২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৪ কোটি ১০ লাখ টাকা খরচ করে চট্টগ্রাম নগরে আগুন নেভাতে পানির উৎস হিসেবে ১৭৪টি ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপন করেছিল ওয়াসা। । কিন্তু আগুন নেভানোর কাজে একটিও ব্যবহার করতে পারছে না ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স।
ফায়ার হাইড্রেন্ট বা অগ্নিনির্বাপণকাজে ব্যবহৃত বিশেষ পানিকল ব্যবহার করা নিয়ে দুই সরকারি সংস্থা দুই রকম বক্তব্য দিচ্ছে। ফায়ার সার্ভিস বলছে, হাইড্রেন্টে পানির চাপ কম। এগুলো ব্যবহার করতে ন্যূনতম ৪ থেকে ৭ বার (পানির চাপ মাপার পরিমাপক) বা ৪০ থেকে ৭০ মিটার উঁচুতে তোলার পানির চাপ প্রয়োজন। কিন্তু হাইড্রেন্টে পানির চাপ আছে একবার। এতে টেনেটুনে ১০ মিটার ওপরে ওঠানো সম্ভব। অন্যদিকে হাইড্রেন্টের সঙ্গে হোসপাইপ সংযুক্ত করার ব্যবস্থা রাখা হয়নি। হাইড্রেন্টের সঙ্গে পাইপ সংযুক্ত করতে যে অ্যাডাপ্টর লাগবে, সেটিও নেই।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স চট্টগ্রামের উপপরিচালক অভিযোগ করেছেন, হাইড্রেন্ট বসানোর আগে ওয়াসার পক্ষ থেকে কারিগরি সহযোগিতা চাওয়া হয়নি। বসানোর প্রক্রিয়া যথাযথ হয়নি। পানির চাপ না থাকা ও পাইপ লাগানোর ব্যবস্থা না রাখার কারণে এগুলো ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না। অ্যাডাপ্টর কেনার পেছনে ব্যয়ের সুযোগও ফায়ার সার্ভিসের নেই।
ওয়াসার দুটি পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় এসব ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপন করা হয়েছে। মূলত এ দুটি প্রকল্পে বিনিয়োগকারী দাতা সংস্থার শর্ত পূরণ করতেই ফায়ার হাইড্রেন্টগুলো স্থাপন করা হয়। ২০১৯ সালের শুরুতে ‘চিটাগাং ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড স্যানিটেশন প্রজেক্ট’ এর আওতায় ২৯টি হাইডেন্ট বসানো হয়। পরে ২০২২ ও ২০২৩ সালে ‘কর্ণফুলী ওয়াটার সাপ্লাই প্রজেক্ট’ ফেজ-২ এর আওতায় আরও ১৪৪টি ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপন করা হয়।
ওয়াসার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ২০১৬ সালে ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ প্রকল্পের মাধ্যমে নগরে শুরুতে ৩০টি ফায়ার হাইড্রেন্ট বসানো হয়। ফায়ার সার্ভিসের মতামত নিয়ে ও কয়েক দফা আলোচনা করে এসব হাইড্রেন্ট স্থাপন করা হয়েছিল। নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর সংস্থার কর্মকর্তারা কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখেছেন। সেই ধারাবাহিকতায় পরে আরও ১৪৪টি হাইড্রেন্ট স্থাপন করা হয়েছে।
দুপক্ষের কথা শুনে মনে হচ্ছে তাদের সমন্বয়ের অভাব। এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। শুধুমাত্র সমন্বয়ের অভাবে এত টাকার একটি প্রকল্প কাজে না এসে পড়ে থাকবে সেটি উচিত নয়। ওয়াসা একটি আধুনিক কাজ করেছে। তারা দাবি করছে ফায়ার সার্ভিসের মতামত নিয়েই কাজটি সম্পন্ন করা হয়েছে। আমরা আশা করব দুটি সংস্থা মিলে সমস্যাটির সমাধান বের করবে। দুই সংস্থার সমন্বয়ের অভাবে হাইড্রেন্টগুলো ব্যবহার করা যাচ্ছে না বলে মনে করেন নগর বিশেষজ্ঞরাও। দুই সংস্থাকে একসঙ্গে বসে হাইড্রেন্টগুলো ব্যবহারের উপযোগী করার ওপর গুরুত্ব দেন তারাও।