রতন কুমার তুরী »
=দিন দিন ভয়ংকর রূপ ধারণ করে চলেছে কিশোর অপরাধ। সাম্প্রতিক সময়ে খুন,রাহাজানি,মাদক পাচার এবং ধর্ষণের মত যে সব ঘটনা ঘটেছে তার প্রত্যেকটিতে জড়িয়ে আছে ওঠতি বয়সী কিশোরদের একটি অংশ। অনেক সময় এরা গ্যাং ভিত্তিক অপরাধ করে বেড়ায়। একই বন্ধ-বান্ধবরা মিলে অনেকটা খেলার ছলে এরা প্রথম দিকে খারাপ বড় ভাইদের পাল্লায় পড়ে সিগারেট ধরলেও পরবর্তিতে বড় ভাইরা এদের সুকৌশলে ছিনতাই চুরিতে ব্যবহার করার ফলে এরা আস্তে আস্তে বিপদজ্জনক পরিস্থিতির দিকে পা বাড়ায়।
এসমস্ত কিশোররা অনেক সময় স্কুল কলেজের নাম করে বাইরে বের হলেও এরা স্কুল কলেজে না গিয়ে বড় ভাইদের নির্দেশে ছিনতাই করে বেড়ায। এমন কিশোর অপরাধিদের সংখ্যা কম, কিন্তু এরা এতো বেশি ভয়ংকর যে অনেক সময় এরা খুনের মত ঘটনায়ও জড়িয়ে পড়ে। এদের পিতামাতাদের অনেকেই জানেইনা এরা এমন অপরাধ করে বেড়াচ্ছে। এদের অনেকেই আবার দেশের নামিদামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও লেখাপড়া করে।
প্রকৃতপক্ষে কিশোররা বেশকিছু কারণে অপরাধে জড়িয়ে পড়ে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে-১, পারিবারিক পরিম-লে নৈতিক শিক্ষার ঘাটতি ২. পারিপাশ্বিক পরিবেশ ৩. এবং কিশোর অবস্থায় পিতামাতাদের কিশোর সন্তানদের প্রতি ঔদাসীন্য সর্বোপরি ৪. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমূহে শিক্ষার্থিদের নৈতিকশিক্ষা বিষয়ে পাঠদানে বাধ্যবাধকতা না থাকা।
আমাদের সমাজে শিশুর বেড়ে ওঠাটা অনেকটাই নির্ভর করে পিতামাতার ওপর। পিতামাতা যদি শিশু বয়স হতেই তার সন্তানকে ন্যায় নৈতিকতার শিক্ষা দেয় এবং সমাজের ন্যায় অন্যায়গুলো ভালো করে বোঝাতে সক্ষম হয় তাহলে তারা বড় হয়ে অন্যায় এবং অনৈতিক কাজ থেকে বিরত থাকবে।
এ বিষয়ে পিতামাতাদের বর্তমানে গ্যাং ভিত্তিক কিশোর অপরাধ সম্পর্কেও তাদের উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিতে পারেন এবং এমন অপরাধে জড়িয়ে পড়লে পরিণতি যে ভালো হবে না তাও তাদের সাবধান করে দিতে পারেন। বর্তমানে আমাদের সমাজে অনেক পরিবারেই পারিবারিকভাবে দূর অতীতের মত সন্তানদের নৈতিক শিক্ষার বিষয়টি উপেক্ষিত। অনেক অভিভাবক বুঝতেই পারেনা তাদের সন্তানটি কখন যে কিশোর অপরাধের মত অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। পারিপার্শ্বিকতাও অনেক সময় কিশোরদের অপরাধে জড়াতে উৎসাহ জোগায় এক্ষেত্রে আপনার কিশোর সন্তানটি কী ধরনের পরিবেশে বন্ধুদের সাথে কিংবা অন্য কারো সাথে মেলামেশা করছে তা নিয়তই খোঁজ রাখা দরকার।
অনেক সময় বখাটেদের পাল্লায় পড়ে নেহাতই পরিবেশের কারণে আপনার কিশোরটি অপরাধে জড়িয়ে যেতে পারে।
একটা কথা সবার মনে রাখা দরকার বয়ঃসন্ধিকালে কিশোরদের অনেকেই অনেক সময় অতি উৎসাহী হয়ে অনেক কিছু করে। এসময় কোনটা ভালো কোনটা খারাপ সে বুঝতে পারেনা তাই এই সময়টাতে পিতা মাতার উচিৎ তার কিশোর সন্তানটিকে বিপথগামী হওয়া থেকে রক্ষা করা।
বর্তমানে দেখা যায় যে, অনেক পিতামাতা এবং অভিভাবক তাদের সন্তানদের প্রতি যতœশীল নয়। ছেলে কোথায় যাচ্ছে, কার সাথে মিশছে কিছুই খবর রাখে না ফলে তার কিশোর ছেলেটি তাদেরই দেখভালের অভাবে অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থার উন্নতি চাইলে সকল অভিভাবকদের তাদের সন্তানদের নিয়মিতই খোঁজ খবর নিতে হবে।
প্রয়োজনবোধে তার কিশোর সন্তানটির প্রতি বন্ধুর মত ব্যবহার করতে হবে যাতে সে কোনো কিছুই তাদের থেকে লুকাতে না পারে।
সর্বোপরি কিশোর অপরাধ বন্ধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমূহের সকল শিক্ষককে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা যদি ক্লাসে প্রতিদিন কিশোর অপরাধের কুফল তুলে ধরে ছাত্রদের বোঝান তাহলে কিশোর শিক্ষার্থীরা এথেকে শিক্ষা গ্রহণ করে আর ওপথে পা বাড়াবে না। সবচেয়ে কার্যকরি পদক্ষেপ হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে নৈতিক শিক্ষার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা।
প্রকৃতপক্ষে পরিবার থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পর্যন্ত নৈতিক শিক্ষার বিষয়টা গুরুত্ব দিতে পারলেই সমাজ এবং রাষ্ট্রে কিশোর অপরাধের মত এমন অপরাধগুলো অনেকটাই আয়ত্তে আনা সম্ভব হবে।
লেখক : কলেজ শিক্ষক, প্রাবন্ধিক