নিজস্ব প্রতিবেদক »
চট্টগ্রাম নগরে প্রতি ৩ হাজার টনের বেশি প্লাস্টিক-পলিথিন বর্জ্য উৎপাদন হয়, যার মধ্যে সংগৃহীত করা যায় ২৪৯ টন, অসংগৃহীত থাকে প্রায় ১৪০ টন। এসব অসংগৃহীত প্লাস্টিক বর্জ্য জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ। সেই সাথে এসব বর্জ্য কর্ণফুলী নদীতে মিশে মাছসহ বিভিন্ন ধরনের জলজ প্রাণীর মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করছে। ফলে নানা ধরনের রোগ-বালাই সৃষ্টি করছে, একই সাথে পরিবেশের ক্ষতি করছে। এবার সেই মরণঘাতী প্লাস্টিক দিয়ে রাস্তা বানানোর দাবি জানিয়েছেন গবেষকরা।
গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের দুই শিক্ষার্থী পিয়াল বড়ুয়া ও আল আমিন।
সভায় প্রফেসর ড. স্বপন কুমার পালিত তত্ত্বাবধানে একটি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। সেখানে নগরের কোন জায়গায় বেশি প্লাস্টিক-পলিথিন বর্জ্য উৎপাদন, প্লাস্টিক- পলিথিন বর্জ্যরে উৎস, প্লাস্টিক-পলিথিন বর্জ্যরে দূষণের প্রধান কারণ, জনসাধারণের মতামত নিয়ে সমস্যা উত্তরণের উপায়, সর্বশেষ প্লাস্টিক-পলিথিন দিয়ে রাস্তা বানানোর নানা সুবিধা বর্ণনা করা হয়।
প্রবন্ধে প্লাস্টিক-পলিথিন দিয়ে ১ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৩.৫ মিটার প্রস্থের সাথে দুই লেইনের রাস্তা তৈরিতে বাঁচবে ২ লক্ষ ৭৪ হাজার টাকা বলে জানান তারা।
সেখানে দেখানো হয়-
বিটুমিনের সাথে যদি সাড়ে ৭.৫% প্লাস্টিক বা পলিথিন ব্যবহার যায় প্রতি কিলোমিটার রাস্তা তৈরিতে সাড়ে ৪ টন বিটুমিন সঞ্চয় হবে। অর্থাৎ বিটুমিনের জায়গায় সাড়ে ৪ টন প্লাস্টিক ব্যবহার হবে। এতে সাড়ে ৪ টন বিটুমিনের খরচ বেঁচে যাবে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন অনুযায়ী যার বর্তমান মূল্য ২ লক্ষ ৭৪ হাজার দুইশ ৮৬ টাকা।
দেশে প্লাস্টিক রোড নির্মাণের সম্ভাব্যতা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে প্রফেসর ড. স্বপন কুমার পালিত বলেন, আমাদের দেশের কোন স্থাপনা, বিশেষ করে রাস্তাঘাট নির্মাণে জাপান, ভারতসহ বেশ কিছু দেশের সহযোগিতা নেওয়া হয়। দেশের গবেষক ও দেশের প্রযুক্তিকে প্রাধ্যন্য দেওয়া হয় না। তিনি বলেন ভারতে আমার পিএইচডি শেষে প্লাস্টিক রোড গবেষণা নিয়ে মিডিয়ায় খবর ছড়ালে তারা স্বেচ্ছায় আমার থেকে পরামর্শ চেয়ে কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশে সেই ২০১১ সাল থেকে বিভিন্ন ধরনের সেমিনার করা হলেও ফলপ্রসূ হয়নি। তাই সরকার, সেই সাথে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে, আগ্রহ প্রকাশ করতে হবে। দেশের গবেষক, শিক্ষার্থীদেরও কাজে লাগাতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চট্টগ্রামের (ইউএসটিসি) উপাচার্য ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কর্ণফুলী সংকটে পড়লে সংকটে পড়বে চট্টগ্রামের মানুষ, তথা পুরো দেশ। এ নদীকে বাঁচাতে হলে সবার আগে পলিথিনের উৎপাদন সমূলে বন্ধ করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন সরকারের সদিচ্ছা ।
চট্টগ্রামের নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক আলীউর রহমান বলেন, পুরো চট্টগ্রাম মহানগরীর পলিথিন বর্জ্য কর্ণফুলী নদীতে মিশছে। এতে নদীর তলদেশে পলিথিনের বড় স্তর জমেছে। প্লাস্টিক সহজে রিসাইকেলিং করা গেলেও পলিথিন সহজে রিসাইকেলিং করা যায় না। এসব পলিথিন নদী থেকে সাগর পর্যন্ত চলে যাচ্ছে। এতে মাছের প্রজনন নষ্ট হয়ে কর্ণফুলী নদীতে মাছের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, পরিবেশ ফোরাম চট্টগ্রামের সভাপতি অধ্যাপক ইদ্রিস আলী, চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. স্বপন কুমার পালিত, বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরাম চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার দাশ, পরিবেশ সংগঠক মনোজ কুমার দেব প্রমুখ।