবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বিপণিবিতানের নির্মাণের কাজ শেষ হবে।