সালাহ উদ্দিন সায়েম :
পুনর্গঠন হতে যাচ্ছে হেফাজতে ইসলামের কার্যকরী কমিটি। নতুন কমিটিতে মহাসচিব পদ থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে জুনায়েদ বাবুনগরীকে। নতুন মহাসচিব পদে আলোচনায় আছেন সংগঠনের দুই যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ সলিমুল্লাহ ও মুফতি মোহাম্মদ ফয়জুল্লাহ। তবে সংগঠনের আমীর পদে আল্লামা শাহ আহমদ শফি বহাল থাকছেন। হেফাজতের পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত সংগঠনটির দায়িত্বশীল এক নেতা এবং সংশ্লিষ্ট দুটি সূত্র সুপ্রভাতকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি গঠিত হয়েছিল কওমি আক্বীদাপন্থি অরাজনৈতিক ইসলামী সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। হাটহাজারী দারুল উলুম মাদ্রাসার প্রধান পরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফি সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা। ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতির বিরোধিতার মধ্য দিয়ে হেফাজতের আত্মপ্রকাশ হলেও সংগঠনটি দেশজুড়ে আলোচনায় আসে ২০১৩ সালে ১৩ দফা দাবিতে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে।
জানা গেছে, কমিটি পুনর্গঠন করতে চার বছর আগে তৈরি করা হেফাজতের খসড়া গঠনতন্ত্র সপ্তাহ খানেক আগে কাটছাঁট করা হয়। হেফাজতের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফি কয়েক দিন আগে এ গঠনতন্ত্র অনুমোদন দিয়েছেন। হেফাজতের কার্যকরী ও শূরা কমিটির সভায় নেতৃত্ব পুনর্গঠনের ঘোষণা দেওয়া হবে। এখন এই সভা আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। তবে এখনো দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হয়নি।
জানতে চাইলে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা সলিমুল্লাহ সুপ্রভাতকে বলেন, কয়েক দিন আগে হেফাজতের আমির সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুমোদন দিয়েছেন। কমিটি পুনর্গঠনের লক্ষ্যে তিনি যে কোনো সময় সভা আহ্বান করতে পারেন।
হেফাজতের একজন নায়েবে আমির এবং সংশ্লিষ্ট দুটি সূত্র সুপ্রভাতকে জানান, নেতৃত্ব পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় মহাসচিব পদ থেকে বাদ পড়ছেন জুনায়েদ বাবুনগরী। এ পদে সংগঠনের দুই যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা সলিমুল্লাহ ও মুফতি ফয়জুল্লাহর কথা আলোচনা হচ্ছে। তবে দুজনের মধ্যে কারো নাম এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আর শূন্য সিনিয়র নায়েবে আমির পদে স্থান হতে পারে হাটহাজারী দারুল উলূম মাদ্রাসার নবনির্বাচিত সহযোগী পরিচালক আল্লামা শেখ আহমদ কিংবা মাদ্রাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস আল্লামা আহমদ দিদার কাসেমীর। আগে এ পদে ছিলেন আল্লামা শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী। তিনি আল্লামা শফির সাংগঠনিক কর্মকা-ে অসন্তোষ প্রকাশ করে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সিনিয়র নায়েবে আমির পদ থেকে ইস্তফা দেন। তবে আমির পদে আপাততে পরিবর্তন হবে না। আল্লামা শফি আমৃত্যু এ পদে থাকবেন।
জুনায়েদ বাবুনগরী গত ১৭ জুন হাটহাজারী দারুল উলুম মাদ্রাসার সহযোগী পরিচালকের পদ হারান। ওই দিন মাদ্রাসার মজলিশে শূরার বৈঠকে তাঁকে এ পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এবার তিনি হেফাজতের মহাসচিবের পদ হারাতে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে জুনায়েদ বাবুনগরীর বক্তব্য জানতে তাঁর সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
হেফাজতের পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত সংগঠনটির একজন যুগ্ম মহাসচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে সুপ্রভাতকে জানান, বাবুনগরীকে মহাসচিব পদে রাখতে চান না আল্লামা শফি। তিনি বাবুনগরীকে নিয়ে খুবই অস্বস্তিবোধ করছেন। তিনি মূলক হেফাজতে তাঁর পরবর্তী উত্তরসূরী ও মহাসচিব পদে পরিবর্তন আনতে এই পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন।
