আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদেশে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে জড়িত সকলকে দায়িত্বশীলতার মাধ্যমে কর্তব্য পালনের আহ্বান জানিয়েছেন। বুধবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অংশ নিয়ে শেখ হাসিনা সোনার হরিণ ধরতে অন্ধের মতো না ছোটার জন্য বিদেশে চাকরি প্রত্যাশীদের প্রতিও তিনি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশে কর্মসংস্থান, নিরাপত্তা, বেতন এসব ব্যাপারে সঠিকভাবে খোঁজখবর নিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, রিক্রুটিং এজেন্ট, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাসহ সকলের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা উচিত। তিনি এ প্রসঙ্গে নারী কর্মীদের নিরাপত্তার দিকটি সকলকেই লক্ষ্য রাখতে হবে মর্মে উল্লেখ করেন। তিনি দালালদের খপ্পরে পড়ে অন্ধকার পথে পা না বাড়াতেও সতর্ক করে দেন। এ প্রসঙ্গে তিনি সরকারি নিবন্ধনের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন।
আমাদের দেশের ১ কোটিরও বেশি লোক বিশ্বের নানা প্রান্তে কাজ করেন। এদের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে অধিকাংশ লোক কাজ করেন। সাম্প্রতিককালে করোনাসহ বিভিন্ন কারণে মধ্যপ্রাচ্যের চাকরির বাজার সংকুচিত হয়েছে। তবে যারা বিদেশে যাচ্ছেন তাদের অনেকেই অসাধু রিক্রুটিং এজেন্সির কারণে বিদেশে গিয়ে নানা সমস্যায় পড়েন। চাকরির নিরাপত্তা, বেতন, কাজের ধরণ, পরিবেশ এসব নিয়ে প্রবাসীদের নানা ভোগান্তি ও দুর্দশায় পড়তে হয়। এ জন্যে আগে থেকেই চাকরির শর্তাবলী ও সুযোগ-সুবিধার ব্যাপারে পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন। তদুপরি সরকারি পর্যায়ে নিবন্ধনের সুযোগ না নিয়ে অনেকে দালালদের খপ্পরে পড়ে অবৈধ পথে বিদেশে পাড়ি দেন বিপদের কথা না ভেবেই। ভূ-মধ্যসাগরে কিংবা মরুভূমিতে অথবা বঙ্গোপসাগরে এ ধরণের ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রায় অনেকের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটেছে। কয়েকবছর আগে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ার দুর্গম এলাকায় দাস শিবিরের সন্ধানও পাওয়া গেছে, গণকবরের অস্তিত্ব মিলেছে। এসব অসহায় বাংলাদেশীদের নিষ্করুণ অন্তিম যাত্রা। পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি হয়েছে, কিন্তু এসেবর গডফাদার যারা তাদের বিচার হয়নি। অবৈধ পথে বিদেশ যাওয়া এখনো বন্ধ হয়নি।
দেশে এখন কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে, যে টাকা খরচ করে বিদেশে যাওয়া হয় সে টাকা দিয়ে দেশেই স্ব-কর্মসংস্থান সম্ভব। অনেকে আবার ভুয়া সনদ নিয়ে, কোনরূপ কাজের অভিজ্ঞতা, প্রশিক্ষণ ছাড়াই বিদেশে যাচ্ছে এবং সেখানে গিয়ে নানা সংকট, বিপদে পড়ছে। দেশে এখন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে, কারিগরি ও প্রযুক্তির প্রশিক্ষণের অনেক কেন্দ্র সরকারি- বেসরকারি পর্যায়ে কাজ করছে। দক্ষ কর্মী ছাড়া বিদেশে কাজ পাওয়া মুশকিল। অনেক দেশেই দক্ষ কর্মীর অভাবে আমাদের শ্রমবাজার সংকুচিত হয়েছে। প্রবাসীদের কল্যাণে সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। তাদের জন্য ব্যাংক হয়েছে দেশে বিনিয়োগের জন্য সাহায্য-সহযোগিতাও দেয়া হচ্ছে। বিদেশ থেকে টাকা পাঠাতে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে।
অভিবাসীরা আমাদের রেমিটেন্স এর বড় শক্তি, জাতীয় অর্থনীতিতে তারা অবদান রাখছেন। তাদের হয়রানি ও দুর্ভোগ মুক্ত প্রবাস জীবন নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। যে দেশে তারা অভিবাসী হয়েছেন, সে দেশের সরকারেরও উচিত এতদসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক বিধিবিধান অনুসরণ করা।
মতামত সম্পাদকীয়