বন্দরের মাসুল বৃদ্ধি দায় মেটাবে ভোক্তারা

বন্দরের ট্যারিফ গড়ে ৪১ শতাংশ বাড়িয়ে রোববার রাতে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। গতকাল সোমবার থেকে বর্ধিত হারে ট্যারিফ কার্যকর করা হয়েছে। কন্টেনার হ্যান্ডলিং, কার্গো খালাস, জাহাজ চলাচল, পাইলটেজ ও টাগ সার্ভিস, পানি–বিদ্যুৎ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ক্রেন ও যন্ত্রপাতি ভাড়া, গেটপাস ও লাইসেন্স নবায়নসহ বন্দরের সব সেবাখাতে ট্যারিফ বৃদ্ধি করা হয়েছে। ব্যবসায়ী শিল্পপতিসহ বন্দর ব্যবহারকারীদের আপত্তির মুখে সরকার এই ট্যারিফ বৃদ্ধি করল। ইতোপূর্বে বন্দর ব্যবহারকারীদের সাথে আলোচনাকালে প্রস্তাবিত ট্যারিফ নিয়ে কিছুটা বিবেচনা করার কথা বলা হলেও শেষ পর্যন্ত রোববার রাতে প্রস্তাবিত ট্যারিফে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
এই খবর ব্যবসায়ীদের দুশ্চিন্তা বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। তাঁরা একসঙ্গে মাশুল বাড়ানোর দুই প্রভাবের কথা বলছেন। যেমন পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে দিন শেষে বাড়তি মাশুল ভোক্তার পকেট থেকেই যাবে। তাতে পণ্যের দাম বেড়ে মূল্যস্ফীতিও বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। দ্বিতীয়ত, রপ্তানি পণ্যের ক্ষেত্রে পণ্য পরিবহনের খরচ বাড়বে, যা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় রপ্তানিকারকেরা পিছিয়ে যেতে পারে।
চট্টগ্রাম বন্দরের মাশুল আদায়ের প্রধান দুটি খাত হলো জাহাজ ও পণ্য পরিবহনের সেবাবাবদ। বন্দরের নিরীক্ষিত হিসাব অনুযায়ী, বিদ্যমান মাশুলের হার অনুযায়ী ২৩-২৪ অর্থবছরের এই দুই খাতে মাশুল আদায় হয়েছে ৩ হাজার ৯১২ কোটি টাকা।
বন্দর কর্মকর্তারা জানান, গেজেট প্রকাশের পর বন্দরের নতুন মাশুল কার্যকর হবে। নতুন করে বর্ধিত হারে মাশুল কার্যকর হলে এ ক্ষেত্রে আয় বা আদায় কম-বেশি ৪০ শতাংশ বাড়বে। এ হিসেবে মাশুল হিসাবে বন্দরের দেড় হাজার কোটি টাকা বাড়তি আয় হবে। এই বাড়তি মাশুল রপ্তানি খাতে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা পিছিয়ে দেবে।

১৫ জুলাই বেসরকারি কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশন এক সার্কুলারে কনটেইনার ব্যবস্থাপনার মাশুলের হার বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। সার্কুলারে সেবাভেদে ৩০ থেকে ১০০ শতাংশ মাশুল বাড়ানোর ঘোষণা দেয় সংগঠনটি। বেসরকারি ডিপোর হিসাবে, ডিপোতে কনটেইনার ব্যবস্থাপনার মাশুল বাড়লে বছরে ৩০০ কোটি টাকার কাছাকাছি খরচ বাড়তে পারে ব্যবহারকারীদের। অর্থাৎ সরকারি ও বেসরকারি দুই খাতে সব মিলিয়ে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার কম-বেশি বাড়তি ব্যয় হবে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে এই বাড়তি ব্যয় করতে হবে ব্যবসায়ীদের। কাজেই আমরাও মনে করছি এই মন্দা সময়ে বাড়তি বোঝা না চাপিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ বন্দর ব্যবহারকারীদের সহযোগিতা করতে পারত। আসলে সহযোগিতা ব্যবসায়ীদের করা হতো তা নয়, এ সিদ্ধান্তে শেষ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত জনগণেরই পরিত্রাণ হতো।