৫ অক্টোবর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি হিসেবে আসা প্রথম চালানের ইউরেনিয়াম বাংলাদেশের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করার মধ্য দিয়ে পারমাণবিক বিশ্বে যোগ হলো বাংলাদেশের নাম। চালান হস্তান্তর করেন রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক সংস্থা রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ। হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। এর মধ্য দিয়ে পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের যুগে প্রবেশসহ বিশ্বে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারকারী দেশের তালিকায় ৩৩তম সদস্য হলো বাংলাদেশ। সেসঙ্গে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালের অক্টোবরে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। দীর্ঘ ১০ বছর পর দেশের সবচেয়ে বড় এ প্রকল্পটি বাস্তব রূপ পেতে যাচ্ছে।
দুই ইউনিটের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের সামগ্রিক কাজের ৯০ শতাংশ ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। নির্মাণকাজ শেষ হলে রূপপুর কেন্দ্রের দুটি ইউনিটে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা রয়েছে। একবার জ্বালানি দেওয়ার পর ১৮ মাস নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দূষণ সৃষ্টি করে কম। কমবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচও। সব মিলে বলা যায়, এ বিদ্যুৎকেন্দ্র দেশে ক্লিন এনার্জির মডেল হিসাবে বিবেচিত হবে, যা থেকে দীর্ঘমেয়াদে পাওয়া যাবে বিদ্যুৎ। আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে পরীক্ষামূলকভাবে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক। তবে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হবে ২০২৫ সালের শুরুতে। প্রকল্পটি চালু হলে দেশের জিডিপিতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ২ শতাংশ অবদান রাখবে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনকে ব্যক্তিগতভাবে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন তুলনামূলক সস্তা ও পরিবেশবান্ধব হলেও ঝুঁকিও কম নয়। প্রধানমন্ত্রী সে কথা মনে রেখে আইএইএ-কে এ প্রকল্পে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে তাদের সার্বিক সহায়তা ও মনিটরিং করার আহ্বান জানান।
জানা গেছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে রাশিয়ার সেরা কর্মকৌশল, বহু বছরের অভিজ্ঞতা এবং বৈজ্ঞানিক চিন্তাকে কাজে লাগানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকৌশলগত দিকসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনার কাজ বিদেশি দক্ষ কর্মীরাই করবেন।
এটি নিঃসন্দেহে একটি বড় অর্জন বাংলাদেশের। তবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি সঞ্চালনের ব্যবস্থায় যদি পরিবর্তন আনা না যায় তাহলে অগ্রগতি অনেকটা ব্যাহত হবে সেটা মনে রাখা দরকার।