হুমাইরা তাজরীন »
মেলার সাথে বাঙালির সম্পর্ক বহুকাল আগের। যেকোনো উৎসবকে ঘিরে বাঙালির মেলা আয়োজনের ঐতিহ্য বহু পুরোনো। তবে লালদীঘির বৈশাখী মেলার রয়েছে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট। ১৯০৯ সালে এই বলীখেলার আয়োজন করেন বকশির হাটের ব্যবসায়ী আব্দুল জব্বার সওদাগর। সেই মেলারই এবার ১১৪তম আসর। এপ্রিলের ২৪ তারিখ শুরু হয়ে মেলা আনুষ্ঠানিকভাবে গতকাল শেষ হয়েছে। এবার মেলায় গতকাল আয়োজন করা হয় চাটগাঁইয়া ঈদ আনন্দ উৎসব।
গতকাল বিকেল থেকে লালদীঘির মাঠে অনুষ্ঠিত হয় চাটগাঁইয়া ঈদ আনন্দ উৎসব। উৎসব উদ্বোধনের পর এক বর্ণিল র্যালিতে অংশ নেন মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরীসহ অতিথিরা। এরপর ঘুড়ি উড়ানোসহ নাচ গানের বর্ণিল আয়োজনে মাতোয়ারা হয় চট্টলবাসী।
চাটগাঁইয়া ঈদ আনন্দ উৎসবে প্রধান পৃষ্ঠপোষকের বক্তব্যে মেয়র এম . রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘বৃটিশ শাসনামল থেকে প্রতিটি ঐতিহাসিক প্রতিরোধের নেতৃত্ব দিয়েছে চট্টলবাসী। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ কেবল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ছিলো না, এ যুদ্ধ ছিলো আমাদের সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য রক্ষার যুদ্ধও। আজও এ যুদ্ধ চলমান। আমাদের জিততে হবেই।’
এর আগে বরাবরের মতো ২৫এপ্রিল জব্বারের বলীখেলা অনুষ্ঠিত হয়। এবার বিজয়ী হন কুমিল্লার শাহজালাল বলী। গতকাল সরেজমিন মেলা ঘুরে দেখা যায়, বলীখেলা মেলার অন্যতম আকর্ষণ হলেও লালদীঘির মাঠকে কেন্দ্র করে প্রায় ২ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বসা বৈশাখী মেলার কদর ছিলো বেশি। সকল প্রয়োজনীয় দেশীয় তৈজসপত্রই মিলেছে এখানে। ঝাড়ু হতে শুরু করে নান্দনিক ঝাড়বাতিরও দেখা গেছে এখানে। দূর-দূরান্ত থেকে সৌন্দর্য পিপাসু লোকজন যেমন মেলা দেখতে ছুটে আসেন তেমনি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দেশীয় পণ্য এনে পসরা সাজান ব্যবসায়ীরা। তার মধ্যে সবার প্রথমে নজর কাড়ে মাটির তৈরি তৈজসপত্র। এছাড়া মাটির তৈরি ফুলের টব, ব্যাংক, জগ, গ্লাস, কলমদানি, ফুলদানি, প্রতিকৃতি, পাত্র, আয়না, পুতুল, মাটিতে খোদাই করা নান্দনিক দৃশ্য, হাড়ি, কলসি, মূর্তিসহ ঘর সাজানোর নানান পণ্য তো ছিলোই। মেলায় আসা দর্শনার্থীরা কিছু না কিছু পণ্য কিনেছেই। সবার হাতে শোভা পাচ্ছে প্রয়োজনীয় এবং শখের জিনিসপত্র। এককথায় শৈল্পিক বাঙালির নিখাদ মিলনমেলা যেন জব্বারের বলীখেলার বৈশাখী মেলা। এছাড়া ছিলো বাঁশের তৈরি বিভিন্ন খাঁচা, ঝুড়ি, ডালা, কুলা ইত্যাদি। ছিলো বেতের তৈরি পাটি, চেয়ার , টেবিল, দোলনা, মোড়া , আয়না।
মোড়ে মোড়ে দেখা মিলেছে পুঁতির কারিগরদের, যারা পছন্দ মতো পুঁতি দিয়ে তৎক্ষণাৎ বানিয়ে ফেলেন গহনা।
পাটের তৈরি বিভিন্ন সাইজের নারী পুরুষের বহনযোগ্য রঙিন ব্যাগগুলোরও ব্যাপক চাহিদা লক্ষ্য করা গেছে। পাট ছাড়াও হাতের তৈরি কাপড়ের ব্যাগগুলো নজর কেড়েছে সবার। তীব্র গরমে রঙ বেরঙের হাতপাখাও নজর কেড়েছে।
কেবল মাটি বা বেত নয় মেলায় এসেছে তামা কাঁসার নানান তৈজসপত্রও। দা-খুন্তি ছুরি কাচি, বটি , ঘটি-বাটির কদরও ছিলো বেশ।
এছাড়া কাঠের পণ্যগুলোও বেশ চাহিদা লক্ষ্য করা গেছে। এর মধ্যে কাঠের বুক শেল্ফ, শোপিস, ফুলদানি,কলমদানি ইত্যাদির চাহিদা সবচেয়ে বেশি ছিলো।
আন্দরকিল্লা মোড় থেকে কোতোয়ালী মোড় পর্যন্ত ঘর ঝাড়ু দেওয়ার অতি প্রয়োজনীয় পণ্যের ফুলের ঝাড়– ও শলাকার ঝাড়–র বিশাল পসরা ছিলো এবার।
কেবল তৈজসপত্র নয় মুড়ি ,খই, চিড়া ইত্যাদির নাড়– ,মুড়কি, গজা, জিলাপী, খাজাও বিক্রি হচ্ছিলো মেলা প্রাঙ্গণে।