চট্টগ্রাম নগরে আগুন নেভাতে পানির উৎস হিসেবে ১৭৪টি ফায়ার হাইড্রেন্ট বা অগ্নিনির্বাপণ কাজে ব্যবহৃত বিশেষ পানি কল স্থাপন করেছিল ওয়াসা। ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৪ কোটি ১০ লাখ টাকা খরচ করে এসব হাইড্রেন্ট বসানো হয়। কিন্তু আগুন নেভাতে একটিও ব্যবহার করছে না ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। এমনকি হাইড্রেন্টগুলো এখনো বুঝে নেয়নি ফায়ার সার্ভিস।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, ফায়ার সার্ভিস ও ওয়াসা—এ দুই সংস্থার সমন্বয়হীনতা, দায়িত্বহীনতা আর পরস্পরকে দোষ চাপানোর কারণে এগুলো বছরের পর বছর ধুলায় পড়ে আছে। এই বিনিয়োগ কার্যত অপচয়ে পরিণত হয়েছে।
অথচ গত ১০ মাসে চট্টগ্রাম নগরে ১২৮টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আগুন নেভাতে গিয়ে পানির অভাবে বেগ পেতে হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের। অন্যদিকে বিভিন্ন এলাকায় ১৭৪টি ফায়ার হাইড্রেন্ট অচল পড়ে আছে।
হাইড্রেন্টগুলো ব্যবহার করা নিয়ে দুই সরকারি সংস্থা দীর্ঘদিন ধরে দুই রকম বক্তব্য দিচ্ছে। কিন্তু ব্যবহার উপযোগী করতে করণীয় ঠিক করছে না। নিচ্ছে না কার্যকর পদক্ষেপ। ফায়ার সার্ভিসের দাবি, হাইড্রেন্টে পানির চাপ মাত্র ১ বার (পানির চাপ মাপার পরিমাপক)। কার্যকর অগ্নিনির্বাপণের জন্য ন্যূনতম ৪ থেকে ৭ বার চাপ প্রয়োজন। এ ছাড়া হোসপাইপ সংযুক্ত করার ব্যবস্থাও রাখা হয়নি। এ জন্য প্রয়োজনীয় অ্যাডাপ্টর বা কাপলিং না থাকায় হাইড্রেন্টগুলো ব্যবহার অনুপযোগী।
ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক বলেন, ‘হাইড্রেন্টগুলো ব্যবহারযোগ্য নয়। ওয়াসা এখানে শুভংকরের ফাঁকি দিয়েছে। পানি নেই, চাপ নেই। নির্মাণের সময় আমাদের মতামত নেওয়া হয়নি। এ কারণে বুঝে নিচ্ছি না।’
অন্যদিকে ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী দাবি করেন, হাইড্রেন্ট বসানোর সময় ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তাদের প্রতিনিধি এসে পরীক্ষা করেছেন। অন্যদিকে অ্যাডাপ্টর বা কাপলিং তৈরি করতে ৫-৭ হাজার টাকার বেশি লাগবে না, তাদেরই করতে হবে। আর পানির চাপ ৪ বার দেওয়া সম্ভব নয়, নিজেদের পাম্প ব্যবহার করেই চাপ বাড়াতে হবে।
শহরের প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডে একসময় একাধিক পুকুর, দিঘি ছিল। পুকুর-দিঘির নামেও অনেক এলাকাকে চেনা যেত। এখন নাম টিকে আছে, কিন্তু পুকুর কিংবা দিঘি নেই। ১৯৯১ সালে চট্টগ্রামের জেলা মৎস্য বিভাগের জরিপে চট্টগ্রামে ১৯ হাজার ২৫০টি জলাশয় পাওয়া যায়। ২০০৬ ও ২০০৭ সালে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের জরিপে পাওয়া যায়, ৪ হাজার ৫২৩টি জলাশয়।
নগরে এভাবে পানির উৎস কমে আসায় অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতি বাড়ছে বলে মনে করছে ফায়ার সার্ভিস। ফায়ার সার্ভিসের হিসাবে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত—১০ মাসে ১২৮টি অগ্নিকাণ্ডে ২৬ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মে ও সেপ্টেম্বর মাসে সর্বোচ্চ ১৭টি করে ৩৪ টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। মার্চ মাসে সবচেয়ে কম ৫টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
দুই সংস্থার সমন্বয়ের অভাবে হাইড্রেন্টগুলো ব্যবহার করা যাচ্ছে না বলে মনে করেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদের ডিন মুহাম্মদ রাশিদুল হাসান।
দুটি সরকারি ও সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের রশি টানাটানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নগরবাসী তথা দেশ। তাই এ বিষয়ে সরকারি উদ্যোগই বাধ্য করতে পারে দুই সংস্থাকে একযোগে কাজ করতে।
এ মুহূর্তের সংবাদ


















































