পিঠা উৎসবের বাহারি আয়োজন

হুমাইরা তাজরিন »

‘বাসন্তী রঙ লেগেছে আবার, সাত একরের বুকে, মাতো সবে সাজো সবে, পিঠাপুলির সুখে’- এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদ আয়োজন করেছে ‘সিভাসু পিঠা উৎসব ১৪২৯’। গতকাল ৯ মার্চ সকাল পৌনে ৯টায় চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এ আয়োজন করা হয়। উৎসবের সূচনা হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মাধ্যমে। এছাড়াও সন্ধ্যা ৬টা থেকে শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় ছিলো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও।

পিঠা উৎসব ঘুরে দেখা যায়, বাঙালির ঐতিহ্যবাহী পিঠাসহ খাদ্য বিজ্ঞান অনুষদের শির্ক্ষাথীদের উদ্যোগে ছিলো বিভিন্ন রকম স্বাস্থ্যকর খাবারের আয়োজন। পৌষাল, পিঠা মহল, বন্ধুসভা, পিঠা পালঙ্ক , হযবরল , বাসন্তী পিঠাঘর ও স্বরর্বণ-১১ নামের স্টলে এসব খাবার বিক্রয় করছেন শিক্ষার্থীরা। স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে তৈরি, সরবরাহ ও পরিবেশন করা হচ্ছে এসব খাবার। এর মধ্যে রয়েছে পান্তুয়া, রঙিন ঝিনুক, চিকন পুলি , চিকেন মোমো, মাছ পিঠা, মালপোয়া, শাহী পাটিসাপ্টা, ডাব পুডিং, মহব্বতের লাচ্ছি, নকশী পিঠা, মোদক, ক্ষীর লজ্জ্বাবতী, নওয়াবী ত্রিখ-, পক্ষীরাজ, সুড়ঙ্গের পিঠা, ভালোবাসার প্রতকি, ডিমা আলু, জীবনের মারপ্যাঁচ, গাপুস গপুস, মুখ পাক্বন, ডিম ডুইচ, ছাঁচ পিঠা, নারিকেল পুলি, ডাবের পুডিং, ফ্রুট পুডিং, কেক , বাদামের বরফি। এছাড়াও ছিলো চট্টপটি, ফুচকা, পানিপুরী, পাকোড়া, সবজি পিঠা, ফ্রাইড রাইস। নানান ধরণের স্বাস্থ্যকর পানীয় ও ফলের জুসেরও সমারোহ ছিলো উৎসবে। যেমন লেমন মিন্ট, লেমন মিন্ট উইথ সোডা, ভার্জিন মোহিত, বাদাম লাচ্ছি, চকোলেট লাচ্ছি, প্রেম লাচ্ছি, তরমুজের জুস, অ্যালোভেরা জুস, জিরা পানি।

খাদ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদের শিক্ষার্থী নাওয়াতুল আফরোজ বলেন, ‘আমরা রেখেছি ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য উপযোগী ডাবের পুডিং, যেটি পুরোপুরি সুগারলেস। এটা ডাবের পানি ও সাঁশ এর সাথে আগার আগার পাউডার দিয়ে এটা বানিয়েছি। এছাড়া আছে ফ্রুট পুডিং যেখানে সুগার একদম কম এবং এতে লেবু ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া আছে বাঁধাকপির স্ট্রিমরোল। এটা স্ট্রিম করা হয়েছে কেবল, কোনো তেল ব্যবহার করা হয়নি। এটি অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর। এছাড়া আছে দুই ধরনের পুলিপিঠা। একটি হলো তেলে ভাজা ও একটি তাওয়ানো। তেলের ক্ষেত্রে আমরা ব্যবহার করছি রিফাইন্ড অয়েল। অনেকে আবার তেলে ভাজা খেতে চান না। তেলে ভাজা খেলে যেহেতু গ্যাস্ট্রিকসহ অন্যান্য সমস্যার সম্ভাবনা থাকে, সেজন্য তাওয়ানো পুলিরও ব্যবস্থা রেখেছি। আমাদের কেকগুলো চুলোয় তৈরি করা হয়েছে। আর কালারগুলোও অর্গানিক ফুড কালার। অন্যান্য পিঠার ক্ষেত্রে আমরা সাদা চিনি পরিহার করেছি, কোথাও গুঁড় এবং কোথাও লাল চিনি ব্যবহার করেছি। আমাদের তেলের পিঠাগুলো ডিপ ফ্রাইড না। সবগুলোই একবার হালকা ভাজা। যেহেতু ডিপ ফ্রাই করলে কার্বন মনোঅক্সাইডের মতো যৌগগুলো আমাদের রক্তে মিশে ক্যান্সারের মতো রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া খাবারকে প্রসেসও আমরা কম করেছি যেহেতু বেশি প্রসেস করলে খাবারের গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়।’

পিঠা উৎসব আয়োজনের কো-অর্ডিনেটর সিভাসুর সহযোগী অধ্যাপক ফেরদৌসী আকতার বলেন, ‘আমাদের অনুষদ থেকে আমরা প্রত্যেক বছরই পিঠা উৎসবের আয়োজন করে থাকি। পিঠা আমাদের একটি ঐতিহ্য। যা আমরা ভুলতে বসেছি। আমাদের নতুন প্রজন্ম আসলে পিঠাই চিনেনা। আমাদের উদ্দেশ্য এ সম্পর্কে সকলকে জানানো। আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের নির্দেশনা দিয়েছি কিভাবে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে আমাদের খাদ্যগুলো তৈরি করা যায়, কিভাবে নতুন নতুন খাদ্য উদ্ভাবন করা যায় এবং সেগুলোর নিউট্রিশনাল কোয়ালিটি মেন্টেইন করা যায়। বিভিন্ন রোগীদের জন্য উপযোগী খাদ্য তৈরীর নির্দেশনাও আমরা শিক্ষার্থীদের দিয়েছি। এগুলো আমরা তদারকি করছি।’

খাদ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন আশরাফ আলী বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা আমাদের অনুষদ থেকে খাদ্য বিষয়ক গবেষণা করি। গবেষণার পাশাপাশি এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের আর্ন্তজাতিক মানের শিক্ষা প্রদানের চেষ্টা করি। তাই প্রতিবছর এ ধরনের উৎসবের আয়োজন করি। কিভাবে সেটির প্রসার বাড়নো যায় সেই লক্ষ্যে আজকের এই পিঠা উৎসব। শীতকাল পিঠা খাওয়ার যে আলাদা রীতি ছিলো এখন সেটিকে পরিবর্তন করে বাঙালির খাদ্যতালিকায় থাকা সেই খাদ্যগুলোকে স্বাস্থ্যসম্মত করে সকলের সাথে পরিচয় করানোই আমাদের লক্ষ্য।’