বান্দরবানে বাড়ছে করোনা রোগী হাসপাতালে নেই পর্যাপ্ত শয্যা

বান্দরবান হাসপাতাল

এন এ জাকির,  বান্দরবান :

বান্দরবানে দিন দিন করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় শয্যা সঙ্কটে পড়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। গত মার্চ মাসে দেশে করোনা সংক্রমণ দেখা দিলে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় বান্দরবান জেলার সাত উপজেলায় ১৩০ শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত করে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। কিন’ ইতোমধ্যে বান্দরবান জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়েছে ১৩৯ জন, যা ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি। আক্রানেত্মর হার যদি বাড়তে থাকে তাহলে আক্রান্ত রোগীদের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেয়ার জন্য শয্যার সংকুলান হবে না বলে মনে করছেন জেলা সিভিল সার্জন। তাই পূর্ব প্রস’তি হিসেবে জেলায় ফিল্ড হাসপাতাল প্রস্তুত করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। এছাড়া করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেয়া কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়বে।

জানা গেছে, বান্দরবান জেলায় করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় সাত উপজেলায় ১৩০ শয্যার করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এরমধ্যে জেলা সদর হাসপাতালে ১০০ শয্যার এবং বাকী ৬ উপজেলায় ৫ টি করে করোনা আইসোলেশন শয্যা রয়েছে। বান্দরবানে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ১৬ এপ্রিল নাইড়্গ্যংছড়ির ঘুমধুমে। এর পর গত দুই মাসে জেলায় করোনা আক্রান্ত হয় ৪০ জনের মত। কিন’ গেল দুসপ্তাহে এ সংখ্যা বেড়ে দাড়ায় ১৩৯ জনে। এর মধ্যে গেল সপ্তাহে শুধু সদরেই আক্রান্ত হয় ৫৮ জন একদিনে সর্বোচ্চ আক্রান্ত হয় ২২ জন এনিয়ে জেলা সদরে করোনা আক্রানেত্মর সংখ্যা ৯৬ জন। এদিকে লামা উপজেলায় আক্রানেত্মর সংখ্যা একদিনেই ৬জন আর আইসোলেশন শয্যা ৫টি। এদের মধ্যে অনেকের উপসর্গ না থাকায় কেউ কেউ বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে এবং কেউ কেউ হাসপাতালের আইসোলেশনে চিকিৎসা নিচ্ছে। তবে গত কয়েকদিনে যে হারে আক্রানেত্মর সংখ্যা বেড়েছে সেটা যদি অব্যাহত থাকে সেড়্গেত্রে হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে শয্যা সঙ্কটের কারণে করোনা রোগীর চিকিৎসা দেয়া কষ্টসাধ্য হবে বলে জানান বান্দরবান করোনা ইউনিটের প্রধান ডা. প্রত্যুষ পল। তিনি বলেন আমরা সদর হাসপাতালে ১০০ শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত করেছি।

আমাদের এখানে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা নেই আইসিইউ নেই পর্যাপ্ত অক্সিজেন সিলিন্ডারও নেই। তারপরও আমরা সর্ব্বোচ্চ ১০০ জন রোগীকে রাখার ব্যবস্থা করতে পারব। কিন’ যে হারে আক্রানেত্মর সংখ্যা বাড়ছে এভাবে যদি বাড়তে থাকে তাহলে আমরা বাড়তি রোগীকে অন্যান্য সুযোগ সুবিধা তো দিতে পারব ই না শয্যা ও দিতে পারব না। তিনি আরো বলেন আমাদের এখানে শুধু করোনা রোগী নয় সাসপেক্টেড কোভিড ১৯ অনেক রোগীও রয়েছে। বর্তমানে ১৯ জন করোনা রোগী এবং ৭ জন সাসপেক্ট রোগী রয়েছে। অনেকে সুস’ হয়ে চলে গেছে সে কারণে এখন পর্যন্ত করোনা রোগীদের শয্যা দিতে পারছি। তবে রোগী যদি বেড়ে যায় তখন আমরা তাদের ভর্তি করতে হিমশিম খাবো। পূর্ব প্রস’তি হিসেবে বান্দরবানে দুটি প্রাইভেট ক্লিনিক রয়েছে সেগুলোকে করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ড হিসেবে প্রস্তুত করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে সকলের সমন্বয় প্রয়োজন  কারণ স্বাস্থ্য বিভাগের একার পড়্গে এটা সম্ভব নয়।

বান্দরবান জেলার সিভিল সার্জন ডা. অং সুই প্রু মার্মা বলেন, যে হারে করোনা আক্রানেত্মর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, এটা যদি চলমান থাকে তবে করোনা রোগীকে শয্যা দিতে কষ্ট হয়ে যাবে। তাই বান্দরবানে একটি ফিল্ড হাসপাতাল প্রস্তুত করা প্রয়োজন। এ ড়্গেত্রে স্থানীয় প্রশাসন জনপ্রতিনিধি সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারি স্কুল টাউন হল আবাসিক হোটেল যে কোন একটাকে করোনা চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল হিসেবে প্রস্তুত করা যেতে পারে। সেড়্গেত্রে প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্ট রোগী আনার জন্য পরিবহন এবং জনবলও দিতে হবে। অন্য উপজেলার রোগীকে সদরে আনা যাবে না তাদেরকে স্ব স্ব উপজেলায় স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় সরকারি স্কুল বা টাউন হল গুলোতে আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরি করতে হবে।  এজন্য স্থানীয় প্রশাসন জনপ্রতিনিধি সবাইকে সমন্বয় করতে হবে। সবাইকে মিলে একসাথে করোনার মোকাবেলা করতে হবে। করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই আমরা বিভিন্ন চাহিদার কথা বলে আসছি, বিশেষ করে অক্সিজেন সিলিন্ডার কিন’ এখনো আমরা তা পাইনি। তবে ইতোমধ্যে আমরা আরো ১৫ টি অক্সিজেন ক্রয় করেছি এমএসআর খাতের টাকা দিয়ে। আগে থেকে প্রস’তি নিয়ে রাখতে পারলে করোনা আক্রান্তদের আমরা চিকিৎসা দিতে পারব। আর করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে হলে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে হবে আমাদের নিজেদের সচেতন হতে হবে। যাদের উপসর্গ নেই তারা বাসায় থেকে চিকিৎসা নিবে, যাদের অক্সিজেন এর দরকার হবে তারা হাসপাতালে আসবে। ।

ইতোমধ্যে বান্দরবানে করোনা আক্রান্ত হয়েছে পার্বত্যমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি জেলা প্রশাসক দাউদুল ইসলামসহ রাজনৈতিক ও প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাসহ ১৩৯ জন। এর মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে জেলায় মারা গেছে একজন।