জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (ফাও) খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে বাংলাদেশসহ ৯টি দেশকে সতর্কবার্তা দিয়েছে। সংস্থাটি বলছে, গত ১ বছরে বাংলাদেশে চালের দাম ৩৫ শতাংশ বেড়েছে, কারণ হিসেবে উৎপাদনে ঘাটতি, কম আমদানি ও করোনার প্রভাব উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ২০১৭ সালের অক্টোবরের পর বাংলাদেশে চালের দাম এতো বাড়েনি। অন্য যে দেশগুলিকে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে সেগুলি হলো আর্জেটিনা, সুদান, জিম্বাবুয়ে, দক্ষিণ সুদান, নাইজেরিয়া, তাজিকিস্তান, কিরগিজস্তান ও ব্রাজিল। বাংলাদেশসহ ৬টি দেশকে মাঝারি সতর্কবার্তা দিয়েছে।
ফাও এর প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকার চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আমদানির অনুমতি দিয়েছে এবং শুল্ক ৬৫ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে, তারপরও চালের দাম কমার লক্ষণ পরিদৃষ্ট নয়। এটি খাদ্য মন্ত্রণালয়েরও হিসেব। বাজারে এখন মোটা চাল ৪৮ টাকা, মাঝারি ও সরু চালের দামও গত সপ্তাহে আরো ২ টাকা বেড়েছে, এভাবে ক্রমে ক্রমে চালের দাম বাড়তে থাকে। সেই সাথে নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্যের দামও শনৈঃ শনৈঃ বাড়তে থাকে।
ফাও এর প্রতিবেদনে কারণ উল্লেখ করা হয়েছে যথার্থভাবে, উৎপাদন ঘাটতির সাথে করোনার সময় ত্রাণ কাজ, খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির কারণে সরকারের মজুত কমেছে। তবে অসাধু ব্যবসায়ী এবং সিন্ডিকেট চক্রের কারসাজি ও মূল্যবৃদ্ধি এর পেছনে রয়েছে-এটি বিশেষজ্ঞদের মতামত ও পত্র-পত্রিকার মূল্যায়নে এসেছে। চালের দাম বাড়লে আমাদের দেশের নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের খাদ্য নিরাপত্তা ব্যাহত হয়। পুষ্টি সক্ষমতা কমে যায়, চালের মূল্যবৃদ্ধিতে অন্যান্য সাংসারিক খরচেও টান পড়ে। চালের দাম বাড়লেও কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পায় না, মধ্যস্বত্বভোগী ও মিল মালিকরা চাষীদের লাভের গুড় খেয়ে ফেলে।
চালের মূল্য স্থিতিশীল ও মানুষের ক্রয়-ক্ষমতার মধ্যে রাখতে সরকারি মজুত নির্দিষ্ট মাত্রায় থাকা প্রয়োজন। সরকারের মজুত বলা হচ্ছে ১০ লাখ টন, আমদানি করবে আরো ১০ লাখ টন, বেসরকারিভাবে আমদানির লক্ষ্যমাত্রা ১০ লাখ টন।
আমদানি শুরু হলেও তার প্রভাব বাজারে পড়ছে না। সরকারের বাজার মনিটরিং খুবই দুর্বল এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সময়মতো নেয়া যায়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চাল আমদানি দ্রুততর করা উচিত। সামনে বোরো ধানের সময় দাম কমে এলে কৃষকরা যাতে ন্যায্যমূল্য পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে যথাসময়ে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধানচাল সরকারকে কিনতে হবে।
আমাদের দেশে খাদ্য এবং নিত্যপণ্যের বাজার কিছুদিন পরপরই অস্থির করে তোলা হয়, জনগণের পকেট কাটতে সিন্ডিকেট সব সময়ই তৎপর থাকে। শুধু চাল কেন, আটা, তেল, মসল্লাসহ নিত্যপণ্যের দাম একটু একটু করে বাড়তে থাকে যাতে খুব হৈ চৈ না হয়, সরকার থেকেও দাম বাড়ার কারণ ব্যাখ্যা করা হয় না কিংবা প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা যথাসময়ে নেওয়া হয় না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চালের দাম না কমলে সরকারের উচিত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় নিম্নবিত্ত ও সীমিত আয়ের লোকদের খাদ্যসহায়তা বাড়িয়ে দেওয়া। বাজারে মূল্যবৃদ্ধি, আমদানি, সরবরাহ এসব ব্যাপারে নানা গুজবও ছড়িয়ে দেওয়া হয় যা বাজার এবং ভোক্তাদের প্রভাবিত করে। এক্ষেত্রে সরকার-ক্যাব-গণমাধ্যমের বিশেষ ভূমিকা থাকা বাঞ্ছনীয়।