পাহাড়েও বাঘের ‘অভয়ারণ্য গড়ার’ সুপারিশ

সুপ্রভাত ডেস্ক »
পার্বত্য অঞ্চলের বনকে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের অভয়ারণ্য করতে চায় সংসদীয় কমিটি। ওই অঞ্চলের প্রতিবেশ ব্যবস্থা রয়েল বেঙ্গল টাইগারের উপেযোগী কিনা, তার সম্ভাব্যতা যাচাই করে দেখতে বলেছে কমিটি।
গতকাল মঙ্গলবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। কমিটির পরের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়।
এ বিষয়ে কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘এক সময় তো বেঙ্গল টাইগার সারা বাংলাদেশেই ছিল। এখন কমতে কমতে সংকুচিত হয়ে পড়েছে। আমাদের রয়েল বেঙ্গল টাইগার এখন কেবল সুন্দরবনে বসবাস করে। এজন্য আমরা ভাবছি, পার্বত্য এলাকায় টাইগারের দ্বিতীয় হ্যাবিটেট তৈরি করতে পারি কিনা। মন্ত্রণালয় এই বিষয়টি দেখছে। পরবর্তী বৈঠকে এই সংক্রান্ত রিপোর্ট মন্ত্রণালয়কে দিতে বলা হয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘এখনও আমাদের বিভিন্ন ক্যামেরাতে দেখা যাচ্ছে, মিয়ানমার ও ভারত সীমান্ত থেকে মাঝেমধ্যে রয়েল বেঙ্গল টাইগার আমাদের সীমানায় ঢুকে পড়ছে। ফলে আমরা ওই এলাকা তাদের বাস উপযোগী করতে পারলে, সেটা একটি ভালো কাজ হবে।’ খবর বাংলা ট্রিবিউনের
পার্বত্য অঞ্চল, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার নিয়ে ট্রান্স বাউন্ডারি করিডোর হচ্ছে বলে তিনি জানান।
সাবের হোসেন জানান, ট্রান্স বাউন্ডারি করিডোরে পরামর্শক নিয়ে যে অনিয়ম ছিলে, তার তদন্ত প্রতিবেদন এসেছে। সেখানে যে কর্মকর্তা দায়ী তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হয়েছে।
সাভার ট্যানারিতে অ্যাকশন শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সভাপতি বলেন, ‘পরিবেশ দূষণের দায়ে ৭টি ট্যানারির বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। কিছু বাধা এলেও আমরা এটা করতে পেরেছি। আরও ২৩টির মতো ইউনিট রয়েছে, যেগুলোর দূষণের মাত্রা খুবই বেশি। সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন আছে। পরিবেশ দূষণ প্রশ্নে কোনও আপস করা হবে না।’
বৈঠকে জনবল বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দেশে লাল তালিকাভুক্ত শিল্প কারখানা প্রায় চার হাজারের মতো। অবৈধ ব্রিক ফিল্ডও আছে ৩/৪ হাজার। এসব প্রতিষ্ঠান মনিটরিংয়ের জন্য লোকবল কম। এই জন্য আমরা অর্গানোগ্রাম সংশোধন করে লোকবল বাড়ানোর কথা বলেছি।’
তিনি বলেন, ‘পরিবেশ খাতে নারীদের অবদানের স্বীকৃতি দিতে আগামী বছর থেকে নারী দিবস উপলক্ষে পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী বছর থেকেই এটা চালু করে। এটা কীভাবে হবে সেই বিষয়ে মন্ত্রণালয় নীতিমালা তৈরি করবে।’
সংসদীয় কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছে— বৈঠকে পরিবেশ সম্পর্কিত কার্যক্রমে অবদানের জন্য ২০২৩ সালের ৮ মার্চ নারী দিবস থেকে ‘নারী অ্যাওয়ার্ড’ প্রদানের ব্যবস্থা চালুর জন্য কমিটি সুপারিশ করেছে।
সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘সরকারি একটি গবেষণা বলেছে, সেন্টমার্টিনে প্রতিদিন ৯৪০ জন থেকে ১১৫০ জন ট্যুরিস্ট যেতে পারে। কিন্তু সেখানে প্রতিদিন ২০ হাজারের বেশি ট্যুরিস্ট যায়। আমরা সেখানে রাত যাপন বন্ধ করার কথা বলেছিলাম। কিন্তু এখনও এটা বাস্তবায়ন হয়নি। এটা কীভাবে করা যায় তা নিয়ে কাজ হচ্ছে।’
বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পরিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে চিহ্নিত সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটকদের ভ্রমণ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত খসড়া নীতিমালায় সেখানে ধূমপান ও রাত যাপন নিষিদ্ধকরণ এবং দিনে পর্যটক ৯০০ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
বৈঠকে ‘কনফারেন্স অব দ্য পার্টিজ’ এর কার্যপ্রণালী বিধি চূড়ান্তকরণ বিষয়ে প্রস্তাবনা, গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল শিল্প সবুজায়নে সার্কুলার এবং ইকোনমি সেক্টরে আসন্ন বাজেটে প্রস্তাবনা, পরবর্তী কপ সম্মেলনের আগের ইভেন্টগুলোর বিষয়ে গৃহীত কর্মসূচি, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের এডিপে বাস্তবায়নে প্রকল্পভিত্তিক অগ্রগতি এবং বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশনের বেদখলকৃত জমির তথ্য ও তা উদ্ধারে গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করা হয়।
বৈঠকে প্লাস্টিক উৎপাদনে স্থানীয় কাঁচামালের ট্যাক্স বাড়িয়ে উৎপাদন নিরুৎসাহিত করা এবং বন বিভাগের ভূমিতে অনুমোদনহীনভাবে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানের তালিকা আগামী সভায় উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়।
সাবের হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য পরিবেশন, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, নাজিম উদ্দিন আহমেদ, তানভীর শাকিল জয় এবং খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন অংশগ্রহণ করেন।