২০২৪ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ১২৯ শিক্ষার্থী। জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রী ৯৮ হাজার ৭৭৬ জন। ছাত্র ৮৩ হাজার ৩৫৩ জন।
এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ছাত্রীদের তুলনায় ছাত্র সংখ্যা কমে যাওয়ার এবং পাসের হারে নিয়মিতভাবে ছাত্রদের পিছিয়ে থাকার কারণ খুঁজতে বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার সকালে মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে তিনি বলেন, ১১টি শিক্ষা বোর্ডে মোট ২০ লক্ষ ৩৮ হাজার ১৫০ জন পরীক্ষার্থী ছিল। ছাত্রসংখ্যা ৯ লক্ষ ৯৯ হাজার ৩৬৪ জন। আর ছাত্রী সংখ্যা ১০ লক্ষ ৩৮ হাজার ৭৮৬ জন। কারণটা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে, ছাত্র সংখ্যা কেন কম। কী কারণে ছাত্র কমে যাচ্ছে? পাসের হারের ক্ষেত্রেও অনেক ক্ষেত্রে মেয়েরা এগিয়ে। সেটা খুব ভালো কথা। কিন্তু তারপরও আমি বলব, এ বিষয়টায় আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী একটি জরুরি ও অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে সামনে এনেছেন। গত কয়েকবছর ধরে লক্ষ করা যাচ্ছে, ছেলেরা মেয়েদের তুলনায় পরীক্ষায় খারাপ করছে। অনেক জায়গায় শুধু পরীক্ষায় নয় নিয়মিত পাঠগ্রহণের ক্ষেত্রেও পিছিয়ে পড়ছে ছেলেরা। অর্থাৎ মাঝপথে প্রচুর ছেলে ড্রপআউট হচ্ছে।
এর কারণ হিসেবে দেশের অভিজ্ঞজনেরা মনে করেন, প্রথমত মেয়েদের জন্য রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ বেশি। তারা বিনা বেতনে পড়ে, উপবৃত্তিসহ নানা সুযোগ-সুবিধা পায়। ছেলেরা সেটা পায় না। ছেলেরা আড্ডা দিয়ে প্রচুর সময় ব্যয় করে। মেয়েরা ওই সময়ে লেখাপড়া করে। এ ছাড়া মেয়েরা অনেক ঝুঁকি পার করে এসেছে। বাল্যবিয়ে, দারিদ্র্য, নিরাপত্তাহীনতা- এমন অনেক বিষয়ের সঙ্গে মেয়েরা যুদ্ধ করে এগিয়েছে। এজন্য মেয়েদের ব্যাপারে পরিবারগুলোও এখন অনেক বেশি সচেতন।
এরপর আসে কিশোর গ্যাংয়ের বিষয়টা। ছেলেরা গ্যাংবাজি করে সময় নষ্ট করছে। তবে ছেলেদের পিছিয়ে পড়া ঠেকাতে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ সমান হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ছাত্রদের পিছিয়ে পড়ার পেছনে এসব কারণের পাশাপাশি মাদককেও দায়ী করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেন, ছেলেদের জন্য মাদক যতটা সহজলভ্য, মেয়েদের জন্য ততটা নয়। অনেক ছেলে স্কুলজীবনে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। এতে তার লেখাপড়া ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক ছাত্র কম বয়সে পরিবারের দায়িত্ব নিতে খণ্ডকালীন কাজ করছে। শহরের কম বয়সী ছেলেদের মধ্যে সন্ত্রাসে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বাড়ছে। বাইরে আড্ডা, খেলাধুলাও ছেলেরা বেশি করে। অনলাইন গেম ও অনলাইন জুয়ায় আসক্তিও ছেলেদের লেখাপড়ায় পিছিয়ে পড়ায় ভূমিকা রাখতে পারে।
আসলে এ নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা হওয়া উচিত। কারণ, এতদিন আমরা বলেছি নারী শিক্ষা বাড়াতে। এখন মেয়েরা এগিয়ে এলেও ছেলেরা পিছিয়ে পড়ছে। তাতে তো একই সমস্যা রয়ে গেল। এখন থেকে সতর্ক না হলে এবং সমস্যাকে চিহ্নিত করে তা সমাধানের চেষ্টা না করলে পুরো সমাজই পিছিয়ে পড়বে তখন।
এ মুহূর্তের সংবাদ