সাইফুল বিন শরীফ »
আমাদের সমাজে শিশু-কিশোর, আবাল-বৃদ্ধ সবাই একসাথে বসবাস করি। সমাজে আমরা যারা বসবাস করি তাদের মধ্যে সবচেয়ে প্রাজ্ঞ ও অভিজ্ঞ হলেন প্রবীণরা। প্রবীণরা দীর্ঘ সময়ে যে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন করেন সে অভিজ্ঞতা থেকে নবীনরা শিক্ষা নিতে পারে প্রতি মুহূর্তে। প্রবীণরা কতোটা পথ পাড়ি দিয়ে নিজের সফলতার পথে এগিয়েছেন সেই কষ্ট কখনো কোনদিন কাউকে বুঝতে দেন না। প্রবীণদের অনুসরণ ও পরামর্শ ব্যতীত সফল হওয়া অসম্ভব প্রায়। প্রবীণদের সফল হতে কত দুঃখ, কষ্ট, গ্লানি সহ্য করতে হয় তা কখনো পরিবার, প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন কেউ জানতে চায়না, সবাই সফলতার গল্প শুনতে চায়, সফলতার অংশীদারিত্ব পেতে চায়।
নিজের পরিবার,সমাজ, রাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান উন্নয়নে প্রবীণরা ভূমিকা রাখেন তা কেবল ইতিহাসের পাতায় লেখা হয়।
অধিকাংশ পরিবার ভুলে যায় তাদের অবদানের কথা। যে প্রবীণরা জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়ে দেন নিজের পরিবার আর সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে। সন্তানকে সমাজের আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য পিতা মাতার শ্রমের অন্ত থাকে না। জীবনের অন্তিমমুহূর্তে এসে সেই আদরের সন্তানরাই বাবা মাকে ভুলে যায়। যে মা দশ মাস দশ দিন গর্ভে ধরেছেন সেই মায়ের কষ্টের কথা ভুলে যায় অকৃতজ্ঞ কিছু সন্তান। বাবা মায়ের অক্লান্ত পরিশ্রমের কথা ভুলে গিয়ে তাদেরকে বৃদ্ধ বয়সে পাঠিয়ে দেয় বৃদ্ধাশ্রমে। কিংবা বৃদ্ধ বাবা মাকে গ্রামে রেখে শহুরে জীবন বেছে নেন। তাদেরকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানো যেনো তাদের প্রথম ও প্রধান কাজ। যৌথ পরিবার এখন ভেঙে যাচ্ছে নানা কারণে, এটি মা-বাবার মনে কষ্ট দিলেও রূঢ় বাস্তবতা মেনে নিতে হবে। লেখাপড়া, ব্যবসা, চাকরি এসব কারণে সন্তানদের শহরে থাকতে হচ্ছে তবে তারা শহরে কিংবা গ্রামে যেখানেই থাকুন না কেন, তাদের সাথে পিতা-মাতাকে রাখার ব্যবস্থা রাখতে হবে অথবা তাদের ভরণ-পোষণের সার্বিক ব্যবস্থা করতে হবে। সরকার থেকেও পিতা-মাতার দেখাশোনা করার ব্যাপারে আইন করা হয়েছে। একের অধিক সন্তান , ছেলে কিংবা মেয়েই হোক, বৃদ্ধ বয়সে পিতা-মাতার যাতে কোনোরূপ আর্থিক, শারীরিক, মানসিক কষ্ট পেতে না হয় তা নিশ্চিত করতে ব্যবস্থাদি নিতে হবে। তবে প্রবীণদের সামাজিক সুরক্ষা দিতে রাষ্ট্রেরও কর্তব্য আছে। সরকার প্রবীণদের ভাতা দিচ্ছে, এটি যেন দেশের সকল প্রবীণরা পায় সে জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বলয় সম্প্রসারিত করা প্রয়োজন।
আমাদের সমাজের মূল্যবোধের পরিবর্তন প্রয়োজনএ মানুষ সহিষ্ণু ও মানবিক হলে সুস্থির সমাজ গঠন করা সম্ভব। এই মানসিকতা পিতা-মাতার প্রতি সন্তানদের দায়িত্ববোধেও উদ্বুদ্ধ করবে। পিতা-মাতা যে ¯েœহ দিয়েছেন সন্তানদের, মমতায় আগলে রেখেছেন জীবনের সকল রৌদ্রছায়ায়, সন্তানরা যেন তা না ভোলে।
তাই সন্তানদের উচিত তাদের একমাত্র বটবৃক্ষ, যার নিচে ছায়া নিয়ে বেঁচে থাকতে হয় তাদের যেনো জীবনের অন্তিম সময়ে এসে একাকীত্ব জীবন কাটাতে না হয় সেই ব্যবস্থা করা। তাদেরকে আর অবহেলা নয়, পরম মমতায় আগলে রাখতে হবে ঠিক যেভাবে সন্তানদের তাঁরা শৈশব ও কৈশোরকালে আগলে রেখেছিলেন। তাই সমাজে বসবাসরত প্রতিটি সন্তানের উচিত তাদের প্রবীণ বাবা মাকে মান্য করা। তাদের সুখে দুঃখে পাশে থাকা। বৃদ্ধ বয়সে প্রবীণদের একাকীত্ব জীবনের অবসান ঘটানোর চেষ্টা করা।
লেখক : শিক্ষার্থী,
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া