বন্যায় চট্টগ্রামের পাঁচ উপজেলা ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, মিরসরাই, রাউজান ও সীতাকুণ্ডে ১ হাজার ৩০০ কোটি ৬৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে ফটিকছড়িতে ৮৭৬ কোটি, হাটহাজারীতে ১৫৭ কোটি, মিরসরাইয়ে ৬৪৪ কোটি, রাউজানে ৮৩ কোটি ও সীতাকুন্ডে ১৪ কোটি টাকার ক্ষতির হিসাব তৈরি করেছে উপজেলা প্রশাসন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সড়ক ও কালভার্টের। এ ছাড়া মানুষের ঘরবাড়ি ও কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, বন্যায় ৬০০টি সম্পূর্ণ ও ৪ হাজার ৮০০টি আংশিকসহ মোট ৫ হাজার ৪০০টি ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ ৯৬ কোটি টাকা। কৃষিনির্ভর এ উপজেলায় কৃষিতেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, যার পরিমাণ ১২০ কোটি টাকা। মৎস্য খাতে ক্ষতি ৩৮ কোটি টাকা। সড়ক, কালভার্ট ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের ক্ষতি ২২০ কোটি টাকা।
বন্যায় ভেঙে গেছে হালদা নদীসহ বিভিন্ন খালের বাঁধও। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আওতাধীন এসব বাস ভেঙে ক্ষতি হয়েছে ১৫ কোটি টাকার। এ ছাড়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের বিভিন্ন খাতের ক্ষতির পরিমাণ ১৪ কোটি টাকা।
হাটহাজারীতে মোট ক্ষতির পরিমাণ ১৪৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। মিরসরাইয়ে এবারের বন্যায় ৪ হাজার ১২০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে ১৫১ কোটি ৮০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। মৎস্য খাতে ভেসে গেছে ২ হাজার ৪২৯ হেক্টর খামারের মাছ। এতে খামারিদের আর্থিক ক্ষতি দাঁড়িয়েছে ৩৭৪ কোটি ২০ লাখ টাকা। বন্যায় খামার ডুবে মিরসরাইয়ে আড়াই লাখ মুরগি মারা যায়। মুরগি, খামার অবকাঠামোসহ পোলট্রি খাতে ক্ষতি হয়েছে পাঁচ কোটি টাকা।
সীতাকুণ্ডে মৎস্য ও কৃষি খাতে সম্মিলিতভাবে প্রায় ১৪ কোটি ৩২ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মৎস্য খাতে ক্ষতির পরিমাণ ৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা অনাদিতে কৃষি খাতের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৬ কোটি ৯২ লাখ ৭১ হাজার ৮০০ টাকা।
এছাড়া শুধু ফেনীতে ৫০০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নোয়াখালীতে ৬১৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে মৎস্যখাতে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দেশের ২৪টি জেলার কৃষি ব্যাপকভাবে ক্ষতির শিকার হয়েছে। এ ছাড়া বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে দেশের ১১টি জেলার ৫৪১টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা। কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের ক্ষতি ছাড়াও এসব অঞ্চলের বসতবাড়ি, অবকাঠামো ও ব্যবসা-বাণিজ্যেরও ক্ষতি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ন্যূনতম হিসাব বিচেনায় বন্যায় এ পর্যন্ত সরাসরি আর্থিক ক্ষতি ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
এটি দেশের অর্থনীতিতে বড় চাপ সৃষ্টি করবে। বিগত অন্তত দেড় দশক প্রাকৃতিক দুর্যোগ তুলনামূলক কম হয়েছে। তারপরও কভিড মহামারী ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি মোকাবেলা করে দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবার প্রচেষ্টায় ছিল। এরমধ্যে দীর্ঘ বন্যা অর্থনীতিকে নাজুক অবস্থায় ফেলে দিতে পারে। কাজেই বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এখন থেকেই সরকারকে কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে হবে।