এখন থেকে পুকুর, ডোবা, খাল-বিল-নদী,কৃত্রিম ও প্রাকৃতিক জলাধার ভরাট করার ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদফতরের অনুমোদন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জাতীয় পরিবেশ কমিটির ১৫তম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রকৃতি ও পরিবেশ সুরক্ষায় আরো কিছু জরুরি বিষয় আলোচনায় এসেছে বলে জানা গেছে। পরিবেশ কমিটির সভার পর সাংবাদিকদের কাছে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন। তিনি বলেন, পুকুর-জলাশয়, কৃত্রিম ও প্রাকৃতিক জলাধার ভরাট বা শ্রেণি পরিবর্তন নিরুৎসাহিত করতে হবে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বিভাগ ও সংস্থার আওতাধীন প্রাকৃতিক জলাশয় ও পুকুর বাধ্যতামূলকভাবে সংরক্ষণ করতে হবে, উন্নয়ন পরিকল্পনায় যে কোন ভারট কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। অবৈধভাবে পাহাড় কাটা বন্ধকরণ প্রসঙ্গে মন্ত্রী অপরিহার্য ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদফতরের নিকট থেকে হিল কাটিং ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান অনুমোদন নিয়ে পাহাড় কাটার কথা বলেন। জাতীয় পরিবেশ নীতিমালায় ২০১৮ এর পূর্বের নীতিমালার ১৫টি বিষয় ছাড়াও প্রকৃতি ও পরিবেশ সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় আরও অনেক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে মন্ত্রী জানান। এর মধ্যে রয়েছে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ, পাহাড় প্রতিবেশ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, জীব নিরাপত্তা, প্রতিবেশ বান্ধব পর্যটন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা, দূষণ নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে ছিদ্রযুক্ত ইট তৈরি ও বিভিন্ন ধরণের ব্লক উৎপাদন ও ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বাধ্যতামূলক করা হবে।
জাতীয় পরিবেশ কমিটি যে সব সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার যথাযথ বাস্তবায়ন আইনের কঠোর প্রয়োগের ওপর এবং জনগণের সচেতনতার ওপর নির্ভর করে। দেশে পরিবেশ বিষয়ক অনেক আইন থাকলেও এর প্রয়োগ হয় কম। রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রভাবশালীরা আইনের তোয়াক্কা না করে ব্যক্তি-গোষ্ঠীগত স্বার্থ, মুনাফা অর্জনে তৎপর থাকে। অনেক সময় প্রশাসনও এদের সামনে অসহায় হয়ে পড়ে। চট্টগ্রাম মহানগরীর অসংখ্য পুকুর জলাশয় ভরাট করে ফেলা হয়েছে। খাল নালা অবৈধ দখল করে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ করে দেওয়ায় নগরীতে জলাবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণ করে প্রতি বছর। অবৈধভাবে পাহাড় কাটার ফলে বসবাস ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে; এর সাথে যুক্ত হয়েছে সকল প্রকার দূষণ। নগরী ও আশেপাশে পাহাড় কাটার বিরাম নেই। সরকারি এতগুলি সংস্থা থাকা সত্ত্বেও প্রকৃতি পরিবেশ ধ্বংসকারী কর্মকা- বন্ধ হচ্ছে না। দোষীদের শাস্তি প্রদান করা হয় কদাচিৎ। বরং দেখা যায়, পাহাড় কাটা বা পরিবেশ ধ্বংসকারী কর্মকা-ের ব্যাপারে সরকারের সংস্থাগুলি পরস্পরের ওপর দোষ চাপিয়ে নিজেদের দায়মুক্তির চেষ্টা করে। সরকারি কর্মকর্তাদের এ ধরণের প্রবণতা নিন্দনীয়।
ঢাকার খালগুলি উদ্ধার এবং এর পুনরুজ্জীবনে ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন কাজ শুরু করে দিয়েছে। দীর্ঘদিন ঢাকা ওয়াসা খালগুলির সর্বনাশ অবলোকন করেছে। কোথাও দুষ্কর্মের সহযোগী হয়েছে। এখন কিছু খাল দৃশ্যমান হচ্ছে অথচ চট্টগ্রামের খালগুলি দখল-দূষণ থেকে মুক্ত করার প্রচেষ্টা চোখে পড়ছেনা। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে খালগুলির পুনরুজ্জীবনে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া প্রয়োজন। সিডিএ নতুন করে মাস্টারপ্ল্যান তৈরির কথা বলেছে অথচ নগর এবং আশেপাশে পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন বা প্রকৃতি-পরিবেশের সুরক্ষা দেবার ব্যাপারে সংস্থাটির ভূমিকা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা আছে। নগরীর আশেপাশে, জেলার সর্বত্র অবৈধ ইটভাটা গড়ে উঠেছে যা বাযুদূষণের মারাত্মক উৎসে পরিণত হয়েছে।
পরিবেশ রক্ষায় পরিবেশ অধিদফতরকে আরও কঠোর ও সাহসী ভূমিকা নিতে হবে। পরিবেশ সুরক্ষার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন অনেক ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
পরিবেশ অধিদফতরে লোকবল ও লজিস্টিক সাপোর্ট বাড়াতে হবে, পরিবেশ আদালতগুলিকে সক্রিয় করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। পরিবেশ সুরক্ষায় প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করাও একটি জরুরি কাজ।
মতামত সম্পাদকীয়