চট্টগ্রামে ধান উৎপাদনের একটি বড় অংশ আসে আমন থেকে। প্রচুর ফলনও আসে এই মৌসুমের চাষ থেকে। কৃষকেরা একটু আগেভাগে প্রচুর জমিতে আমনের চাষ করেছিল।
চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, হাজার হাজার একর আমন চাষ সম্পন্ন করে কৃষকেরা উৎসবমুখর ভাবে ঘরে ফেরার সময়ে বন্যায় সমূহ সর্বনাশ ঘটে। শুধু চট্টগ্রামেই প্রায় ৫শ’ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে উল্লেখ করে অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, আসলে টাকার অংকে এই ক্ষতি নিরুপন করা যাবে না। ফসল প্রাপ্তি নিয়ে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হলো তা সামাল দেয়া কঠিন হবে। তিনি বলেন, একজন কৃষক তার সর্বস্ব খরচ করে চাষাবাদ করলেন। তা ধ্বংস হয়ে গেল। এখন নতুন করে আবার চাষ করার মতো অবস্থা ওই কৃষকের নেই। হয়তো দেখা যাবে জমিটি খালি পড়ে রয়েছে। কোন ফসলই ওই জমি থেকে এই মৌসুমে আর পাওয়া যাবে না। এই ক্ষতির প্রভাব ব্যাপক বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
কৃষি বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম কৃষি অঞ্চলে এবারকার বন্যায় সর্বমোট ১ লাখ ৫৩ হাজার ১০৩ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যে অনেক জমিই খালি পড়ে থাকবে বলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উল্লেখ করেন।
স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় কৃষি সেক্টরে মারাত্মক রকমের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। যা দেশের কৃষি উৎপাদনসহ খাদ্য নিরাপত্তায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। জমিতে লাগানো আমন ধান পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। নষ্ট হয়ে গেছে বীজতলাও। আবার নতুন করে বীজতলা তৈরি করে চারা গজিয়ে চাষাবাদ করা আদৌ সম্ভব হবে কিনা তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, চট্টগ্রামের কৃষি অঞ্চলেচট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালসহ ৫টি জেলা, ৪২টি উপজেলা ও ৩টি মেট্রোথানার সমন্বয়ে গঠিত। ১৪ হাজার ৪ শত ২৩ দশমিক ২২ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের বিস্তৃত এই অঞ্চলে প্রায় দুই কোটি মানুষের বসবাস। এসব অঞ্চলের প্রধান ফসল ধান। এছাড়া চা, ভূট্টা, গোলআলু, বাদাম, তরমুজসহ বিভিন্ন ফলমূল ও শাকসবজি উৎপাদিত হয়। ফেনী ও কক্সবাজার জেলায় মূলত ধান উৎপাদন হয়।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, মীরসরাই, ফটিকছড়ি অঞ্চলেও প্রচুর ধানচাষ হয়ে থাকে। চট্টগ্রাম খাদ্য ঘাটতির একটি অঞ্চল। এখানে প্রচুর বাইরের লোকের বসবাস হওয়ায় এই অঞ্চলটিতে খাদ্য ঘাটতি রয়েছে। যা দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে এনে যোগান দিতে হয়।
এবার আমনের ক্ষয়ক্ষতি এতো ব্যাপক হয়েছে যে বহু কৃষকই নিঃস্ব হয়ে গেছেন। চট্টগ্রাম জেলায় এবার ১ লাখ ২ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষ করা হয়। এর মধ্যে বন্যায় তলিয়ে গেছে ৪৩ হাজার ৫শ হেক্টর জমির ফসল। তলিয়ে যাওয়া আমন ক্ষেতের মধ্যে ১৩ হাজার ৮৩১ হাজার হেক্টর জমির ধান সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চট্টগ্রামে এই বন্যায় মোট ১ লাখ ৬১ হাজার ৩৭১ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যাদের অনেকেরই আর চাষাবাদ করার মতো সামর্থ্য নেই।
আবার চলতি মাসেই আউশ ধান ঘরে তোলার কথা ছিল কৃষকদের। কিন্তু বন্যায় তাও নষ্ট করে দিয়েছে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় ৩৩ হাজার ১ হেক্টর জমিতে আউশের চাষ হয়েছিল। এরমধ্যে ৮ হাজার ৩৮৩ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে কোটি কোটি টাকার ফসলহানী হয়েছে বলেও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
ফলে এবার ধান উৎপাদন লক্ষমাত্রা অর্জন করতে পারবে কিনা তা নিয়ে সংশয় আছে। তাই সরকারকে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাতে হবে, কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে হবে। প্রয়োজনে তাদের জন্য সুদবিহীন ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।