সুপ্রভাত ডেস্ক »
বিদেশি ঋণ না নিয়ে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঘাটতি পূরণ করে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ১১ লাখ ৯৫ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। রাজস্ব আদায়ে প্রস্তাব এসেছে বিভিন্ন খাতে করারোপের।
বিশেষ করে কালো টাকা সাদা করা, পাচার করা অর্থ প্রত্যাবাসন, ব্যবসায় অতিরিক্ত মুনাফা ও বিদেশিদের কাছ থেকে করারোপ, শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুবিধা উঠিয়ে নেয়াসহ ২৭ টি প্রস্তাব করেছে সংগঠনটি। তবে এর সুফল পেতে আর্থিক খাত ও আয়-ব্যয় ব্যবস্থাপনায় সুশাসন নিশ্চিতের ওপর জোর দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।
সম্ভাব্য বাজেটে কৃচ্ছতা সাধনে এরইমধ্যে সরকার তুলনামুলক ছোট করেছে বাজেটের আকার। সীমিত করা হয়েছে এডিপিসহ বিভিন্ন খাত। একই ভাবে শিক্ষা, গবেষণা, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা, কল্যাণ খাত, জ্বালানি, পরিবহন ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্ব দিয়ে বিকল্প বাজেট প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি।
মোটাদাগে উন্নয়ন খাতে বাজেটের ৬৬ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করে এসব খাতে ৩৫.২% বরাদ্দ, কৃষি ও শিল্প বিকাশে ১০.২ % বাজেট রাখা প্রয়োজন বলে মনে করে সংস্থাটি। যার অন্যতম উদ্দেশ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও চলমান পরিস্থিতির স্থিতিশীলতা।
সব মিলে চলমান সরকারি বাজেটের থেকে ১.৫৭ গুণ বেশি রেখে বিকল্প বাজেট ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। রাজস্ব প্রাপ্তি ১০ লাখ ২৪ হাজার ১১২ কোটি টাকা আর ঘাটতি দেখানো হয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা। তবে রাখা হয়নি কোন বিদেশি ঋণ।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো.আইনুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের প্রস্তাবে ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক ঋণ নিটের কোনো ভূমিকা থাকবে না।’
অর্থনীতি সমিতির মতে, ২৭ টি খাত থেকে রাজস্ব আয় ছাড়াও নতুন করে অর্থপাচার ও কালো টাকার ১ শতাংশেরও কম উদ্ধার ও বিলাসী পণ্যে শুল্ক, সম্পদ কর, অতিরিক্ত মুনাফাসহ মোট ৫ টি খাত থেকে ৬ লাখ ৫২ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আয় সম্ভব বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। এছাড়াও শুল্কমুক্ত গাড়ির কর আরোপ, বিদেশিদের ওপর কর আরোপ হলে বাজেটে রাজস্বের অংশীদারিত্ব ১৮-১৯ শতাংশ বাড়ানো সম্ভব।
অর্থনীতিবিদ আবুল বারাকাত বলেন, লক্ষ লক্ষ কোটি কালো টাকার মধ্যে ১০ হাজার কোটি টাকা সাদা করা, পাচার হওয়া কয়েক লক্ষ কোটি টাকার মধ্যে মাত্র পাঁচ হাজার কোটি টাকা ফেরত আনা ও বিলাসি পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের কথা বলেছি।
তবে রাজস্ব সম্পদ ব্যবহারে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন উল্লেখ করে অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ড. কাজী খলিকুজ্জামান বলেন, ব্যাংকিং খাত ও ডলারের বাজারের দুষ্টু চক্রকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে স্থিতিশীলতার স্বার্থে।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি’র সভাপতি ড. কাজী খলিকুজ্জামান আহমদ বলেন, দুষ্টুচক্রের সদস্যরা ব্যক্তি হতে পারে, গোষ্ঠী হতে পারে। ব্যাংকিংয়ে যারা ঋণ দেন, ঋণ নেন তাদের মধ্যেও এরা আছে। এছাড়াও কোনো কোনো ব্যক্তি অনেক শক্তিশালী হয়ে গেছেন। এদেরকে দমন করতে হবে। আমরা যে বাজেটের কথা বলছি, যে লক্ষ্যের কথা বলছি সেটা কিন্তু রাষ্ট্রেরও লক্ষ্য।
প্রস্তাবনায় বানিজ্য উন্নয়নে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে অর্থনীতি কুটনীতি বিভাগ ও গবেষণা উদ্ভাবন বিচ্ছুরণ ও উন্নয়ন নামে ভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব করা হয়।