প্রশ্নের মুখোমুখি

Unhappy couple having conflict. Young caucasian man and caucasian woman turned away from each other. Concept of misunderstanding, problems, distrust, suspicion. Modern vector style.

জোবায়ের রাজু

সদ্য বিয়ে হয়েছে আসমার। স্বামী হিসেবে সবুজকে অসাধারণ মনে হয়েছে তার কাছে। সবুজ ঢাকা শহরে বড় কোনো এক ফাইভস্টার হোটেলের ম্যানেজার পদে আছে। বিয়ের সম্বন্ধ আসার পর ছেলের এমন জীবিকার গল্প শুনে আসমার বাবা মা দুজনই মেয়েকে এখানে পাত্রস্থ করবেন বলে মনস্থির করলেন। এক শুভদিনে বিয়েটা হয়ে গেল। সবুজেরা আহামরি কোনো ধনী নয়। তবে আসমাদের তুলনায় তাদের পরিবার সচ্ছল। সবুজ বছরখানেক আগে ফাইভস্টার হোটেলের ম্যানেজার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছে। ধীরে-ধীরে সংসারে উন্নতি হবে, এই সত্য মেনে নিয়েছে আসমা। এদিকে আসমার বাবা একজন ফলবিক্রেতা মাত্র।
বিয়েতে আসমার শখ ছিল তার বান্ধবী শান্তা ঢাকা থেকে স্বামী-সন্তান নিয়ে আসবে। আনন্দ-ফূর্তি করবে বিয়েতে। কিন্তু সংসার জীবনের ব্যস্ততার কারণে বান্ধবীর বিয়েতে শান্তা আসতে পারেনি বলে মোবাইলের ওপার থেকে দুঃখপ্রকাশ করা ছাড়া আর কিছু করতে পারেনি।
আসমা তার বিয়ের ছবি শান্তাকে পাঠাতে ভুল করেনি। হোয়াটসঅ্যাপে পাওয়া আসমার বিয়ের ছবিগুলো দেখে শান্তা সঙ্গে-সঙ্গে ফোন করে বলে, ‘তোর জামাই তো সুন্দর। তোদের মানিয়েছে বেশ। দোয়া থাকল তোদের জন।’ শান্তার কল পেয়ে এপার থেকে আসমা খিলখিলিয়ে হাসে। ফাইভস্টার হোটেলে সবুজের ম্যানেজারির চাকরিটা শুনে শান্তা বলল, ‘বাহ, দারুণ তো। তুই ম্যানেজারের বউ।’
বিয়ের এক সপ্তাহ পর সবুজ শহরে চলে যায় তার কর্মস্থলে। নতুন বউকে বাড়িতে রেখে চলে আসতে সবুজের কষ্ট হয়েছে বটে, তবে আসমা ওল্টো সান্ত¡না দিয়ে বলল, ‘আমার জন্য চিন্তা করবেন না। শুধু দোয়া করবেন, যেন আপনার বাবা-মায়ের সেবা করে যেতে পারি।’ আসমার কথাগুলি সবুজকে সন্তুষ্ট করেছে। আজকালকার মেয়েদের বহু দাবি-চাওয়া থাকে স্বামীদের কাছে। এদিক দিয়ে আসমাকে খুবই পরিশীলিত একজন নারী হিসেবে মনে হলো সবুজের।
শহরে গিয়ে রোজ রাতে স্ত্রীকে কল করতে ভুল হয় না সবুজের। দিনে তার ফোন করে বউয়ের খবর নেওয়ার সময় নেই। ম্যানেজারদের যে অনেক ব্যস্ততা। আসমাও স্বামীর ব্যস্ততার কথা কিছুটা আঁচ করতে পারে সবুজের বয়ানে।
২.
বিয়ের আজ একমাস পূর্ণ হল। আগামীকাল সবুজ শহর থেকে ফিরবে। একমাস পর স্বামীকে কাছে পাচ্ছে আসমা। বিকেলে শান্তার কল আসে আসমার কাছে।
‘আসমা, তোর জামাই শহরে কি করে, সত্যি করে বলতো?’
‘ফাইভস্টার হোটেলের ম্যানেজার। কেন রে?’
‘তুই শিওর?’
‘হ্যাঁ। বিয়ের সময় তো এটাই জেনেছি আমরা।’