কে হচ্ছেন নতুন মহাসচিব
হেফাজতের নতুন মহাসচিব পদে আলোচনায় এগিয়ে আছেন জামেয়া নাজিরহাট বড় মাদ্রাসার নবনির্বাচিত পরিচালক মাওলানা সলিমুল্লাহ। তাঁর পরে রয়েছেন বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট ছেড়ে যাওয়া ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ। তাঁরা দুজনই আল্লামা শফির ঘনিষ্ট।
মুফতি ফয়জুল্লাহর গ্রামের বাড়ি রাঙ্গুনিয়া হলেও তিনি থাকেন ঢাকায়। হাটহাজারী ও ফটিকছড়ির হেফাজতের নেতারা চান, মহাসচিব পদে চট্টগ্রামে বসবাসকারী নেতাকেই স্থান দেওয়া হোক। মহাসচিবের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ চট্টগ্রামের বাইরে চলে গেলে হেফাজতের ঘাঁটি হাটহাজারী দারুল উলূম মাদ্রাসার কতৃর্ত্ব খর্ব হয়ে যাবে বলে মনে করছেন তারা।
এই সমীকরণে মহাসচিব পদে এগিয়ে আছেন ফটিকছড়ি নাজিরহাট বড় মাদ্রাসার নবনির্বাচিত পরিচালক মাওলানা সলিমুল্লাহ।
জানতে চাইলে মাওলানা সলিমুল্লাহ সুপ্রভাতকে বলেন, হেফাজতের আমির একক ক্ষমতাবলে যাকে ইচ্ছা মহাসচিব নির্বাচিত করতে পারেন। দেখা যাক, সভায় তিনি কাকে এ পদের জন্য যোগ্য মনে করেন।
জানা গেছে, হেফাজতের কমিটি পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায়ও নেপথ্যে ভূমিকা রাখছেন ফটিকছড়ির সংসদ সদস্য ও তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যন সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী। হাটহাজারী দারুল উলূম মাদ্রাসার সহযোগী পরিচালক পরিবর্তনের পেছেনও তাঁর ভূমিকা ছিল বলে হেফাজত নেতাদের মধ্যে প্রচার আছে।
জানা গেছে, হেফাজতের মহাসচিব পদের জন্য নজিবুল বশরের কাছে তিন দিন আগে ফোন করে দোয়া চেয়েছেন ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি মোহাম্মদ ফয়জুল্লাহ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংসদ সদস্য সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী সুপ্রভাতকে বলেন, হেফাজতের কমিটি পুনর্গঠন করবেন সংগঠনটির আমির। শুনেছি মহাসচিব পদে পরিবর্তন হবে। মহাসচিব পদের জন্য মুফতি ফয়জুল্লাহ আমার কাছে ফোন করে দোয়া চেয়েছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি একটা ইসলামী দলের নেতৃত্বে আছি। আমি চাই, ইসলামী দলগুলোর মধ্যে সৌহাদ্যপূর্ণ সম্প্রীতি বজায় থাকুক। তবে আমাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন করতে হবে। তাই আমার প্রত্যাশা, হেফাজতের পুনর্গঠনে দেশপ্রমিক আলেমরা যাতে নেতৃত্বে আসে আর স্বাধীনতা বিপক্ষের শক্তির দোসর না আসে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুফতি ফয়জুল্লাহ সুপ্রভাতকে বলেন, হেফাজতের মহাসচিব পদ নিয়ে আমার কোনো প্রত্যাশা নেই। এটা নিয়ে আমি কোনো চিন্তাও করছি না।
নজবুল বশর মাইজভান্ডারির কাছে দোয়া চাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি উনার কাছে হেফাজতের জন্য দোয়া চেয়েছি।
হেফাজতের জন্য কেন দোয়া চাইলেন জানতে চাইলে মুফতি ফয়জুল্লাহ এর কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
জানা গেছে, ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের ঘটনার জন্য তখন সংসদ অধিবেশনে নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এক বক্তৃতায় জুনায়েদ বাবুনগরী ও মুফতি ফয়জুল্লাহকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছিলেন ।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, হেফাজতের মহাসচিব পদ নিয়ে মিশনে নেমেছেন মুফতি ফয়জুল্লাহ। তিনি গত সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থেকে ইসলামী ঐক্যজোট থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ এই আসনে ড. হাছান মাহমুদকে মনোনয়ন দেন। এরপর সরে দাঁড়ান ফয়জুল্লাহ।
এ মুহূর্তের সংবাদ