সুপ্রভাত ডেস্ক »
দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে চীন ও ভারতের মধ্যে প্রতিযোগিতা এখন বাড়ছে। বন্ধুপ্রতিম হিসেবে দুই দেশের সঙ্গেই সুসম্পর্ক বজায় রেখেছে বাংলাদেশ।
ভারতের সঙ্গে ৭ বিলিয়ন ডলারের তিনটি লাইন অফ ক্রেডিট (এলওসি) এরই মধ্যে বিদ্যমান। এগুলোর অর্থছাড় খুবই কম। ফলে ভারতের এখনই বড় অংকের টাকা নিয়ে এগিয়ে আসার সম্ভাবনা নেই। একটিই হতে পারে যেসব লাইন অব ক্রেডিট আছে, সেগুলো যাতে তাড়াতাড়ি ছাড় করানো যায়।
ভারতের কাছ থেকে বড় কোনো অর্থায়নের সম্ভাবনা না থাকায় বিদ্যমান ঋণ চুক্তিগুলোর শর্ত শিথিলের প্রয়াস চালাতে পারে বাংলাদেশ। আর প্রধানমন্ত্রী চীনে যাওয়ার আগে ভারত সফর করাটা নয়াদিল্লির জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বড় একটি আশ্বাসও।
চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরটা হবে নয়াদিল্লিতে। ২১ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লি যাবেন। আর পরদিন দিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে অনুষ্ঠিত হবে দুই প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক বৈঠক।
এর আগে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠক হয়েছিল। দুই বছর পর দিল্লিতে দুই নিকট প্রতিবেশী দেশের প্রধানমন্ত্রীরা আবার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসছেন।
এই সফরে ভারতের ঋণচুক্তি বাস্তবায়নে গতি আনতে নতুন রূপরেখা চুক্তি, বাংলাদেশে যেকোনো পরিস্থিতিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য এমওইউর মতো বিষয়গুলো বিবেচনায় রয়েছে। এ ছাড়া অর্থনৈতিক সহযোগিতা, বাণিজ্য, সংযোগ, জ্বালানি, সীমান্ত হত্যা, প্রতিরক্ষা, নতুন প্রযুক্তিসহ নানা বিষয়ে শীর্ষ বৈঠকে আলোচনা হতে পারে।
মূলত গত দেড় দশকের ধারাবাহিকতায় ভবিষ্যতে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এগিয়ে নিতে রাজনৈতিক অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত হবে দুই প্রধানমন্ত্রীর এবারের শীর্ষ বৈঠকে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের আলোচনায় নানাভাবে চীনের প্রসঙ্গ আসছে। ফলে বাংলাদেশকে প্রায়ই ভারসাম্যের চ্যালেঞ্জ নিয়ে এগোতে হচ্ছে।
ভারত থেকে দেশে ফেরার কিছুদিনের মধ্যেই আগামী মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে চীন সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। ভারত ও চীন সফরের সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী ৯-১২ জুলাই এ সফর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পাশাপাশি তিনি দেশটির প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে আলোচনা করবেন।
ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, চীন এরই মধ্যে তিস্তা প্রকল্পে বিনিয়োগে বেশ কয়েকবার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ প্রকল্প নিয়ে আলোচনা ইতিবাচক হলে কয়েক বছরের জন্য ৫ থেকে ১০ বিলিয়ন ডলারের অর্থায়ন ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তিও হতে পারে দেশটির সঙ্গে।
সরকারের উন্নয়ন ও পরিচালন ব্যয় মেটাতে ঋণনির্ভরতা বাড়ছে। আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটেও ঘাটতি ব্যয় মেটাতে দেশী-বিদেশী উৎস থেকে আড়াই লাখ কোটি টাকার বেশি ঋণের পরিকল্পনা করেছে সরকার।
দেশের অর্থনীতিতে ডলার সংকটসহ নানা ধরনের বহির্মুখী চাপ রয়েছে। তাই বড় প্রকল্পের অর্থায়ন ও বাজেট সহায়তার জন্য এখন আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর ওপরও নির্ভরতা বাড়ছে। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ভারত ও চীন সফরের সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশ দুটি থেকে বড় ধরনের অর্থায়ন প্রতিশ্রুতিরও প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ।