চবি সংবাদদাতা »
ছাত্রীকে যৌন হয়রানির প্রতিবাদে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) চলছে আন্দোলন। ঘটনার ৪ দিন চলে গেলেও অপরাধীরা গ্রেফতার না হওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। অপরাধীদের গ্রেফতারের দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার ৩য় দিনের মতো আন্দোলন করেছে শিক্ষার্থীরা।
সকালে রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ শুরু করে। তারা বিভাগ থেকে সরাসরি মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে জমায়েত হন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের সাধারণ শিক্ষার্থীরা এবং কয়েকজন শিক্ষকও তাদের সাথে এসে যোগ দেন। শতশত শিক্ষার্থী এ সময় স্লোগানের মাধ্যমে ছাত্রী হেনস্তাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানান।
এ সময় সেখানে ‘ভিসি যেখানে নারী, সেখানে অনিরাপদ কেন আমি’, ‘নিরাপত্তা সম্মান নিশ্চিত করি, মেয়েদের হেনস্তা বন্ধ করি’, ‘সুবোধ তুই পালিয়ে যা, তোর ভাগ্যে নিরাপত্তা নেই’, ‘যখন অনিয়ম দুর্নীতি আইন হয়ে যায়, সেই মুহূর্তে প্রতিবাদ করা দায়িত্ব বনে যায়’, এসব লিখা সমন্বিত পোস্টার শিক্ষার্থীদের হাতে দেখা যায়।
উল্লেখ্য, ২০ জুলাই রাতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন ছাত্রীরা। সেখান থেকে প্রশাসনের উদ্দেশে চার দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হচ্ছে—
১) বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। হল থেকে বের হওয়া বা প্রবেশ এবং মেডিক্যালে যাওয়ার সময়সীমা তুলে দিতে হবে।
২) যৌন নিপীড়ন সেল ভেঙ্গে নতুন কার্যকরী যৌন নিপীড়ন সেল গঠন করা। সেলে বিচার কার্যকর করার জন্য সর্বোচ্চ সময়সীমা বাঁধা থাকবে ১ মাস এবং সেটা না হলে সেল স্বয়ং শাস্তির বিধান গঠনতন্ত্রে থাকবে।
৩) ৪ কার্যদিবসের মধ্যে যৌন নিপীড়ন সেলে চলমান সকল অভিযোগের দৃষ্টান্তমূলক বিচার করতে হবে।
৪) ৪ কার্যদিবসের মধ্যে বিচার না হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল বডি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করবেন।
সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষার্থীরা বক্তব্য রাখেন। তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যার্থ হয়েছেন। হলের পাশেই আজকে ছাত্রীরা নিরাপদ না। বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকবার হেনস্তা থেকে শুরু করে ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনা পর্যন্ত ঘটছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসন এখন পর্যন্ত কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রশাসন নিজেদের ব্যর্থতা ডাকতে উল্টো ছাত্রীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দিয়েছেন। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, এই প্রশাসন কার টাকায় চলে? আমার আপনার মতো শিক্ষার্থীদের টাকায়। তাহলে কেন তারা আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে না? তারা যদি ব্যর্থ হয় তাহলে তাদের দায়িত্ব হস্তান্তর করে দেওয়া উচিত।
তারা বলেন, রোবাবার হলের পাশে নিপীড়নের যে ঘটনা ঘটেছে তা ন্যাক্কারজনক। শিগগির এ ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করতে হবে। আমরা আগে দেখেছি রাজনৈতিক আশ্রয়ে অনেক অপরাধী ছাড় পেয়ে যায়। এইবার ভুলেও যেন তার পুনরাবৃত্তি না হয়। তাহলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই বিশ্ববিদ্যালয় অচল করে দিবে। আমরা আগে নিরাপত্তা চাই, তারপর পড়াশোনা।
উল্লেখ্য, ১৭ জুলাই রাতে বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকায় এক ছাত্রীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠে অজ্ঞাত ৫ তরুণের বিরুদ্ধে। ৪ দিন পার হলেও এখনো কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এদিকে বৃহস্পতিবার বিকেলে কয়েকজন অপরাধীকে চিহ্নিত করা গেছে বলে জানিয়েছেন চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার। তিনি বলেন, কয়েকজনকে চিহ্নিত করা গেছে। আগামী রোববার আমরা বিস্তারিত জানাবো। তদন্ত কমিটি সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে সকল অপরাধীকে ধরার জন্য। অপরাধী যতোই শক্তিশালী হোক না কেন কোন ছাড় দেওয়া হবে না। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য আরো বলেন, আমরা ১০টার আগে মেয়েদের হলে প্রবেশ করতে লিখিত কোন প্রজ্ঞাপন এখনো দেইনি। প্রভোস্ট কমিটির মিটিংয়ে এটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কোনো নির্দেশনা, সিদ্ধান্ত কিংবা বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার আগেই আন্দোলন করছে আমাদের মেয়েরা। আমরাতো তাদের অভিভাবক, তাই মেনে নিয়েছি ওদের সবকিছু।