পটিয়ায় ভোটে সংঘাত সংঘর্ষের আশঙ্কা

কলকাঠি নাড়ছেন সাবেক হুইপ

নিজস্ব প্রতিনিধি,পটিয়া »

প্রার্থী ও সমর্থকদের হুমকি-ধামকিতে উতপ্ত হয়ে উঠছে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনী মাঠ। এখানে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক হারুনুর রশিদ ও চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম দিদার। দুইজনেই হেভিওয়েট প্রার্থী।

দিদারুল আলম চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী এবং অধ্যাপক হারুন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর অনুসারী।

নির্বাচনী মাঠে মুল আলোচনার বিষয় ভোট কি সুষ্ঠু হবে? নাকি কেন্দ্র দখল করে ভোট নেওয়া হবে। উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের মধ্যে নতুন করে গ্রুপিং দেখা দিয়েছে।

উপজেলা যুবলীগের নেতৃবৃন্দ চেয়ারম্যান প্রার্থী দিদারের পক্ষে এবং তৃণমূল আওয়ামী লীগের একটি অংশ অপর চেয়ারম্যান প্রার্থী অধ্যাপক হারুনুর রশিদের পক্ষে রয়েছে। তাছাড়া পটিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান সমিতির নেতৃবৃন্দ দিদারের পক্ষে নির্বাচনী মাঠে কাজ করছেন। চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকরা একে অপরের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছেন। এ পরিস্থিতিতে ভোটের দিন কিংবা ভোটের আগে সংঘাত-সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে। ভোটের আগে পুলিশের বিশেষ অভিযান না হলে এখানে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে স্থানীয়রা মনে করেন।

ইতোমধ্যে প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয় যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম বদি ও চেয়ারম্যান প্রার্থী দিদারুল আলম দিদারের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে। অভিযোগ ওঠেছে, পটিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে রাজনীতির মাঠে নতুন করে কলকাঠি নাড়ছেন চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক হুইপ সামশুল হক চৌধুরী। তিনি গত শনিবার রাতে চট্টগ্রাম নগরীর মোটেল সৈকতে তার অনুসারীদের নিয়ে বৈঠক করেন। এ বৈঠকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক হারুনুর রশিদকে চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাজেদা বেগম শিরু ও ভাইস চেয়ারম্যান ঝুলন্ দত্তের নাম উঠে আসে।

অপর দিকে, পটিয়া উপজেলা ইউপি চেয়ারম্যান সমিতির নেতৃবৃন্দ চেয়ারম্যান প্রার্থী দিদারুল আলম দিদারের পক্ষে কাজ করার ঘোষনা দেন।

দলীয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তৃতীয় ধাপে আগামী ২৯ মে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে পটিয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। এ নির্বাচনে পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার সাবেক মেয়র অধ্যাপক হারুনুর রশিদের সঙ্গে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম দিদার। দুই প্রার্থীই নির্বাচনী মাঠে তাদের শক্তি দেখাতে চান। এক্ষেত্রে মহানগর ও আশপাশের এলাকা থেকে দুই প্রার্থীর পক্ষে বহিরাগত লোক নির্বাচনী এলাকায় এলে সংঘর্ষের আশংকা থাকতে পারে।

পটিয়া উপজেলায় ১৭ ইউনিয়নের ১২৮টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৫৫টি ভোট কেন্দ্রকে ঝুঁকিপুর্ণ হিসেবে দেখা হয়েছে। ভোটে অস্ত্র আনবে, কেন্দ্র দখল করবে, ভোটের দিন মারামারি হওয়ার বিষয়ে এখন থেকে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এসবের কারণে সাধারন ভোটাররা এখন থেকেই আতংকিত।

গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীকে বিজয়ী করতে ভুমিকা রেখেছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী অধ্যাপক হারুনুর রশিদ ও চেয়ারম্যান প্রার্থী দিদারুল আলম দিদার। উপজেলা নির্বাচনে দুইজনেই চেয়ারম্যান হওয়ায় তৃণমূল নেতাকর্মীরা বেকায়দায় এবং নতুন করে দলের মধ্যে বিভাজন দেখা দিয়েছে। যা পরবর্তীতে বৃহৎ আকার ধারণ করতে পারে। বিভাজনের সুযোগ কাজে লাগাতে চান সাবেক হুইপ সামশুল হক চৌধুরী।

পটিয়া থানার ওসি জসীম উদ্দিন জানিয়েছেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পটিয়ায় যাতে বহিরাগত কেউ নির্বাচনী এলাকায় প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তাছাড়া যেসব ভোট কেন্দ্র ঝুঁকিপুর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে তা উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ইতোমধ্যে অবহিত করা হয়েছে। যারাই বিশৃঙ্খলা করুক তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান।

উল্লেখ্য, পটিয়ায় এবার ভোটার ৩ লাখ ৩৪ হাজার ৫৪৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭৫ হাজার ৭৩৮ জন, নারী ভোটার ১ লাখ ৫৮ হাজার ৮০৬ জন।