বিচার করতে হবে, নইলে মানুষের নিরাপত্তা দেওয়া যাবে না: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার গণভবনে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানান এবং আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। ছবি: পিআইডি

সুপ্রভাত ডেস্ক »

‘মানুষ মেরে লাশ ঝুলিয়ে রাখার মতো বর্বরতা, জানোয়ারের মতো ব্যবহার’ এগুলো কেউ করতে পারে কিনা সেই প্রশ্ন জাতির কাছে রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, একজন মুসলমান আরেকজন মুসলমানের লাশ ঝুলিয়ে রাখবে পা বেঁধে! যারা এসবের সঙ্গে জড়িত অবশ্যই তাদের বিচার হবে। তাদের বিচার করতে হবে। না হলে মানুষের নিরাপত্তা দেওয়া যাবে না।

রবিবার (২৮ জুলাই) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় সম্প্রতি নিহত ৩৪ জনের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

নিহতদের পরিবারের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি তো বুঝি আপনাদের বেদনা। প্রতিনিয়ত বাপ-মা-ভাই-বোনদের হারানোর ব্যথা নিয়ে আমাদের চলতে হয়। এমনকি লাশটাও দেখতে পারিনি, কাফন-দাফনটাও করতে পারিনি। দেশেও ফিরতে পারিনি। ছয় বছর দেশে ফিরতে দেয়নি আমাকে। যখন দেশে এসেছি, সারা দেশ ঘুরেছি। এই দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছি। সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছিলাম। কিন্তু বারবার এই ধরনের ঘটনা ঘটাবে, এই সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটাবে—এটা তো কাম্য না।

মানুষ কী দোষ করলো যে এভাবে খুন করতে হবে– সেই প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, মানুষ খুন করে সরকার পতন— এটা কবে হয়, কখন হয়? সাধারণ মানুষ কী দোষ করেছে? আমি আসলে আপনাদের কী বলে সান্ত্বনা দেবো? শুধু এটুকু বলবো যে আমি আপনাদের মতোই একজন। বাবা-মা হারানো এতিম। কাজেই আপনাদের কষ্ট আমি বুঝি। আমি আছি আপনাদের জন্য, আপনাদের পাশে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমার চেষ্টা থাকবে যারা এই খুনের সঙ্গে জড়িত, খুঁজে খুঁজে বের করে তারা অবশ্যই যেন শাস্তি পায়—সেটাই আমার প্রচেষ্টা থাকবে, আমি সেটাই করবো। আপনাদেরও সাহায্য চাই। কারণ, এভাবে বারবার বাংলাদেশটাকে নিয়ে খেলা আর হতে দেওয়া যায় না। কাজেই আমি আপনাদেরই সাহায্য চাই।

তিনি বলেন, এটুকু মনে রাখবেন, আপনারা আপনজন হারানোর একটা শোক সইতে পারেন না। আর আমি কী শোক সয়ে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছি। কেন? এই দেশের মানুষের জন্য। কিন্তু আজ এইভাবে বাধা দেওয়া, যা কিছু করি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দেওয়া— এটা তো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সাধারণ মানুষই তো সুবিধা পেতো। মেট্রোরেলে কারা চড়ে, এক্সপ্রেসওয়েতে কারা চলে…? মানুষের কাজ করাটাই আমার কাজ।

নিহতদের স্বজনদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, আপনাদের কাছে শুধু এইটুকু বলবো, আপনারা সবুর করেন। আর আল্লাহকে ডাকেন যেন এই সমস্ত খুনি-জালেমের হাত থেকে আমাদের দেশটা রেহাই পায়। আমি আপনাদের সঙ্গে আছি, পাশে আছি। আমারও আপনাদের চোখের পানি দেখতে হচ্ছে। এটিই সবচেয়ে কষ্টের। স্বজন হারানোর ব্যথা ভোলার না, সেটা আমি জানি। তবু আল্লাহ আপনাদের সবুর দিন, সেটা আমি চাই।