চট্টগ্রাম বন্দরের বাৎসরিক আয়ের এক শতাংশ পাবে চসিক: নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব
যৌক্তিক দাবি সরকারের উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত বুঝাতে পেরেছি: খোরশেদ আলম সুজন
ভূঁইয়া নজরুল <<
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে বছরে ৩৩৫ কোটি টাকা পেতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। কোনো তহবিল নয়, প্রতিবছর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ যে আয় করবে সেই আয়ের এক শতাংশ সার্ভিস চার্জ হিসেবে পাবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রতিবছর গড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আয় করে। এই আয়ের এক শতাংশ ৩০০ কোটি টাকা এবং হোল্ডিং টেক্স হিসেবে বন্দর থেকে সিটি কর্পোরেশন বছরে পায় প্রায় ৩৫ কোটি টাকা। সেই হিসাবে চসিক বছরে ৩৩৫ কোটি টাকা পেতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে।
তবে এই টাকার বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এখনো কিছুই জানে না। গতকাল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের একাধিক উর্ধতন কর্মকর্তার সাথে কথা বললে তারা জানান, কিসের এক শতাংশ দেয়া হবে, এবিষয়ে আইন আকারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত কিছু বলার সুযোগ নেই। তাদের মতে, বন্দরে তিন ধরনের আয় রয়েছে। একটি বাৎসরিক আয়, দ্বিতীয়টি আয় থেকে খরচ বাদ দিলে নিট লাভ, তৃতীয়টি হলো বছরে সব খরচ দেয়ার পর বন্দরের তহবিলে থাকা অবশিষ্ট অর্থ। এখন কোন খাতের এক শতাংশ দিতে হবে সিটি কর্পোরেশনকে, এমন প্রশ্ন তোলেন তারা।
বন্দর সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতিবছর আয় হয় প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বন্দরের বাৎসরিক আয় ছিল ২ হাজার ৯২৪ কোটি ৯৯ লাখ টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আয় ২ হাজার ৮৯২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। এই আয়ের এক শতাংশ প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। আগামীতে বন্দরের বাৎসরিক আয় আরো বাড়বে সেক্ষেত্রে টাকার পরিমাণও বাড়বে।
অপরদিকে প্রতিবছর খরচ বাদ দিয়ে বন্দরের প্রকৃত লাভ হয় ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকা। এই আয়ের এক শতাংশ সিটি কর্পোরেশনকে দেয়া হলে তা হতে পারে ৪০ থেকে ৫০ কোটি টাকা। তৃতীয়ত প্রতিবছর সকল খরচ শেষে বন্দরের তহবিলে জমা হয় এক থেকে দেড় হাজার কোটি টাকা। এই টাকার এক শতাংশ দেয়া হলে প্রতিবছর সিটি কর্পোরেশন পেতে পারে ১০০ থেকে ১৫০ কোটি টাকা। এখন সিটি কর্পোরেশন কোনটি পাচ্ছে এ নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে।
জানতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘কোন খাতের এক শতাংশ টাকা দেয়া হবে এবিষয়ে কোনো নির্দেশনা আসেনি। এখন তো মাত্র মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হলো, সেটি অর্থ বিভাগে যাবে এবং আরো পর্যালোচনা হবে। সর্বশেষ সংসদে আইন আকারে পাস হওয়ার পর গেজেট আকারে আমাদের কাছে আসবে। তাই এখনই চূড়ান্তভাবে বলা যাচ্ছে না কোন খাতের আয় থেকে এক শতাংশ সিটি কর্পোরেশনকে দিতে হবে।’
জানা যায়, বন্দর থেকে হিস্যা আদায়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী সর্বপ্রথম দাবি তুলেছিলেন। এরপর এবিষয়ে জোরালো ভূমিকা পালন করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। মাত্র ছয় মাসের প্রশাসক থাকাকালে তিনি সরকারের উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত লবি করেন বন্দরের হিস্যার জন্য।
সুজন গতকাল সুপ্রভাতকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে বন্দর, এই শহরের উপর দিয়ে পণ্য নিয়ে সারা দেশে পরিবহন করে। আর এই শহরকে সার্ভিস চার্জ দেবে না, তা হতে পারে না। এই যৌক্তিক দাবি আমি সরকারের উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত বুঝাতে সক্ষম হয়েছি। এর ফলশ্রুতিতে বন্দর থেকে এক শতাংশ হারে হিস্যা দিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন দিয়েছেন। এজন্য চট্টগ্রামবাসীর পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।’
কোন আয়ের এক শতাংশ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা নিয়ে কমিটি হবে, পর্যালোচনা হবে। তারপর সিদ্ধান্ত হবে। তবে এক শতাংশ হারে আসা শুরু হোক। এটাই অনেক প্রাপ্তি।
এই এক শতাংশের বিষয়ে খোলাসা করেন নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী। তিনি গতকাল বিকালে সুপ্রভাতকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর বছরে গড়ে যে তিন হাজার কোটি টাকা আয় করে সেই আয়ের এক শতাংশ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে দেয়া হবে। তবে এবিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে অনাপত্তির বিষয়টি আসতে হবে। সর্বশেষ আইন আকারে অনুমোদন হলে তা কার্যকর হবে।’
অপরদিকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের জন্য এই সুবিধা অবশ্যই একটি অভিনব সিদ্ধান্ত বলে অভিহিত করেছেন বিশিষ্ট স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, এতে অবশ্যই চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা সহজতর হবে।
উল্লেখ্য, গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠকে ‘চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আইন-২০২১’ খসড়া অনুমোদন দেন। সেই আইনে বন্দরের আয়ের এক শতাংশ সিটি কর্পোরেশনকে দেয়ার বিষয়টি অনুমোদন লাভ করেছে।