নিজস্ব প্রতিবেদক »
নগরের খাতুনগঞ্জে পিকআপ চালকের ছুরিকাঘাতে আহত শ্রমিক মাসুদ মাঝি (৪৫) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। এ ঘটনার জেরে আবারও কাজ বন্ধ রেখে দিনভর বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। তবে সহকর্মী খুনের প্রতিবাদে দিনভর বিক্ষোভের পর সন্ধ্যা থেকে আবার কাজে ফিরেছেন খাতুনগঞ্জের শ্রমিকরা।
শ্রমিকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে চমেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নূর উল্লাহ আশেক জানান, বুধবার ভোরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের আইসিইউতে মো. মাসুদ নামে এক শ্রমিক মারা যান। সোমবার মাসুদকে চমেক হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়।
এদিকে সকালে শ্রমিকের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে উত্তাল হয়ে পড়ে দেশের সবচেয়ে বড় ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ। বন্ধ হয়ে যায় আড়ত থেকে পণ্য ওঠানো-নামানোর কাজ। সড়কে ঠেলাগাড়ি উল্টে রেখে বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকরা। এ সময় তারা দাবি তুলেন হত্যাকা-ে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার। অন্যথায় বিক্ষোভ চালিয়ে যাবেন তারা। তাদের দাবিতে একমত পোষণ করেছেন ব্যবসায়ীরাও।
বৃহত্তর খাতুনগঞ্জ লোডিং-আনলোডিং শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. ইব্রাহীম জানান, ‘বাদ মাগরিব নিহত মাসুদের জানাজার পর শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েছেন। তবে আবারও প্রতিবাদ সমাবেশ করব আমরা।’
এ পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ী ও শ্রমিক লীগের নেতারা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন এবং দোষীদের গ্রেফতারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের কাজে ফিরতে রাজি করান। বৈঠকে হত্যাকারীকে ধরতে বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে আসামি গ্রেফতার করা না গেলে বিক্ষোভ থেকে পুনরায় আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।
অন্যদিকে হামলার ঘটনায় পিকআপ চালক মোহাম্মদ রাসেল ও আরো ৫-৭ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে কোতোয়ালী থানায় মামলা দায়ের করেছেন নিহত শ্রমিক মাসুদের ছেলে মোহাম্মদ বাবুল।
জানা যায়, সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে খাতুনগঞ্জের চাঁনমিয়া লেইনের কাছে পিকআপ ভ্যানের এক চালকের সঙ্গে শ্রমিক মাসুদের তর্ক-বিতর্ক হয়। একপর্যায়ে ওই চালক মাসুদকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যান। মাসুদকে আহতাবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে ওইদিন সন্ধ্যায় ঠেলাগড়ি দিয়ে চাঁনমিয়া লেইনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা।
এ বিষয়ে জাতীয় শ্রমিক লীগ সমন্বয় পরিষদের সদস্যসচিব আবুল হোসেন আবু বলেন, খাতুনগঞ্জে ছুরিকাঘাতে এক শ্রমিক আহতের ঘটনাটি অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। এ ঘটনায় দায়ীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানান তিনি।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহেদুল কবির বলেন, শ্রমিককে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় এখনও কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। তবে জড়িতদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
প্রসঙ্গত, দুইশ বছরের বেশি পুরোনো খাতুনগঞ্জে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি করা ভোগ্যপণ্যের প্রায় ৪০ শতাংশ খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে বেচাকেনা হয়।
ভোজ্যতেল, চিনি, গম, ডাল, মসলা ও কাঁচাপণ্য থেকে শুরু করে রাসায়নিক, ঢেউটিন, রঙসহ নানা ধরনের পণ্য বেচাকেনা হয় খাতুনগঞ্জে। আমদানি করা চালও বিক্রি হয় এ বাজারে। এখানকার প্রায় দেড় হাজার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এসব পণ্য সারা দেশে যায়। এসব পণ্য ওঠা-নামানোর কাজে প্রতিদিন কয়েক হাজার শ্রমিক নিয়োজিত থাকেন।