প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারক নিয়োগ দেওয়া হোক

বলা হয়ে থাকে, ‘জাস্টিস ডিলেইড ইজ টু জাস্টিস ডিনাইড’। অর্থাৎ ন্যায়বিচারে দেরি করা মানে ন্যায়বিচারকে অস্বীকার করা। আসলে বিচার দ্রুত হওয়া মানেই হলো ন্যায় বিচারের একটি অংশ চরিতার্থ হওয়া। কিন্তু বাংলাদেশে সেটা ঘটে না। এ দেশের মতো বিচারকার্যে এত ধীরগতি বিশ্বের খুব কম দেশেই আছে। স্বয়ং বিচারপতিদের অনেকেই এ বিষয়ে তাঁদের মতামতও প্রদান করেছেন।

চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলার দুর্নীতির মামলার বিচারের জন্য একমাত্র আদালত চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালত। গত ২১ মার্চ এই আদালতের বিচারক মুনসী আবদুল মজিদ কক্সবাজারে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে বদলি হন। এর পর থেকে বিচারকশূন্য আদালতটি।
পত্রিকান্তরে জানা গেছে, আড়াই মাস ধরে বিচারকশূন্য থাকার কারণে দুর্নীতির মামলাগুলোর বিচার থমকে আছে। সরকারি কৌঁসুলিরা বলছেন, এর ফলে শাস্তির আওতায় না আসায় উৎসাহিত হচ্ছেন দুর্নীতিবাজেরা।

বর্তমানে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে ৬০৪ মামলা। এর মধ্যে দুর্নীতির মামলা ৩২৬টি। বাকিগুলো হত্যা, মাদক ও অস্ত্র আইনের।
আদালত সূত্র জানায়, রেলে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক জিএম ইউসুফ আলী মৃধাসহ তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে ১৩টি মামলা করেছে দুদক। এর মধ্যে তিনটি মামলার রায় হয়। বাকি ১০টি মামলা এই আদালতে বিচারাধীন। এর মধ্যে চারটি মামলা শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বিচারকশূন্য হওয়ায় এগুলোর বিচার শেষ করা যাচ্ছে না।

টেকনাফের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির বিরুদ্ধে দুদকের করা ৪৩ লাখ ৪৩ হাজার ৯৯৪ টাকার তথ্য গোপন এবং ৬৬ লাখ ৭০ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের মামলা, তাঁর অনুসারী হিসেবে পরিচিত টেকনাফ উপজেলার নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান জাফর আহমদের বিরুদ্ধে ৪ কোটি ৯০ লাখ ৬৯ হাজার টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের মামলা বিচারাধীন এখানে।

এই আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) কাজী সানোয়ার আহমেদ বলেন, আড়াই মাস ধরে বিচারকশূন্য থাকায় বিচারকাজ থেমে আছে। রেলওয়ের সাবেক জিএম ইউসুফ আলী মৃধাসহ কয়েকজনের দুর্নীতির মামলার বিচার শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এগুলো আর এগোনো যাচ্ছে না। দ্রুত বিচারকের শূন্য পদ পূরণের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে বলা হয়েছে।
বিচারকাজ বিলম্বিত হওয়ার কারণে মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। শারীরিক পরিশ্রমের সঙ্গে যুক্ত হয় অর্থনৈতিক বিষয়টিও। অনেক মামলা আছে যেসব দশকের পর দশক চলে। অনেক সময় দুই-তিন পুরুষ পর্যন্ত চলে মামলা। এভাবে মামলা চালাতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হতে হয় অনেককে।
এ থেকে রেহাই পাওয়ার অন্যতম উপায় হলো, কোর্টে পর্যাপ্ত বিচারক নিয়োগের ব্যব্স্থা করা।