চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, নগরের ২৬টি পাহাড়ে সাত হাজারের বেশি পরিবার ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে। আর স্থানীয় সূত্র ও সিটি করপোরেশনের বলছে, এই সংখ্যা অবাস্তব। তাদের মতে, প্রকৃত সংখ্যা এর কয়েক গুণ বেশি।
সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির এক সভায় জানিয়েছেন, শুধু মতিঝরনা ও বাটালি পাহাড়েই প্রায় ১০ হাজার পরিবার ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে। অন্য সূত্রমতে, আকবরশাহ থানার পাঁচটি পাহাড়েও আরও প্রায় ১০ হাজার পরিবার বসবাস করছে ঝুঁকি নিয়ে।
অবশ্য পাহাড়ে অবৈধ বসতির প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণে কোনো আধুনিক বা বেসরকারি জরিপ নেই।
তবে সর্বশেষ ২০২০ সালে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তালিকা হালনাগাদ করা হয়। তখন ২৬টি পাহাড়ে ৬ হাজার ৫৫৮টি পরিবারের বসবাসের তথ্য দেওয়া হয়। পরে যুক্ত হয় ৯১৪ পরিবার। এর মধ্যে ১১টি পাহাড় ব্যক্তিমালিকানাধীন, বাকি ১৫টি রেলওয়ে, গণপূর্ত, জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের অধীন।
সচেতন নাগরিকেরা বলছেন, ২০০৭ সালের পাহাড়ধসের পর থেকে প্রতিবছর আলোচনা হয়, কিন্তু বাস্তবায়ন নেই। এখন যে তালিকা জেলা প্রশাসন দিচ্ছে, সেটি অবাস্তব। শুধু লালখান বাজার এলাকার পাহাড়গুলোতেই ১৫ হাজারের বেশি পরিবার রয়েছে। নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে বলা হয়, এগুলো সরকারি পাহাড় বেহাত করার কৌশল। কোনো দপ্তরই পাহাড় দখলমুক্ত করতে আগ্রহী নয়। এখানে উল্লেখ করা দরকার, ২০০৭ সালের পাহাড়ধসে চট্টগ্রামে ১২৭ জনের মৃত্যু হয়। এরপর গঠিত তদন্ত কমিটি পাহাড় রক্ষায় ৩৬টি সুপারিশ করেছিল। তবে বাস্তবে কার্যকর পদক্ষেপ তেমন দেখা যায়নি।
সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম নিজেই বলছেন, ‘মতিঝরনা ও বাটালি পাহাড় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। এই দুই পাহাড়ে প্রায় ১০ হাজার পরিবার ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে। এই দুই পাহাড়ে কমপক্ষে ৫০ ভাগ মানুষ অবৈধভাবে বসবাস করছে। দিন দিন এই সংখ্যা বাড়ছে। নানা এলাকা থেকে মানুষ এসে এখানে বসতি গড়ে তুলছে। পাহাড় রক্ষায় মালিক ও দায়িত্বপ্রাপ্ত দপ্তরগুলোর সমন্বিত পদক্ষেপ দরকার।’
প্রতিবছর বর্ষা এলে পাহাড় ধসের আশঙ্কা করা হয়, পাহাড় রক্ষার কথা বলা হয় এবং পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে অবৈধ বসবাসকারীদের উচ্ছেদের কথা বলা হয়। কিন্তু বাস্তবে তার কিছু দেখা যায় না। এখন প্রশ্ন হলো পাহাড়কে দখলমুক্ত করতে প্রথমে প্রয়োজন সঠিক তথ্য। এখন জেলা প্রশাসন যদি প্রথমে সঠিক তথ্য উপস্থাপন না করে তাহলে সমস্যার সমাধানের উপায় নির্ধারিত হবে কীভাবে।