বন্দর থেকে সারচার্জ যৌক্তিক দাবি

ছবি : সংগৃহীত

গত ২০২৩–২০২৪ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করেছে ৩১ লাখ ৬৮ হাজার ৬৯০ টিইইউস। এছাড়া কার্গো বা খোলা পণ্য হ্যান্ডলিং হয়েছে ১২ কোটি ৩২ লাখ ৪২ হাজার ৭৪৮ মেট্রিক টন। বন্দরের পণ্যভর্তি কন্টেইনারের সিংহভাগ পরিবহন হয় সড়ক পথে। অর্থাৎ বন্দরের পণ্যবাহী যানের চাপ পড়ে নগরের সড়কে। চট্টগ্রামের অধিকাংশ রাস্তা ৬–১০ টন ওজনের গাড়ির জন্য নির্মাণ করা হলেও ৫০–৬০ টনের বোঝা নিয়ে গাড়ি চলাচল করছে। হাজার হাজার ট্রাক, লরিসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করায় নগরের অভ্যন্তরীণ রাস্তাঘাট দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর, জেটি হতে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সড়কে অসংখ্য ভারী যানবাহন চলাচল করে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দরমুখী সড়কগুলো এ কারণেই প্রতিনিয়ত নষ্ট হয়। এসব ভারী যানবাহনের কারণে নিয়মিত রাস্তা, ব্রিজ ও কালভার্ট নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে নগরবাসীর চলাচলে যানজটসহ চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে।

জনগণের চলাচলের জন্য সুষ্ঠু সড়ক ব্যবস্থাপনা সিটি কর্পোরেশনের অন্যতম দায়িত্ব। এসব রাস্তাঘাট নিয়মিত সংস্কার করতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন যা সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান সক্ষমতা দিয়ে যোগান দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। নগরের রাস্তাঘাট সংস্কার ও উন্নয়নের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের আয়ের একটি অংশ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) দেয়া হোক; এমন দাবি দীর্ঘদিনের। এর প্রেক্ষিতে ‘বন্দর কর্তৃপক্ষ আইন’–এর খসড়ায় বন্দরের আয়ের ১ শতাংশ অর্থ চসিককে দেয়ার বিষয়টি অন্তর্ভুক্তও করা হয়।

এ অবস্থায় বন্দর থেকে প্রত্যাশিত সেই অর্থ আদায়ে উদ্যোগ নিচ্ছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। বন্দরের বাৎসরিক আয় থেকে ১ শতাংশ হারে সার্ভিস সার্জ হিসেবে দাবি করে নৌ–পরিবহন মন্ত্রণালয়ে পত্র দিচ্ছেন তিনি। মন্ত্রণালয়টির উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বরাবর আজ এ চিঠি পাঠানোর কথা রয়েছে। এর আগে বন্দর চেয়ারম্যান টাইগারপাস নগর ভবনে সাক্ষাতে এলেও মেয়র ‘নগর উন্নয়ন মাশুল’ হিসেবে অর্থ প্রদানের বিষয়ে আলোচনা করেছেন।

এদিকে অর্থনীতিবিদ ও সাধারণ নগরবাসী মেয়রের উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তারা বলছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা চট্টগ্রামের বাসিন্দা। তাই এবার কর্পোরেশনের প্রস্তাব এবং দীর্ঘদিনের দাবিটি পূরণের বিষয়ে আশাবাদী তারা। বন্দরের আয় থেকে চসিককে বরাদ্দ দেয়া হলে রাস্তাঘাট সংস্কার এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে গতি আসবে বলেও মনে করেন তারা। এছাড়া একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে শহরের রাস্তাঘাটের বড় ব্যবহারকারী বন্দর। তাই রাস্তাঘাটের রক্ষণাবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান চসিককে অর্থ দেয়াও উচিত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
২০২১ সালের ৫ এপ্রিল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আইন ২০২১ এর চূড়ান্ত খসড়া মন্ত্রিপরিষদের সভায় অনুমোদন দেয়া হয়। ওই খসড়ায় এতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ শতাংশ অর্থ চসিককে প্রদানের বিষয়টি অর্ন্তভুক্ত ছিল। নগরের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য এ অর্থ প্রদান করার কথা ছিল। অথচ ২০২২ সালের এপ্রিলে ওই খসড়া ‘চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আইন–২০২২’ হিসেবে চূড়ান্ত অনুমোদন পায়। এতে চসিককে ১ শতাংশ অর্থ দেয়ার বিষয়টি বাদ পড়ে।
আমরা মনে করি মেয়রের দাবিটি যৌক্তিক। সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে ইতিবাচক ভূমিকার দরকার আছে।