স্পট: পোর্ট কানেকটিং রোডের নয়াবাজার মোড়
প্রত্যেক মোড়ে টাইগারপাসের আদলে চ্যানেলাইজেশন নির্মাণ করতে হয়- প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া
ট্রাফিক সিস্টেম নির্মাণের জন্য সিটি কর্পোরেশনকে চিঠি লেখা হয়েছে ডিসি ট্রাফিক (পশ্চিম)
সড়ক সম্প্রসারণের সময় মোড়ের ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট নকশা করা হয়নি চসিক
ভূঁইয়া নজরুল »
সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক রহিম শেখ। ২০ বছরের বেশি সময় ধরে ড্রাইভিং করছেন। কিন্তু পোর্ট কানেকটিং রোডের নয়াবাজার মোড় অতিক্রমের সময় শঙ্কায় থাকেন। কেন এই শঙ্কা? তার উত্তর, রাস্তার এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত বিশাল চওড়া। কখন কোন দিক থেকে গাড়ি বা পথচারী চলে আসে তা নিয়েই ভয়।
এই ভয় শুধু রহিম শেখের নয়, স্টিয়ারিং হাতে থাকা সব গাড়ির চালকদের মধ্যেও একই শঙ্কা কাজ করছে। যেকোনো সময় এই স্পটে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কাভার্ডভ্যান চালক মোশতাক আহমেদ বলেন, কাভার্ডভ্যান চালানোর সময় সতর্ক থাকতে হয় কোনোদিক দিয়ে সিএনজিসহ বিভিন্ন ছোটো গাড়ি চলে আসে কিনা। এতো বড় মোড়ে গাড়ি চলাচলের জন্য গোল চত্বর করে দেয়া যেতো।
গত দুই দিন পোর্ট কানেকটিং রোডের নয়াবাজার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নয়াবাজার মোড়ের পানির কল প্রান্ত থেকে হালিশহর চুনা ফ্যাক্টরির প্রান্তে যেতে পথচারীদের যে কি বিড়ম্বনা। রাস্তা পার হবার সময় খুব ভয়ে ভয়ে পার হচ্ছে পথচারীরা। হালিশহর সবুজবাগের বাসিন্দা মাকসুদ আলম বলেন,‘ রাস্তা পার হতে হয় জীবন হাতে রেখে। অর্ধেক রাস্তা পার হয়ে যে মাঝখানে দাঁড়াবো সেই জায়গাও নেই। হুট করে কাভার্ডভ্যান বা অন্য গাড়ি চলে আসে।’
শুধু রাস্তা পারাপার নয়, গাড়িতে যেতেই ভয় করে জানিয়ে ট্রাফিক পুলিশের উপ-কমিশনার (পশ্চিম) তারেক আহমেদ বলেন, খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে নয়াবাজার মোড়। বিশাল এই মোড়ে ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টের জন্য গোল চত্বর প্রয়োজন। অথবা ট্রাফিক ডিজাইন প্রয়োজন। এই কাজটি করে দেয়ার জন্য আমরা সিটি কর্পোরেশনকে কয়েক মাস আগে চিঠিও লিখেছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি এখনো।
তিনি আরো বলেন, এই স্পট থেকে প্রতিনিয়ত আমাদের কাছে অভিযোগ আসছে। যেকোনো সময় দুর্ঘটনার শঙ্কা রয়েছে। আমাদের পুলিশের সদস্যরা পথচারীদের নিজেরা পার করিয়ে দিতে সহায়তা করছে।
ট্রাফিক নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করা পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সম্পাদক প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া বলেন, ‘আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় একে বলা হয় চ্যানেলাইজেশন। জেব্রা ক্রসিং, রোড আইল্যান্ড, গোল চত্বরসহ এই চ্যানেলাইজেশনের ডিজাইন করা হয়ে থাকে। আর তা করা হলে গাড়িগুলো সহজে মোড় অতিক্রম করতে পারে। এতে যানজট থেকে যেমন মুক্তি পাওয়া যায় তেমনিভাবে দুর্ঘটনা থেকেও।’
তিনি আরো বলেন, একসময় টাইগারপাস মোড়ে এই চ্যানেলাইজেশন ছিল না। তখন দুর্ঘটনা বেশি হতো। এখন তা করার পর কমে এসেছে। বর্তমানে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের মোড়ে টানেলের মুখে এমন চ্যানেলাইজেশন করা হচ্ছে।
এদিকে টাইগারপাস মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের বক্স ও নার্সারির প্রান্ত পর্যন্ত রাস্তার চওড়া ৯৮ ফুট। এর মাঝে আবার ডিভাইডার রয়েছে। নগরীর অপর ঝুঁকিপূর্ণ মোড় ইস্পাহানি মোড়ে পিটস্টপ প্রান্ত থেকে আমিন সেন্টার পর্যন্ত রাস্তার চওড়া ১২১ ফুট। এই রোডে আবার রাস্তার মাঝখানে নিরাপদে দাঁড়ানোর সুযোগ রয়েছে। কিন্তু পোর্ট কানেকটিং রোডের নয়াবাজার মোড়ে রাস্তার এ প্রান্ত ( পানির কল) থেকে ওপ্রান্ত ( হালিশহর সবুজবাগ) পর্যন্ত চওড়া রয়েছে প্রায় ১৪০ ফুট। আগে যেখানে ছিল ৯৫ থেকে ১০০ ফুটের মধ্যে। এখন চওড়া বেড়ে যাওয়ায় বেড়ে গেছে ঝুঁকি।
ঝুঁকির কথা স্বীকার করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জাইকার অর্থায়নে পোর্ট কানেকটিং রোডটি সম্প্রসারণ ও সংস্কারের কাজ করা হলেও নয়াবাজার মোড় ও সাগরিকা মোড়ে গোল চত্বরসহ ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট ডিজাইন করেনি। তাই এই কাজটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে করা হবে।
কবে করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে মেয়র মহোদয় নির্দেশনাও দিয়েছেন। তাই এখন আমরা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের জন্য দরপত্র আহবান করবো। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত হলে নকশা করা হবে এবং সেই অনুযায়ী কার্যাদেশ দেয়া হবে।
এতে তো অনেক সময় লেগে যাবে। এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ শুধু নয়াবাজার মোড় নয়। নগরীর আরো কিছু মোড় নিয়ে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কাজ করবে। তারপরও আমরা চেষ্টা করবো দ্রুত শেষ করতে।’
উল্লেখ্য, নগরীর অনেক মোড় যেনো একেকটি মৃত্যুকূপ। রাস্তা পার হবার সময় অনেকে গাড়ি চাপা পড়ছে। এক গাড়ির সাথে অপর গাড়ির সংঘর্ষ হচ্ছে। আর পোর্ট কানেকটিং রোড দিয়ে বন্দরের পণ্য ব্যবহারকারী লরি, কাভার্ডভ্যান ও ট্রাকের পাশাপাশি গণ পরিবহনও চলাচল করে। এখন রাস্তা ভাল হবার কারণে গাড়িগুলো খুব স্পিডে চলাচল করে।