পরস্পরের প্রতি দোষারোপ নয়, সমন্বিত প্রচেষ্টা চাই

চট্টগ্রাম নগরে জলাবদ্ধতা নিরসনে বড় বাধা সরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতা। সম্প্রতি চটগ্রাম সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মধ্যে পরস্পরের প্রতি দোষারোপ করার ঘটনায় এই বাস্তবতা আরও প্রকট হয়ে উঠেছে।
জলাবদ্ধতা নিরসনে ২০১৭ সালের আগস্টে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার বড় প্রকল্প অনুমোদন দেয় সরকার। এই প্রকল্প নিয়ে শুরু থেকে সিটি করপোরেশন ও সিডিএর দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এরপর সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তা আলোচনায় এলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ স্থানীয় পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে ছয় বছরে ১৮টি সভা হয়। এর মধ্যে অন্তত ১০টি সভার কার্যবিবরণীতে সাতটি সিদ্ধান্তের কথা বারবার উল্লেখ করা হলেও এর একটিও বাস্তবায়িত হয়নি।
এসব সিদ্ধান্তের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পের অধীনে নগরের ৪০টি খালের মুখে জোয়ার প্রতিরোধক ফটক (স্লুইসগেট) স্থাপন। কিন্তু গত ছয় বছরে ৪০টির মধ্যে মাত্র ৫টি জোয়ার প্রতিরোধক চালু হয়েছে। বাকি ৩৫টির কাজ এখনো শেষ হয়নি।
এ ছাড়া বাকি কাজগুলো যেমন, খাল-নালা-নর্দমা নিয়মিত পরিষ্কার রাখা, নতুন খাল খনন, ২১টি খাল পুরোনো রূপে ফিরিয়ে আনা, জলাধার তৈরি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করে খালে আবর্জনা ফেলা বন্ধ করা এবং চলমান বড় প্রকল্পের উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) সংশোধন ও অনুমোদন কোনোটিই ঠিকভাবে সম্পন্ন হয়নি আজও।
না হওয়ার কারণ হিসেবে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান মুহাম্মদ রাশিদুল হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসন নিয়ে সভা হলেও সংস্থাগুলো সরকারি ‘প্রটোকল’-এর জন্য অংশ নেয়। নিজেদের মধ্যে দূরত্বের কারণে একের পর এক সমন্বয় সভায় অনেক সিদ্ধান্ত হলেও তা বাস্তবায়ন করার তাগিদ মনে করছে না সংস্থাগুলো। এই পরিস্থিতি নিরসনের জন্য সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে পদক্ষেপ নিতে হবে।
সরকারি যত সংস্থা আছে তার সবকটি গঠন করা হয়েছিল রাষ্ট্রের নাগরিকদের সেবা ও স্বস্তি দেওয়ার লক্ষে। এখন সে সংস্থাগুলো সে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ভুলে গিয়ে যদি নিজেদের মধ্যে বিতর্কে জড়িয়ে যায় তা হবে অত্যন্ত দুঃখজনক। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ দুটোই সেবা সংস্থা। এ দুই সংস্থার কাজই হলো নগরবাসীকে সেবা দেওয়া ও পরিকল্পিত নগর গড়ে তোলা। এখন এই দুই সংস্থার রশি টানাটানিতে যদি জনদুর্ভোগ বাড়ে তাহলে তাতে জনরোষই সৃষ্টি হবে।