পরিবেশ ধ্বংস করে বর্জ্য শোধনাগার নয়

জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে একটি বর্জ্য শোধনাগার গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ‘এস্টাবলিশমেন্ট অব ট্রিটমেন্ট স্টোরেজ অ্যান্ড ডিসপোজাল ফ্যাসিলিটি (টিএসডিএফ) ফর শিপ রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যান্ড আদার্স ইন চিটাগং’ নামে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করছে জাইকার পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘নিউ ভিশন সলিউশন লিমিটেড’ ।
জানা গেছে, সীতাকুণ্ড পৌরসভার বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্ক সংলগ্ন মৌলভীপাড়ার পাহাড়ের পাদদেশে বর্জ্য শোধনাগারের জন্য ২০ একর জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্প স্থান থেকে ইকোপার্ক ও বোটানিক্যাল গার্ডেনের দূরত্ব ১০ ফুটের মতো। এর আরেক পাশে চন্দ্রনাথ পাহাড়। জনবসতিপূর্ণ ওই এলাকায় শোধনাগার নির্মাণ করা নিয়ে ইতিমধ্যে আপত্তি উঠেছে। চট্টগ্রাম জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ১ হাজার ৩০০ কলকারখানা রয়েছে। এসব কারখানার বর্জ্য ধ্বংস করার জন্য পরিশোধনাগার নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়।
এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বর্জ্য শোধনাগার তৈরি করলে পরিবেশ হুমকির মুখে পড়বে বলে আপত্তি জানিয়েছেন চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড ও চট্টগ্রাম নগরের আংশিক) সংসদ সদস্য এস এম আল মামুন ও সীতাকুণ্ড পৌরসভার মেয়র বদিউল আলম। এ ছাড়া প্রকল্পটির পরিবেশগত ক্ষতির আশঙ্কা করে গত ৮ ফেব্রুয়ারি বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্কের পরিচালক বরাবর চিঠি দেন পার্কটির পর্যটন রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দীন ও পুনর্বাসন রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মাসুম কবীর। চিঠিতে তাঁরা উল্লেখ করেছেন, ওই এলাকায় বর্জ্য শোধনাগার নির্মিত হলে পরিবেশগত সমস্যা হবে। বর্জ্যবাহী গাড়ি চলাচল করলে পর্যটক কমে যাবে। এ ছাড়া প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হবে এবং গাছপালা ও বন্য প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাবে পরিবেশবিদেরাও বলছেন, জাহাজভাঙা শিল্প প্রতিষ্ঠান ও কলকারখানার ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্য ওই এলাকায় পরিশোধন করা হলে নানা বিপদ হতে পারে।
পরিবেশবাদীরা বলছেন, বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণের জায়গা কোথায় হবে, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালায় স্পষ্ট করে বলে দেওয়া হয়েছে। বোটানিক্যাল গার্ডেন, ইকোপার্ক কিংবা পাহাড়ের আশপাশে শোধনাগার নির্মাণের কোনো সুযোগ নেই। পরিবেশ মন্ত্রণালয় এ আইন তৈরি করেছে। ফলে পরিবেশের ছাড়পত্র পাওয়ারও সুযোগ নেই। আর এ শোধনাগার তৈরি হলে ওখানে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হবে। বর্জ্য ভাঙতে শব্দ হবে। এতে পাখি ও বন্য প্রাণীর অসুবিধা হবে। বাতাস দূষিত হয়ে ছড়িয়ে পড়লে উদ্ভিদকুল ও মানুষের ক্ষতি হবে।
আমাদের বর্জ্য শোধনাগারের দরকার তাতে কোনো সন্দেহ নেই তবে তা পরিবেশ ও জনবসতিকে ক্ষতি করে নয়। আমরা আশা করব এমন একটি প্রয়োজনীয় প্রকল্পের স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পক্ষ বিচক্ষণতা, দূরদর্শিতা ও পরিবেশ সচেতনতার পরিচয় দেবেন।