সুপ্রভাত ডেস্ক »
আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন নিয়ে জামায়াতে ইসলামী কোনো শঙ্কা দেখে না বলে মন্তব্য করেছেন দলটির নায়েবে আমির সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের।
তিনি বলেছেন, যারা সংস্কার বাস্তবায়নে বাধা দিচ্ছেন, অথবা সংস্কার বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে যে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে, কোনো কারণে যদি নির্বাচন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাদেরকে এর দায়িত্ব নিয়ে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে দুবাই হয়ে এমিরেটসের একটি ফ্লাইটে মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন তিনি। এরপর সেখানে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন নিয়ে আমরা কোনো শঙ্কা দেখি না। কিন্তু ফেব্রুয়ারির নির্বাচন নিয়ে কতিপয় বিষয়ে আমাদের সমাধান হওয়া অত্যন্ত জরুরি। প্রধান উপদেষ্টাসহ নিউইয়র্ক সফরকালে যেহেতু অনেক উপদেষ্টা ছিলেন, আমরা সেখানে সবাইকে বলেছি ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনটা হয়ে যাওয়া দরকার। তবে কোনো নির্বাচন সমস্যা সমাধান দেবে না।
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ২০২৪, ২০১৮, ২০১৪ সালেও তো নির্বাচন হয়েছে নাকি? এসব নির্বাচন কি দেশের সমস্যা বাড়াইছে না কমাইছে? নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হওয়া উচিত— কারণ একটি গণতান্ত্রিক, পিপলস রিপ্রেজেন্টেটিভ গভর্নমেন্ট আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু অতীত অভিজ্ঞতা বলে, একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, জনগণের অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচনই সমস্যার সমাধান। এই নির্বাচনের জন্য কতিপয় বিষয়ে অত্যন্ত দ্রুত ও দৃঢ়তার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
তাহের বলেন, জুলাই সনদসহ আমরা কতিপয় বিষয়ে রিফর্ম বা সংস্কার করেছি। এটা আরও তিন মাস আগে হয়ে যেতে পারত। সব দল নীতিগতভাবে একমত হয়েছে, তারপরও এটা বাস্তবায়নে সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে এইভাবে, সেইভাবে।
তিনি বলেন, এ রকম যদি ষড়যন্ত্র চলে আর সংস্কার যদি বাস্তবায়ন না করে, তাহলে তো সবকিছুই প্রশ্নবোধক হয়ে যাবে। এজন্য ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে হবে। তার আগে খুবই অল্প সময়ের ব্যবধানে সংস্কারের ব্যাপারে যে ঐকমত্য হয়েছে, তার আইনি ভিত্তি দিয়ে সংস্কারের ভিত্তিতেই নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। এটা খুবই পরিষ্কার।
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদান ও যুক্তরাষ্ট্র সফর সম্পর্কে তাহের বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেছি। এখানে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন ছিল মূল। এটা সব দেশের প্রধানদের সম্মেলন। তবে বাংলাদেশই প্রথম রাষ্ট্র যেখানে সরকার প্রধানের সঙ্গে সরকারের নয়, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এজন্য তিনি প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, সারা বিশ্বে এটা এবার প্রতিফলিত হয়েছে যে, রাষ্ট্রের বড় বড় সমস্যায়, সমাধানে, বড় ইস্যুতে বাংলাদেশ জাতিগতভাবে ঐক্যবদ্ধ। আমরাও সেটা তুলে ধরেছি। আমরা ইনভেস্টমেন্ট ফোরামে অংশ নিয়েছি। সেখানে কথা বলেছি। ফরেন মিনিস্টার্স মিটিংয়ে অংশ নিয়েছি। সেখানে আমি বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছি। এনআরবি বা নন রেসিডেন্স বাংলাদেশের একটি প্রোগ্রামে প্রধান উপদেষ্টাসহ আমরা সফরসঙ্গী তিন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেছি। আমেরিকাসহ আশপাশের দেশের বাংলাদেশি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও এতে অংশগ্রহণ করেন। তাদের ব্যাপারে আমরা কী চিন্তা করি, সেটা নিয়ে কথা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রবাসীদের ভোটের অধিকারের ব্যাপারে কথা হয়েছে। এই দাবিটা জামায়াতে ইসলামীই প্রথম করেছে, সরকারও নীতিগতভাবে একমত হয়েছে। আমি বলেছি, এখানে সহযোগিতা করার জন্য। জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে তারা ভোটার হবেন এবং ভোট দিতে পারবেন।
তাহের বলেন, আমি বলেছি ন্যাশনাল আইডি কার্ড করতে যদি কিছুটা জটিলতা হয় বা সময় লেগে যায়, তাহলে আরও কোনো সংক্ষিপ্ত তথ্য দিয়ে যেটা দিয়ে প্রমাণ করা সম্ভব যে তিনি বাংলাদেশের নাগরিক সেটাই যথেষ্ট। আর পাসপোর্ট তো আছেই। অন্য কোনো কার্ড ইস্যু করে হলেও সেটা সম্ভব। যেভাবেই হোক, এবার যেন প্রবাসীরা পরিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পারে, ব্যাপারটি আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করছি।
এক প্রশ্নের জবাবে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ এ নেতা বলেন, আমি চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যাইনি। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়েছি। এরপর শিকাগোতে গিয়েছি। সেখানে আমার মেয়ে পড়াশোনা করে। তার সঙ্গে দেখা করেছি।
যুক্তরাষ্ট্রে থাকতেই একটি খবর ছড়ায় যে আপনি ভারত সফরে গেছেন। ভারতের সেনা প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। অনেকেই বলছেন, আপনি চিকিৎসার জন্য গেছেন— এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাহের বলেন, এসব গুজব। আজকাল অনেক কিছু দেখতে হচ্ছে। এই গুজবের মধ্যেই একটা নাচ দেখলাম। সবার প্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে নাচছেন প্রধান উপদেষ্টা। দেখলাম ভালোই নাচছেন। এখন এগুলো কী? গুজব? এগুলো এআই দিয়ে তৈরি ন্যক্কারজনক কাজ। মানুষ এ ধরনের বাজে জিনিস, চরিত্র হননের অপচেষ্টা এখন বোঝে।
তিন দলের নেতৃবৃন্দকে সফরসঙ্গী করা নিয়ে অন্য দলের পক্ষ থেকে বৈষম্যের অভিযোগ তোলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তাহের বলেন, তাদের অভিযোগ আমার কানেও আসছে। সব দলের প্রতিনিধি নিয়ে যেতে পারলে ভালো হতো বলে আমি মনে করি।
এ সময় বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন- সংগঠনের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট মুহাম্মাদ শাহজাহান, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ এবং কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বহু নেতাকর্মী এ সময় তাকে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে ফুলের তোড়া দিয়ে সংবর্ধনা জানান।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দেওয়ার উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে গত ২২ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকা ত্যাগ করেছিলেন ডা. তাহের।