একুশে পদকপ্রাপ্ত সুফি মিজানের স্বাক্ষর
জাল করে ৫৭ কোটি টাকা দাবি
সুপ্রভাত রিপোর্ট :
জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে আদালতকে ভুয়া চিকিৎসা সনদ দেখিয়ে সম্প্রতি ৬০ কোটি টাকা চাঁদাবাজির একটি মামলায় জামিন পেলেও অঘটন যেন পিছু ছাড়ছে না ‘বাংলাদেশ জাতীয় বঙ্গলীগ’র প্রেসিডেন্ট শওকত হাসান মিয়ার।
এবার সমাজসেবায় একুশে পদকপ্রাপ্ত ও ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস (ইউআইটিএস) বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এর বোর্ড অব ট্রাস্টিজ এবং পিএইচপি ফ্যামিলি’র চেয়ারম্যান সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের স্বাক্ষর জাল করে ৫৭ কোটি টাকা দাবির অন্য একটি মামলায় শওকতের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
বুধবার দুপুরে ঢাকার সিএমএম আদালতের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. তোফাজ্জল হোসেন ওই মামলার আসামি শওকতের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর তদন্ত প্রতিবেদন (অভিযোগ পত্র) আমলে নিয়ে এই পরোয়ানা জারি করেন। আদালতে ইউআইটিএস’র পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া, মিজানুর রহমান মামুন ও খন্দকার গোলাম কিবরিয়া জুবায়ের প্রমুখ। অভিযুক্ত শওকত হাসান মিয়াÑঅ্যাসার্ট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও রাজধানীর বারিধারায় অবস্থিত বহুতল জামালপুর টাওয়ারের মালিক।
অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া বলেন, শওকত হাসান মিয়া বাদী হয়ে ইউআইটিএস বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। সুফি মিজানের স্বাক্ষর জাল করে স্বাক্ষীবিহীন একটি ভুয়া ও জাল বাড়ী ভাড়া চুক্তি তৈরি করে প্রায় ৫৭ কোটি টাকা ইউআইটিএস কর্তৃপক্ষের কাছে দাবী করেন তিনি। পরে ইউআইটিএস কর্তৃপক্ষ ওই জাল দলিল চ্যালেঞ্জ করে ঢাকার সিএমএম আদালতে গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর একটি মামলা দায়ের করে। ঢাকার সিএমএম আদালতের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. তোফাজ্জল হোসেন দুটি মামলার প্রাথমিক শুনানি শেষে ঘটনা যাচাইয়ের জন্য পিবিআইকে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। পরে পিবিআইর অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা মো. ফারুক হোসেন ১৪ জুন বঙ্গলীগের প্রেসিডেন্ট শওকত হাসান মিয়ার দায়ের করা মামলায় বর্ণিত অভিযোগটি ভিত্তিহীন মর্মে ইউআইটিএস বোর্ড অব ট্রাস্টিজ ও পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যানের পক্ষে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। অন্যদিকে শওকত হাসান মিয়ার বিরুদ্ধে ইউআইটিএস কর্তৃপক্ষের দায়ের করা সিআর মামলায় বর্ণিত অভিযোগের সত্যতা রয়েছে মর্মে শওকতের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন আদালতে। বুধবার সিএমএম আদালতের হাকিম মো. তোফাজ্জল হোসেন পিবিআই কর্তৃক দাখিলকৃত ওই তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখিতÑএকুশে পদকপ্রাপ্ত সুফি মিজানের স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া ও জাল বাড়ী ভাড়া চুক্তির দলিল তৈরি করে ৫৭ কোটি টাকা দাবীর অভিযোগ আমলে নিয়ে আসামী শওকত হাসান মিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন।
আইনজীবী মান্নান ভূঁইয়া জানান, শওকত হাসান মিয়ার বিরুদ্ধে কেবল এই ৫৭ কোটি টাকা চাঁদা দাবির মামলাই নয়Ñরাজধানীর ভাটারায় অবস্থিত ‘ইউআইটিএস’র উপাচার্যকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ৬০ কোটি টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগও রয়েছে। চলতি বছরের গত ২ জানুয়ারি ভাটারা থানায় এ বিষয়ে মামলা দায়ের করেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারী মো. মোস্তফা কামাল। ওই মামলায় গত ৮ জানুয়ারি উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিন নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যান শওকত হাসান। আদালত তাকে ছয় সপ্তাহের জামিন দিয়েছিলেন। কিন্তু জামিনের মেয়াদ শেষ হলেও উচ্চ আদালতের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিম্নআদালতে আত্মসমর্পণ করেননি। পাঁচ মাস পর গত ২৭ জুলাই ঢাকার সিএমএম আদালতে শওকত হাসান মিয়া গুরুতর অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে আত্মসমর্পণপূর্বক জামিনের আবেদন করেন। অসুস্থতার সমর্থনে কোনো ডকুমেন্ট দেখাতে না পারায় ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বাকী বিল্লাহ জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। গত ১২ আগস্ট শওকতের আইনজীবী মাধ্যমে ঢাকার পশ্চিম রামপুরার ডেলটা স্পেশালাইজড হসপিটালের প্যাডে দেওয়া এক ‘চিকিৎসা সনদ’ ব্যবহার করে আদালতে জামিন আবেদন করেন। প্রাপ্তনথি পর্যালোচনা করে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শারাফুজ্জামান আনসারীর আদালত সে দিনই তাকে জামিন দেন। কিন্তু আদালতকে যে চিকিৎসা সনদপত্র দেখিয়ে শওকত মিয়া জামিন নিয়েছেন তার পুরোটাই ছিলো জাল। ইতোমধ্যে মামলার বাদী শওকত হাসানের ওই জামিন আদেশ বাতিলের আবেদন করেছেন আদালতে। বৃহস্পতিবার (আজ) এই আবেদনের শুনানির কথা রয়েছে। মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছে রাজধানীর ভাটারা থানা পুলিশ।
অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া বলেন, সেনাবাহিনীর কোর্ট মার্শালের বিচারে চাকরিচ্যুত সিপাহী হয়েও অবসরপ্রাপ্ত মেজর পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন প্রতারণা করে আসছেন শওকত হাসান মিয়া। যার তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। শওকত হাসান মিয়া তার নিজ জেলা জামালপুর ও ঢাকায় বহু অপকর্ম করার কারণে সংক্ষব্ধদের আবেদনের প্রেক্ষিতে দুদক (দুর্নীতি দমন কমিশন) তার বরাবর নোটিশ দিয়েছেন। এছাড়াও গুলশান থানা পুলিশ গত ২৩ ডিসেম্বর ইউআইটিএস-এর উপাচার্য ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনেককে হত্যার হুমকি দেয়ায় শওকত হাসান মিয়া ও তার সশস্ত্র ক্যাডারদের বিরুদ্ধে দ-বিধির ৫০৬ ধারায় তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন আকারে ঢাকার সিএমএম আদালতে একটি প্রসিকিউশন দাখিল করেন, যা বর্তমানে বিচারাধীন বলেও জানান তিনি।