‘শোন আসমা, আজ আমরা একটা ফাইভস্টার হোটেলে খেতে গিয়েছি। সেই ফাইভস্টার হোটেলের দারোয়ানকে দেখে আমি ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেলাম।’
‘কেন? খুলে বল তো।’
‘মোবাইল খুলে তোর বিয়ের ছবিগুলো বের করলাম। তুই তোর জামাইর যে ছবিগুলো দিয়েছিস আমাকে, ফাইভস্টার হোটেলের সেই দারোয়ান আর তোর জামাই ওই একই লোক।’
‘কি বলছিস?’
‘হ্যাঁ। একটু ভালো করে খোঁজ নিয়ে দেখ তো তোর জামাই কি আসলেই ফাইভস্টার হোটেলের ম্যানেজার! রাখি এখন।’
একি শুনলো আসমা! সবুজ হোটেলের দারোয়ান হতে যাবে কেন? সে তো ম্যানেজার। শান্তার নিশ্চয়ই কোথাও ভুল হচ্ছে।
৩.
রাতে শহর থেকে বাড়ি ফিরে সবুজ। নতুন বউয়ের জন্য যে কত কি নিয়ে এসেছে! কিন্তু আসমার মন ভালো নেই। শান্তা তাকে গতকাল কি শুনিয়েছে! নতুন বউয়ের যে মন ভালো নেই সবুজ তা টের পায়। ভাব করার চেষ্টা করে আসমার সঙ্গে। বেসুরো গলায় গান শোনায়। তবু আসমার মুখে হাসি ফোটে না।
‘তোমার কি মন খারাপ বউ?’
‘একটা সত্যি কথা বলবেন?’
‘বলো, শুনি।’
‘আপনি কি আসলেই ঢাকা শহরের ফাইভস্টার কোনো হোটেলের ম্যানেজার?’
‘এ প্রশ্ন কেন বউ?’
‘জবাব দেন।’
‘ইয়ে মানে… এ কথা জানতে চাইছ কেন? কেউ কিছু বলেছে?’
‘আমার প্রশ্নের জবাব কিন্তু এটা না।’
‘ইয়ে মানে, বিয়র সময় তোমাদের পরিবারকে জানানো হয়েছে যে আমি শহরের ফাইভ স্টার হোটেলের ম্যানেজার। বাস্তবে আসলে তা নয়’
‘আপনার পেশা কি তবে?’
‘ওই ফাইভস্টার হোটেলেই চাকরি করি।’
‘কি চাকরি?’
‘ওই ধরো ছোটখাটো কোনো চাকরি আর কি!’
‘আপনি দারোয়ান, তাই না?’
‘সে কি! তুমি জানলে ক্যামনে?’
আসমা দেখতে পাচ্ছে সবুজের হাত-পা কাঁপছে। যেন কোনো সত্যচাপা দিতে গিয়ে ধরা পড়েছে। শান্তার ফোনের কথাগুলোর সাথে মিল খুঁজে পায় আসমা। একজন দারোয়ানের পেশাকে গোপন রেখে তার সাথে প্রতারণা করা হয়েছে বিয়ের সময়। দারোয়ানি পেশায় নিয়োজিত, এমন পাত্রের কাছে কোনো বাবা মা-ই তাদের মেয়েকে বিয়ে দেবেন না। অথচ সেই গর্হিত কাজটিই সবুজের বাবা-মা আসমাদের সাথে করেছেন।
সবুজ জড়িয়ে ধরে আসমাকে। ক্ষমা চেয়ে বলে, ‘তোমাকে অনেক আগেই আমি দেখেছি আসমা। দেখে পছন্দ হয়েছে। কিন্তু আমার পেশার কথা শুনলে তোমার অভিভাবক তোমাকে আমার হাতে তুলে দেবেন না জানতাম। তাই আমি নিজের একটি কাল্পনিক পেশা সাজিয়ে তোমাকে বিয়ে করেছি। এতে আমার বাবা-মায়ের কোনো দোষ নেই আসমা। তারা তোমাদের সব জানাতে চেয়েছে। বারণ করেছি আমি। তা না হলে তোমাকে পেতাম না। আমাকে মাফ করে দাও আসমা। আমি তোমাকে সত্যি ভালোবাসি। কসম।’
আসমা কাঁদছে।
রাতের পরিবেশ অন্যরকম হয়ে গেল। সবুজ আসমাকে সান্ত¡না দিতে বিড়-বিড় করে কি যেন বলে যাচ্ছে তা স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে না।