সুপ্রভাত ডেস্ক »
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে পুলিশের গুলিতে ১৭ বছরের এক আলজেরিয়-বংশোদ্ভূত তরুণ নিহত হবার পর শহর জুড়ে দু’রাত ধরে সহিংসতা চলছে। আহত হয়েছে ১৭০ জন পুলিশ, গ্রেফতার করা হয়েছে ১৮০ জন লোককে।
ঘটনার বিবরণে বলা হয়, প্যারিসের পশ্চিমদিকে নান্তেরে এলাকায় নাহেল এম নামের ওই তরুণ মঙ্গলবার গাড়ি চালিয়ে যাবার সময় ট্রাফিক পুলিশ তাকে থামতে বলে। সে না থামলে পুলিশ খুব কাছে থেকে তাকে গুলি করে।
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, একজন পুলিশ অফিসার একটি গাড়ির চালকের দিকে বন্দুক তাক করে আছে। এর পর একটি গুলির শব্দ শোনা যায় এবং তারপর গাড়িটি থেমে যায়।
বুকে গুলিবিদ্ধ নাহেলকে জরুরি চিকিৎসা দেয়া হলেও বাঁচানো যায়নি। গুলিবর্ষণকারী অফিসারটিকে হত্যার অভিযোগে আটক করা হয়েছে।
ফরাসী মিডিয়ায় বলা হচ্ছে, পুলিশ প্রথমে ইঙ্গিত দিয়েছিল যে তরুণটি তাদের দিকেই গাড়িটি চালিয়ে দিয়ে পুলিশদের আহত করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও দেখে ধারণা হয় যে প্রকৃত ঘটনা ছিল ভিন্ন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার রাত থেকেই প্যারিস ও অন্য আরো কয়েকটি শহরে বিক্ষোভ ও সহিংসতা শুরু হয়।
গাড়ি ও বাসস্টপে আগুন দেয়া হয়, কিছু রাস্তায় ব্যারিকেড দেয়া হয়, আক্রান্ত হয় পুলিশ স্টেশনও। রায়ট পুলিশ বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে দিতে টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে।
পর পর দুই রাত ধরে চলা সহিংসতায় ১৭০ জন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছে, গ্রেফতার করা হয়েছে ১৮০ ব্যক্তিকে।
ফরাসী প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রঁ এ ব্যাপারে একটি সংকটকালীন বৈঠক করেছেন এবং রাস্তায় সহিংসতাকে “অগ্রহণযোগ্য” বলে আখ্যায়িত করে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইতোমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে যে ফ্রান্স জুড়ে বিক্ষোভ সামাল দিতে ৪০,০০০ পুলিশ মোতায়েন করা হবে।
রয়টার্স বার্তা সংস্থা জানায়, নিহত নাহেল একটি ফরাসী-আলজেরিয়ান পরিবারের সন্তান।
তার মা মুনিয়া সংবাদমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাতকারে বলেছেন – “সে সকাল বেলাও বলছিল ‘মা আমি তোমাকে ভালোবাসি’, তার পর কাজে যাই, এর এক ঘন্টা পর আমি একটা ফোন পাই – আমাকে বলা হয় আমার ছেলেকে গুলি করা হয়েছে।”
ফরাসী টিভিতে বৃহস্পতিবার দেখানো হয়, নান্তেরেতে নাহেলের হত্যার প্রতিবাদে মিছিল বেরিয়েছে এবং তাতে এর বিচার দাবি করে শ্লোগান দেয়া হচ্ছে। মিছিলের পুরোভাগে ছিলেন নাহেলের মা।
রয়টার্স বলছে, ২০১৭ সাল থেকে ট্রাফিক স্টপে পুলিশের গুলিতে যত জন নিহত হয়েছে তার বেশিরভাগই কৃষ্ণাঙ্গ বা আরব।
এ বছর ফ্রান্সে ট্রাফিক স্টপে পুলিশের গুলিতে মৃত্যুর এটা দ্বিতীয় ঘটনা। গত বছর ফ্রান্সে এভাবে রেকর্ডসংখ্যক মোট ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সূত্র : বিবিসি বাংলা