সুপ্রভাত ডেস্ক :
বাংলাদেশে রাইড শেয়ারিং সার্ভিস পাঠাও এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম সালেহ’র খণ্ড-বিখণ্ড মরদেহ পাওয়া গেছে নিউ ইয়র্কের একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টে। এই বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট ফাহিম সালেহ’র মালিকানাধীন ছিল।
নিউ ইয়র্কের পুলিশ বলছে, স্থানীয় সময় মঙ্গলবার বিকেলে মি. সালেহ’র খণ্ড-বিখন্ড মরদেহ পাওয়া যায়। এ সময় তার মরদেহের পাশে একটি যান্ত্রিক করাত পাওয়া যায়। নিউইয়র্কের পুলিশ ধারণা করছে, পেশাদার খুনিরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
ফাহিম সালেহ’র শরীরের বিভিন্ন অংশ অ্যাপার্টমেন্টে ছড়ানো ছিটানো ছিল এবং কিছু অংশ একটি ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখা হয়েছিল।
ব্রিটেনের ডেইলি মেইল অনলাইনের খবরে ফাহিম সালেহকে একজন মিলিয়নিয়ার প্রযুক্তি বিষয়ক উদ্যোক্তা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
মি. সালেহ’র বোনকে উদ্ধৃত করে নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকা লিখেছে, নৃশংস এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে প্রথমে জানতে পারে ফাহিম সালেহ’র বোন।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, মঙ্গলবার সারাদিন ফাহিম সালেহ’র সাথে কোন যোগাযোগ না হওয়ায় বিকেল ৩:৩০ মিনিটে সপ্তম তলায় তার সাথে কথা বলতে যান। সেখানে গিয়ে তার বোন ফাহিম সালেহ’র খণ্ড-বিখন্ড মরদেহ দেখতে পান।
পুলিশকে উদ্ধৃত করে নিউইয়র্ক টাইমস বলেছে, অ্যাপার্টমেন্টের নিরাপত্তা ক্যামেরায় দেখা গেছে কালো স্যুট এবং কালো মাস্ক পরা একজন ব্যক্তির সাথে একই লিফটে প্রবেশ করেন ফাহিম সালেহ। লিফট ফাহিম সালেহ’র অ্যাপার্টমেন্টের সামনে দাঁড়ালে দুজনেই সেখান থেকে বের হয়ে যান।
এরপর ফাহিম সালেহ তার অ্যাপার্টমেন্টে প্রবেশ করেন। তখন সেই ব্যক্তি ফাহিম সালেহকে অনুসরণ করে। পুলিশ বলছে, এরপর দুজনের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়।
ফাহিম সালেহর পরিচয়
নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে, ফাহিম সালেহ’র জন্ম সৌদি আরবে। এরপর পরিবারের সাথে তিনি নিউ ইয়র্কে চলে যান। মি. সালেহ পড়াশুনা করেছেন নিউ ইয়র্কে।
ঢাকায় পাঠাও রাইড শেয়ারিং-এর একজন কর্মকর্তা ওসমান সালেহ বলেন, ফাহিম সালেহ হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি তারা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে জানতে পেরেছেন।
“আমরা এই ঘটনায় শকড। বিষয়টা কিভাবে ঘটেছে সে সম্পর্কে আমরা এখনো বিস্তারিত কিছু জানিনা,” বলছিলেন ওসমান সালেহ।
তিনি জানান, বাংলাদেশে অ্যাপ-ভিত্তিক রাইড শেয়ারিং পাঠাও প্রতিষ্ঠার পরে থেকে ফাহিম সালেহ চেয়েছিলেন আফ্রিকা মহাদেশে ব্যবসা বিস্তার করতে। খবর বিবিসি বাংলার
এর অংশ হিসেবে ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে নাইজেরিয়াতে ‘গোকাডা’ নামে একটি রাইড শেয়ারিং সার্ভিস চালু করেন। তার সাথে সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আরো একজন ছিলেন। টেককাবাল’ নামে নাইজেরিয়ার একটি প্রযুক্তি বিষয়ক গণমাধ্যম রিপোর্ট করেছে যে, সংকটে পরার আগে এক বছরেই ‘গোকাডা’ ৫৩ লাখ ডলার আয় করে।
যাত্রী পরিবহন নিষিদ্ধ হয়ে গেলে ‘গোকাডা’ পার্সেল ডেলিভারি সার্ভিস চালু করে। বর্তমানে নাইজেরিয়ার রাজধানী লেগোসে তাদের ১০০০ মোটরসাইকেল রয়েছে।
ফাহিম সালেহ নিউইয়র্কে বসবাস করতেন। ২০১৪ সালে তিনি ঢাকায় এসে প্রযুক্তি-ভিত্তিক কিছু ব্যবসার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু সেগুলো ব্যর্থ হয়। এরমধ্যে ‘পাঠাও’ উদ্যোগ সফল হয়েছিল। শুরুতে পণ্য পরিবহন সার্ভিস থাকলেও পরবর্তীতে রাইড শেয়ারিং সেবাও চালু করে পাঠাও।
পাঠাও প্রতিষ্ঠার সাথে ফাহিম সালেহ’র সাথে আরো দু’জন ছিলেন।
পরবর্তীতে ফাহিম সালেহ তার কিছু শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে নিউইয়র্কে ফিরে আসেন।
এরপর তিনি ‘পাঠাও’ এর আদলে অন্য দেশে ব্যবসার চিন্তা করেন।
ফাহিম সালেহর জন্ম ১৯৮৬ সালে। তার বাবা সালেহ উদ্দিন চট্টগ্রামের, আর মা নোয়াখালীর মানুষ। যুক্তরাষ্ট্রের বেন্টলি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনফরমেশন সিস্টেম পড়াশোনা করতেন ফাহিম। নাইজেরিয়া আর কলম্বিয়াতে তার দুটি রাইড শেয়ারিং অ্যাপ কোম্পানি রয়েছে। পেশায় ওয়েবসাইট ডেভেলপার ফাহিম অ্যাডভেঞ্চার ক্যাপিটাল গ্লোবাল নামক একটি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠানেরও উদ্যোক্তা ছিলেন।