নিজস্ব প্রতিবেদক »
নগরীর আকবর শাহ এলাকায় পাহাড় কাটার সময় ধসে পড়া মাটির চাপায় খোকা (৪৫) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। তিনজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেল ৫টা ৪৫মিনিটের দিকে নগরীর আকবরশাহ বেলতলী ঘোনা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানান আকবর শাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওয়ালী উদ্দীন।
জানা গেছে, নগরীর আকবরশাহ রেলওয়ে হাউজিং সোসাইটির উত্তর-পশ্চিমের এলাকাটির নাম রসূলপুর বেলতলী ঘোনা। দীর্ঘদিন ধরে পাহাড় কেটে গড়ে ওঠা এ এলাকার জায়গাগুলো রেলের। তদারকির অভাবে এসব জায়গা দখল করে গড়ে উঠছে ঘর-বাড়ি, স্কুল। ওখানকার অন্য একটি পাহাড়ি টিলায় ২০০৯ সালে গড়ে তোলা হয় একটি প্রাইমারি স্কুল। গত বছরের শেষ দিকে ওই স্কুলের নতুন ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়। এ অনুযায়ী পাহাড় কেটে রাস্তা নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি দুপুরে এলাকাটিতে অভিযান পরিচালনা করে মো. শাহজাহান (৪০) নামের এক ব্যক্তিকে ৭ দিনের বিনাশ্রম কারাদ- প্রদান করে একটি এস্কেভেটর জব্দ করে কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক।
মানিক নামে স্থানীয় একজন বলেন, ‘শুধু এখানে (বেলতলী ঘোনা) না, ফয়’স লেকের পুরো পশ্চিম পাশের পাহাড় কেটে বাসা ভাড়া দেয়া হচ্ছে। অনেকদিন ধরে এখানে পাহাড় কাটার কাজ চলছে। বাইরের মানুষ এনে এখানে কাজ করানো হতো। আজ (শুক্রবার) বিকেল সাড়ে ৫টার পর হঠাৎ পাহাড়ের মাটি ধসে পড়ে। এতে কাজ করা শ্রমিকরা মাটি চাপা পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ এসে উদ্ধার কাজ শুরু করে।’
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, সিটি করপোরেশনের অধীনে এডিবির অর্থায়নে দুই কোটি ৬৭ লাখ টাকার প্রকল্পের কাজ ছিল এটি। রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণের কাজ করার সময় এই ঘটনা ঘটেছে।
এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এর পেছনে একটা হাউজিং সোসাইটি রয়েছে। সেখানে ভবন করার সময় কাটা মাটিগুলো জড়ো করা হয়েছিল। সেগুলো ধসে পড়েছে। কাজের সময় নিরাপত্তার জন্য যেটা দরকার, সেটা করা হয়নি। কারো গাফেলতি থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর মো. জহুরুল আলম জসীম বলেন, ‘এটি সিটি করপোরেশনের কাজ। সিটি করপোরেশন এখানে গাইড ওয়াল নির্মাণ করছিলো। এখন দুর্ঘটনা ঘটেছে।’
উদ্ধার কাজে নিয়োজিত ফায়ার সার্ভিসের চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ-পরিচালক মো. আব্দুল হালিম বলেন, ‘পাহাড় ধসের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে একজনকে উদ্ধারের পর চমেক (চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ) হাসপাতালে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এছাড়া আরও তিনজনকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার তৎপরতা চালিয়েছে। এর মধ্যে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে আর তিনজনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। মৃতের দাফন-কাফনের জন্য ২৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে। আহতদের চিকিৎসা সহায়তা দেয়া হবে। এ ঘটনার সুষ্ঠু তথ্য জানতে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে কমিটি রিপোর্ট জমা দিবে।’
পাহাড় কাটা ও দেওয়াল নির্মাণের কাজ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ জায়গাটায় আমরা ১১ ফেব্রুয়ারি অভিযান পরিচালনা করেছি। একজনকে কারাদ- দিয়ে একটি এস্কেভেটর জব্দ করা হয়েছে। এরপরও তারা পাহাড় কাটা বন্ধ করেনি। আর এ কাজটি কারা করছিলো তা তদন্তের পরে জানতে পারবো।’
জানা যায়, একজন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে আহ্বায়ক করে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এতে কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি), চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের একজন প্রতিনিধি এবং আকবর শাহ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সদস্য হিসেবে তদন্ত কাজ পরিচালনা করে আগামী বৃহস্পতিবার প্রতিবেদন জমা দিবেন।