সুপ্রভাত ডেস্ক »
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণ এবং হিন্দুসহ সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনী বাংলাদেশে পাঠানোর জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভা অধিবেশনে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনার সময় তিনি এ প্রস্তাবনার কথা জানান। একইসঙ্গে সংসদে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতিও দাবি করেছেন মমতা।
তিনি বলেছেন, “রাষ্ট্রপুঞ্জের সঙ্গে এই বিষয়ে ভারত সরকার কথা বলুক যাতে সেখানে তারা শান্তি বাহিনী পাঠাতে পারে। আমাদের এই বিষয়ে অনুরোধ রইল।”
সোমবার দুপরে বিধানসভার অধিবেশনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী বলেন, “আমরা হাউজের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানাচ্ছি প্রধানমন্ত্রী যেন সংসদে বাংলাদেশের বিষয়ে কথা বলেন। যদি প্রধানমন্ত্রীর অসুবিধা থাকে কোনও ব্যাপারে তাহলে বিদেশমন্ত্রী যেন সংসদে বিবৃতি দিয়ে জানান যে কেন্দ্র এই বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “আমার দ্বিতীয় পরামর্শ যদি এ জাতীয় ঘটনা (সহিংসতার) ঘটতে থাকে তাহলে আমরা আমাদের লোকেদের ফিরিয়ে আনব। সরকার উদ্যোগ নেবে। তারা ফিরে আসলে থাকার, খাওয়ার কোনও সমস্যা হবে না। কোনও ভারতীয়ের উপর অত্যাচার হবে সেটা আমরা হতে দিতে পারি না।”
‘ভারতীয়দের উপর অত্যাচার’ বলতে তিনি কাদের বুঝিয়েছেন, তা ওই বক্তব্যে পরিষ্কার করেননি।
মমতা ব্যানার্জী বলেন, বাংলাদেশে ভারতীয় পতাকাকে লাগাতার অসম্মান করা হচ্ছে। সেই সব ছবি গত কয়েকদিন ধরে ভেসে বেড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এ ব্যাপারে এপার বাংলায় বিপুল সংখ্যক মানুষের মনে ক্ষোভ ও রাগ তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক যেসব ঘটনা ঘটছে, এসব ব্যাপারে নিজে নাক গলাবেন না উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ অন্য দেশ। এটা আমার এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না। এটা কেন্দ্রীয় সরকারের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে। প্রয়োজনে ওই দেশে কেন্দ্রীয় সরকার শান্তির বার্তা নিয়ে প্রতিনিধি পাঠাক। কেন্দ্র জাতিসংঘের কাছে আবেদন করুক, শান্তিরক্ষা বাহিনী পাঠানোর জন্য।
বিধানসভায় আলোচনার শুরুতেই বাংলাদেশের ঘটনা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকায় উষ্মা প্রকাশ করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। ক্ষোভের সুরে তিনি বলেন, ১০ দিন হয়ে গেল। কিন্তু পুরো বিষয়টি নিয়ে চুপ করে আছে কেন্দ্রীয় সরকার। অথচ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল প্রতিদিন মিছিল করছে। মিছিল করার অধিকার আছে। সীমান্ত আটকে দেয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছে। কিন্তু এটা মাথায় রাখতে হবে যে সীমান্তের বিষয়টা কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে আছে। আর রাজ্য সরকার কেন্দ্রের পরামর্শ মেনেই চলবে। বলছে সীমান্ত আটকে দেব। খাবার দেব না। এটা আমাদের এখতিয়ার নয়। সরকার গাইডলাইন দিলে আমরা বন্ধ করতে পারি।
কূটনৈতিক বা অন্য কোনও কারণে যদি নরেন্দ্র মোদি বিবৃতি না দেন, তাহলে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে সংসদে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকরের মুখ খোলা উচিত বলে মত পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর।
মমতা ব্যানার্জী দাবি করেন, ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষিক সম্পর্ক এখন প্রায় সুতোয় ঝুলছে। বাংলাদেশের একটা বড় অংশের মানুষের মধ্যে যেমন প্রতিবেশি দেশ সম্পর্কে বিদ্বেষ দেখা যাচ্ছে, তেমনি হিন্দুদের ওপর অত্যাচার দেখে ভারতের মানুষও ক্ষুব্ধ।
বাংলাদেশের সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতার ও সেদেশে সংখ্যালঘুদের ওপরে হামলার অভিযোগকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন ধরে দুই দেশের মধ্যে তীব্র টানাপোড়েন চলছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কলকাতা এবং সীমান্তবর্তী অঞ্চল-সহ রাজ্যের একাধিক অংশে বিক্ষোভ প্রদর্শনও হয়েছে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা ও যমুনা টিভি