‘চট্টগ্রাম সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নিদর্শন। ১৭২০ সাল থেকে মোহন্ত ও সেবায়েতদের মাধ্যমে আকাশবৃত্তি অবলম্বনে তুলসীধাম পরিচালিত হচ্ছে। এই ঐতিহ্য সমুন্নত রাখতে হবে। ধর্মে আধ্যাত্মিক যে বিষয়টি আছে, সেখানে সকল ধর্মীয় সম্মিলন ঘটেছে। এই সম্মিলনের স্থান হচ্ছে ¯্রষ্টার প্রতি সর্বোচ্চ আস্থা। ¯্রষ্টার সাথে মানবাত্মার যে সম্মিলন এবং এর মাধ্যমে মানুষের মধ্যে যে পবিত্র সম্পর্ক সৃষ্টি হয়, সেটাকে গুরুত্ব দিতে হবে। ¯্রষ্টার ওপর নির্ভার হয়ে সবকিছু সমর্পণ করতে পারলে সব দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তি মিলবে, মোক্ষলাভ হবে।’
শনিবার সকাল ১১টায় তুলসীধাম ও অদ্বৈত-অচ্যুত ধামের মোহন্ত শ্রীমৎ দেবদীপ পুরী মহারাজের পৌরহিত্যে চারদিনব্যাপী উৎসব উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নন্দনকানন তুলসীধামে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের রাসলীলা উৎসবে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এসব কথা বলেন।
শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, একে অপরের ধর্মকে শ্রদ্ধা করবো, একে অপরের উৎসবে শামিল হবো। ধর্মতত্ত্বের দিক থেকে এই ঐক্য ধরে রাখতে হবে। সকল ধর্মের মধ্যে যে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ-এটা দেশের গণতন্ত্র, সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি-সবকিছুর পূর্বশর্ত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে বদ্ধপরিকর। বঙ্গবন্ধু কন্যার হাতেই বাংলাদেশ নিরাপদ। প্রত্যেক ধর্মের প্রতি তার রয়েছে আস্থা-শ্রদ্ধা। শিক্ষা উপমন্ত্রী রাসলীলার শিক্ষা নিয়ে সবাইকে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে সংবর্ধেয় অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান, চসিক কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী, শৈবাল দাশ সুমন, নুর মোস্তফা টিনু ও রুমকী সেনগুপ্তা। অনুপম দেবনাথ পাভেলের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন যোগেশ্বর চৌধুরী, লায়ন ডা. দুলাল দাশ, তুলসীধাম পরিচালনা পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক স্বপন চৌধুরী, রাসলীলা উৎসব উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি সোনারাম ধর, সাধারণ সম্পাদক হরিশংকর ধর প্রমুখ।
জেলা পরিষদের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম বলেন, রাস হচ্ছে ভক্ত এবং ভগবানের মিলন উৎসব। জীবাত্মার সাথে পরমাত্মার মিলন। ধর্ম নিয়ে যারা বাড়াবাড়ি করেছে, তারা ধ্বংস হয়ে গেছে। সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা করাই আমাদের মূল শিক্ষা। জাতির জনকের সংবিধানের মূল নীতির একটি ছিল-ধর্ম নিরপেক্ষতা। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে মানুষে মানুষে ভালোবাসার বন্ধন সৃষ্টি করার শিক্ষা এই রাসোৎসব থেকেই পাওয়া যায়। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে দেশ থাকলে সবাই নিরাপদ থাকবে। সব সম্প্রদায়ের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে আন্তরিকভাবে কাজ করবো। তুলসীধামের চলমান কর্মযজ্ঞে তিনি সবাইকে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানান।
উদ্বোধনী দিবসে রাসতত্ত্ব বিষয়ে আলোচনা করেন সাহিত্য ও সংস্কৃতি সমীক্ষক শ্রী সুদর্শন চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘রাস’ এসেছে ‘রস’ থেকে। ‘রস’ মানে আনন্দ, দিব্য অনুভূতি, দিব্য প্রেম। প্রেমের মধ্যদিয়ে ভগবানেরই জয়গান গাই। এ প্রেম আমাদের স্বর্গীয় আনন্দ দেয়। এদিন তুলসীধামে পূজার্চনা, অমিত সেনগুপ্ত ও সনাতন দাশের গীতাপাঠ, অদ্বৈত-অচ্যুত শিল্পীগোষ্ঠীর পরিবেশনায় ভজন, গীতিআলেখ্য ‘শ্রীশ্রী দশমহাবিদ্যা’, প্রবীণ ভক্ত সংবর্ধনা ও বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবার আয়োজন করা হয়। রাসযাত্রা উৎসব উপলক্ষে প্রকাশিত ‘তপোবন’ ম্যাগাজিনের মোড়ক উন্মোচন শেষে অতিথিরা তুলসীধামের উন্নয়নে সম্পৃক্ত গুণিজন ও প্রয়াতদের পরিবারকে সংবর্ধনা স্মারক তুলে দেন। বিজ্ঞপ্তি