নিজস্ব প্রতিনিধি, আনোয়ারা :
অনিয়ম আর দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে আনোয়ারা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। শিক্ষকেরা জিম্মি হয়ে পড়েছেন শিক্ষা কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছে। ভুক্তভোগী শিক্ষকেরা অভিযোগ করেছেন, উৎকোচ ছাড়া কোনো কাজই হয় না এ অফিসে। মিলছে না এর প্রতিকার। ধাপে-ধাপে বাড়ছে তাদের নানা চাহিদাও।
এমন নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে গত ৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকের কাছে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) আশীষ কুমার আচার্য, বারশত ইউনিয়নের পূর্ব বোয়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা দেবী চৌধুরী ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ক্লাস্টার) রঞ্জন ভট্টাচার্য্যর বিরুদ্ধে দুনীতি, স্বজনপ্রীতি ও অর্থ আত্মসাৎ সংক্রান্ত অভিযোগ করেন বারশত ইউনিয়নের পূর্ব বোয়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির পক্ষে সভাপতি ফৌজুল মুবিন চৌধুরী।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, স্কুল কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের যৌথ অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হবার কথা থাকলেও প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের যোগসাজশে প্রধান শিক্ষকদের ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হয়। বিদ্যালয়ের মেনটেনেন্স বাবদ ৪০ হাজার টাকা, ওয়াস ব্লকের নামে ২০ হাজার টাকা, প্রাক-প্রাথমিক বাবদ ১০ হাজার টাকা, বিদ্যালয়ের স্লিপগ্রান্ট উন্নয়ন পরিকল্পনা তহবিল বাবদ ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রতিটি বরাদ্দের অর্থ বিদ্যালয়ের নামীয় অ্যাকাউন্টে জমা হবার কথা থাকলেও শুধুমাত্র বিদ্যালয়ের স্লিপগ্রান্ট উন্নয়ন পরিকল্পনা তহবিলে ৭০ হাজার টাকা ব্যতীত নিয়ম বহির্ভূতভাবে প্রধান শিক্ষিকার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে ওই টাকা জমা হয়। প্রতিটি বরাদ্দের বিপরীতে আলাদা-আলাদা কমিটি গঠনের নিয়ম অনুযায়ী কমিটি গঠন করা হলেও স্কুল ফান্ডে অর্থ জমা হবার পূর্বেই প্রতিটি কমিটির সদস্যের স্বাক্ষর নেয়া হয়। কিন্তু বরাদ্দের টাকা কীভাবে খরচ করা হলো তা কমিটির সদস্যরা জানেন না। অনেক চেষ্টা-তদবির চালিয়ে শিক্ষকের শূন্য আসন পূরণ করা হলেও অভিযুক্তরা পরস্পর যোগসাজশে কমিটিকে অবহিত না করে, নতুন শিক্ষক পদায়ন না করে দুজন শিক্ষকের একজনকে বদলি এবং অপরজনকে ১ বছরের প্রশিক্ষণে প্রেরণ করেন। বর্তমানে শিক্ষকশূন্যতায় লেখাপড়ার ব্যাঘাত ঘটছে। জানা যায়, গত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ সালে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ক্লাস্টার) রঞ্জন ভট্টাচার্য্যরে কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ জানানো হলেও তিনি বরাদ্দকৃত অর্থ বিদ্যালয়ের ফান্ডে জমা প্রদানের নির্দেশ দিলেও পুরানো অর্থবছর শেষে এবং নতুন অর্থবছরেও এ টাকা জমা হয়নি। এছাড়া উপজেলার ১১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধেও নানা অভিযোগ পাওয়া গেলেও কেউ মুখ খুলতে নারাজ।
অভিযোগকারী ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফৌজুল মুবিন চৌধুরী বলেন, আমি বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির পক্ষে জেলা প্রশাসক বরাবর দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অর্থ আত্মসাৎ সংক্রান্ত লিখিত অভিযোগ করি। অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসক কার্যালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো ফলাফল পাওয়া যায়নি। তবে আমাকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালয় থেকে আগামী বুধবার (২৬ আগস্ট) ডাকা হয়েছে। আমি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ, মেডিক্যালে চিকিৎসা শেষে বর্তমানে বাসায় আছি। তাই যেতে পারব না বলেছিলাম। যদি খুব বেশি দরকার হয়, ভিডিওকলে কথা বলব জানিয়েছি।
অভিযোগ বিষয়ে অভিযুক্ত পূর্ব বোয়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা দেবী চৌধুরীকে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফোনে কথা বলা যাবে না। আপনি স্কুলে এসে দেখা করেন।
অন্যদিকে এ অভিযোগের ভিত্তিতে চলতি বছরের ১৮ মার্চ সহকারী কমিশনার (শিক্ষা) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গালিব চৌধুরী তদন্তপূর্বক বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশ দেন। এর প্রেক্ষিতে তিনি আগামী বুধবার (২৬ আগস্ট) উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাঁর কার্যালয়ে দু’পক্ষকে ডেকেছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ জোবায়ের আহমেদ বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। স্কুল পরিচালনা কমিটি ও অভিযুক্তদের আসার জন্য বলা হয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আনোয়ারা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) আশীষ কুমার আচার্যকে মুঠোফোনে কল দিলে তিনি বলেন, ‘আপনি নিশ্চয় মুবিনের বিষয়ে কথা বলবেন! আমার বিরুদ্ধে পত্রিকায় অনেক লিখেছেন, এখান থেকে নিয়ে লিখে দেন। শিক্ষা অফিসার খুবই খারাপ, দুর্নীতি করি, এসব লিখে দেন। এটাই আমার বক্তব্য’।