রাহেলা আক্তার »
ঘরের এক কোণে ছিল একদল পিঁপড়ার ছোট্ট রাজ্য। সারাদিন তারা সারি বেঁধে খাবারের খোঁজে বের হতো— কারো মুখে চালের দানা, কারো মুখে চিনি বা রুটির টুকরো। দুপুরে একবার বাসায় এসে ছানাদের খাবার দিত, তারপর আবার বের হতো নতুন খাবারের সন্ধানে। এভাবেই তারা প্রতিদিন সামান্য করে খাবার জমিয়ে রাখতো বর্ষার জন্য, কারণ বৃষ্টির দিনে তো বের হওয়া বিপজ্জনক— পানিতে ভেসে যাওয়ার ভয় থাকে।
একদিন সন্ধ্যায় ফিরে এসে মা পিঁপড়ারা দেখল, তাদের কয়েকটি ছানা নেই! প্রথমে ভাবল হয়তো একটু ঘুরতে গেছে, কিন্তু দিন পেরিয়েও তারা আর ফিরল না। একে একে ছানারা হারিয়ে যেতে লাগল। একদিন মা পিঁপড়ারা ঠিক করল— আজ আর খাবারের খোঁজে বের হবে না, বরং বাসার পাহারায় থাকবে।
বাড়িতে তাদের সাথেই থাকত এক মা মুরগি ও তার ছানারা। মা পিঁপড়া হঠাৎ দেখল, তাদের ছানারা বের হলেই মা মুরগিটা ঠোঁট দিয়ে টপাটপ খেয়ে ফেলছে! এই দৃশ্য দেখে মা পিঁপড়ার মন ভেঙে গেল। সেই দিন থেকে সে ছানাদের আর বাইরে যেতে দিল না।
কিছুদিন পর একদিন সারাদিন অঝোরে বৃষ্টি নামল। মুরগি ও তার ছানারা খাবারের খোঁজে বের হতে পারল না। ঘরে খাবারও ফুরিয়ে গেছে। মা মুরগি নিজে ক্ষুধা সহ্য করলেও ছানারা টকটক করে কাঁদছে— ক্ষুধায় কাঁপছে সবাই।
এই দৃশ্য দেখে মা পিঁপড়া কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল,
— “মুরগি বোন, তোমার ছানারা এমন করছে কেন?”
মা মুরগি কাতর কণ্ঠে বলল,
— “ওরা সারাদিন না খেয়ে আছে, কিছুই জোটেনি আজ।”
পিঁপড়ার মনটা কেঁপে উঠল দয়ার বন্যায়। সে জানে, বর্ষায় বাইরে বের হওয়া যায় না, তাই খাবার জমিয়ে রেখেছিল তারা। মা পিঁপড়া বলল,
— “বোন, মন খারাপ কোরো না। আমাদের কাছে কিছু খাবার সঞ্চয় আছে, তোমরা সবাই মিলে খেয়ে নাও।”
মুরগি অবাক হয়ে বলল,
— “তোমাদের খাবার দিলে তোমরা কি খাবে?”
পিঁপড়া হেসে বলল,
— “ভাগাভাগি করে খেলে আল্লাহ্ বরকত দেন। তোমার মনিব ফিরে এলে, তখন না হয় আমাদের জন্য কিছু দিও।”
কৃতজ্ঞতায় মুরগির চোখে পানি এসে গেল। পিঁপড়ারা দল বেঁধে খাবার টেনে আনল, আর মুরগি ছানাদের নিয়ে পেট ভরে খেল। তারপর থেকে মুরগি ও পিঁপড়ার মাঝে তৈরি হলো গভীর বন্ধুত্ব। মা মুরগি প্রতিজ্ঞা করল, আর কখনো কোনো পিঁপড়ার ক্ষতি করবে না।
এরপর থেকে প্রতিদিন বিকেলে তারা ঘরের কোণে বসে গল্প করত, একে অপরের খবর নিত। একদিন ভারী বৃষ্টিতে মা পিঁপড়া ভেসে যাচ্ছিল। মুরগি দেখে সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে গিয়ে তাকে নিজের পায়ে তুলে নিল। পিঁপড়া বেয়ে উঠে এল নিরাপদে।
তাদের বন্ধুত্ব তখন থেকে আরও দৃঢ় হলো।
এভাবেই তারা সবাইকে শেখাল—
ভালোবাসা মানে ভাগাভাগি, আর সহানুভূতিই সত্যিকারের বন্ধুত্বের ভিত্তি।





















































