বন্দরকে ঝুঁকিমুক্ত করার উদ্যোগ নিন

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়কাল থেকে গত পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে ২৪টি জাহাজ ডুবে গেছে। যেগুলো নৌ চলাচলের ক্ষেত্রে বড় কোনো সংকট তৈরি না করলেও আন্তর্জাতিকভাবে চট্টগ্রাম বন্দরকে বিপজ্জনক বন্দর হিসেবে চিহ্নিত করে রাখছে। এসব জাহাজ ওঠানোর মতো সক্ষমতা চট্টগ্রাম বন্দরের নেই। এছাড়া বিষয়টি বেশ ব্যয়বহুলও। তবুও বন্দর তথা দেশ ও জাতির স্বার্থে ডুবে থাকা জাহাজগুলো উদ্ধারে বিশেষ অ্যাকশন প্ল্যান জরুরি বলে বন্দর ব্যবহারকারীরা স্থানীয় একটি দৈনিককে জানিয়েছেন।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র থেকে জানা গেছে, ১৯৮৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে ডুবে যায় পণ্যবাহী জাহাজ এমভি লিটা। এখন পর্যন্ত জাহাজটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ২০০২ সালের ৩ জুলাই ডুবে যায় বিআইডব্লিউটিসির জাহাজ সি–১০৬৩। এরপর ২০০৫ সালের ২ আগস্ট ডুবে যায় এমভি ফরচুন। এভাবে গত ৫০ বছর ধরে বন্দরের বহির্নোঙর ও আশপাশের এলাকায় অন্তত ২৪টি জাহাজ ডুবন্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এর মধ্যে কিছু জাহাজ দুই থেকে তিন দশকের বেশি সময় ধরে পানির নিচে।
বিশেষজ্ঞ ও বন্দর ব্যবহারকারীরা আশঙ্কা করছেন, জাহাজগুলো ডুবে আছে বহুদিন ধরে। এগুলো এখন জাহাজ চলাচলের জন্য কোন সমস্যা না করলেও ভবিষ্যতেও যে সমস্যা করবে না তা বলা যাচ্ছে না। যে কোনো সময় এসব জাহাজ বড় ধরনের দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে বলেও তারা মন্তব্য করেন।

জানা গেছে, রেক ডুবে থাকার বিষয়টি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে ওয়ার্ল্ড হাইড্রোগ্রাফি অর্গানাইজেশনকে জানাতে হয়। তারা ডুবে থাকা র‌্যাকগুলো ম্যাপে প্রদর্শন করে। চট্টগ্রাম বন্দরে ২৪টি রেক ডুবে থাকার বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবে ম্যাপে রয়েছে। এখানে আসা যে কোনো জাহাজের ক্যাপ্টেন সেই ম্যাপ দেখে থাকেন। একটি বন্দরে এতোগুলো রেক ডুবে থাকলে সেই বন্দরকে নিরাপদ বন্দর হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। অনেক জাহাজ এই ধরনের বন্দরে আসতেও চায় না। আন্তর্জাতিকভাবে এটি বন্দরের গুডউইল নষ্ট করছে বলেও বন্দরের ওই কর্মকর্তা স্বীকার করেন।
বন্দর ব্যবহারকারীরা বলেছেন, এসব ডুবে যাওয়া জাহাজ এখন হয়তো তেমন বাধা তৈরি করছে না, কিন্তু ভবিষ্যতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। ২০২১ সালের ১৩ জুলাই হাতিয়ার কাছে ডুবে থাকা একটি পুরনো জাহাজের সঙ্গে ধাক্কা লেগে এমভি হ্যাং গ্যাং–১ নামে একটি লাইটারেজ জাহাজ ডুবে যায়। যদি কোন জ্বালানি তেলবাহী জাহাজ এই ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হয় তাহলে বড় বিপর্যয় হবে বলেও তারা মন্তব্য করেন।
ডুবে থাকা জাহাজগুলো বন্দরের জন্য হুমকি ছাড়াও আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

গত বছরের আগস্ট মাসে কর্ণফুলী নদীতে প্রায় ১০০ বছর আগে ডুবে যাওয়া একটি জাহাজ সফলভাবে উত্তোলন করা হয়। বেসরকারি সেলভেজ কোম্পানি ওই জাহাজটির বিভিন্ন অংশ উত্তোলন করে। বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজেদের পাশাপাশি বেসরকারি কোম্পানিগুলোকে জাহাজগুলো উদ্ধারের জন্য দায়িত্ব দিলে এগুলো উঠিয়ে আনা সম্ভব হতো বলেও তারা মন্তব্য করেছেন।
বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দরের মতো আন্তর্জাতিক মানের একটি বন্দরের জন্য ডুবন্ত রেক থাকা কোনোভাবেই মর্যাদাকর নয়। নিরাপদ নৌপথ নিশ্চিত করা, আন্তর্জাতিক মহলে বন্দরের ভাবমূর্তি বাড়ানো এবং সম্ভাব্য দুর্ঘটনা প্রতিরোধে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া এখন সময়ের দাবি। নইলে একটি ছোট্ট দুর্ঘটনা পুরো বন্দরের কার্যক্রম স্থবির করে দিতে পারে বলে মন্তব্য করে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এর প্রভাব জাতীয় অর্থনীতিতেও পড়বে।
চট্টগ্রাম বন্দর দেশের অর্থনীতির প্রাণভোমরা। এ বন্দর ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা কোনো কারণে পিছিয়ে পড়লে দেশের অর্থনীতিও মুখ থুবড়ে পড়বে। কাজেই বন্দরকে সচল ও নিরাপদ রাখার সব ধরনের প্রচেষ্টা জারি রাখতে হবে।