
মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক আহত
মুক্তিযোদ্ধার সমাবেশ পণ্ড করে দিল মোস্তাফিজুরের অনুসারীরা
বাঁশখালীর পৌর মেয়র সেলিম হকের নেতৃত্বে হামলার অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক
বাঁশখালীর প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আলী আশরাফকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা না দেওয়া এবং মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে সাংসদের অবমাননাকর মন্তব্যের প্রতিবাদে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধনে হামলা চালিয়েছে সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমানের অনুসারীরা। হামলায় সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা আহত হয়েছেন।
গতকাল সোমবার সকালে নগরীর জামালখান প্রেস ক্লাব চত্বরে এ প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধনের আয়োজন করে চট্টগ্রাম জেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড।
বাঁশখালীর পৌর মেয়র সেলিম উল হকের নেতৃত্বে এ হামলা করা হয় বলে আয়োজকরা অভিযোগ করেন। সেলিম বাঁশখালী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
পৌর মেয়র সেলিম উল হকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার নেতৃত্বে সেখানে কোনো হামলা হয়নি।’
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাঁশখালীর কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা, স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফফর আহমদসহ বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা এবং সন্তান কমান্ডের নেতৃবৃন্দ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। কর্মসূচি শুরুর পর সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ১৫-২০ জনের একটি দল হঠাৎ কর্মসূচিতে লাঠিসোটা নিয়ে অতর্কিত হামলা শুরু করে।
মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মোজাফফর আহমদ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাকে অস্বীকার করে বাঁশখালীর এমপির বক্তব্যের প্রতিবাদে মানববন্ধন চলাকালে হঠাৎ আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়। হামলাকারী সকলেই বাঁশখালীর এমপি মোস্তাফিজুর রহমানের অনুসারী। এতে ১০ জন মুক্তিযোদ্ধা আহত হয়েছেন।
কর্মসূচিতে সংহতি জানাতে আসা হামলার শিকার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ সুপ্রভাতকে বলেন, ‘আসলে এটি একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা। এ ঘটনায় নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। হামলায় আমি নিজে এবং আরো বেশ কয়েকজন সাংবাদিক ও মুক্তিযোদ্ধা আহত হয়েছেন। বাঁশখালীর সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমানের ব্যক্তিগত সহকারী এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান রাসেল ও বাঁশখালীর পৌর মেয়র সেলিম উল হক চৌধুরী হামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন।’
হামলায় আহত ফটোসাংবাদিক হায়দার আলী বলেন, ‘সোমবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর নামে একটি ব্যানার সহকারে মিছিল নিয়ে জয় বাংলা সেøাগান দিতে এসে মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশে হামলে পড়ে। লাঠি, বাঁশ, মাইকের স্ট্যান্ড এবং দোকানের ছোট সাইনবোর্ড তুলে নিয়ে হামলাকারীরা সামনে যাকে পেয়েছে তাকেই বেধড়ক পিটিয়েছে। এ ঘটনায় আমিসহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিকও আহত হয়েছে। ছবি তুলতে গেলে সাংবাদিকদের ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে হামলাকারীরা।’
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কোতোয়ালী জোনের সহকারী কমিশনার নোবেল চাকমা বলেন, ‘প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত কর্মসূচিতে একটি পক্ষ হামলা করেছে শুনেছি এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনাস্থল থেকে তিন হামলাকারীকে আটক করা হয়েছে।’
২৬ জনের নামে মামলা
এদিকে, সমাবেশে হামলার ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। মামলা করেছেন প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আলী আশরাফের ছেলে জহির উদ্দিন মো. বাবর।
এতে আসামি করা হয়েছে বাঁশখালীর সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমানের ব্যক্তিগত সহকারী এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান রাসেল ও বাঁশখালীর পৌর মেয়র সেলিম উল হক চৌধুরীসহ ২৬ জনকে।
সোমবার বিকালে কোতোয়ালি থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন সুপ্রভাতকে বলেন, ‘কর্মসূচিতে বেআইনিভাবে হামলার অভিযোগে একটি মামলাটি হয়েছে। এতে ২৬ জনের নাম উল্লেখ এবং আরও অনেক অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে সাংসদের ব্যক্তিগত সহকারী রাসেলসহ চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’
রাসেল ছাড়া গ্রেফতার বাকি তিনজন হলেন-মো. এনাম, আবুল কালাম ও মিজানুর রহমান।
উল্লেখ্য, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকা-ের পর প্রথম প্রতিবাদকারী প্রয়াত মৌলভী সৈয়দের ভাই মুক্তিযোদ্ধা আলী আশরাফ মারা যান গত ২৬ জুলাই। পরদিন বাঁশখালীতে নিজ বাড়িতে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই তার দাফন করা হয়। ওই মুক্তিযোদ্ধার রাষ্ট্রীয় সম্মান দেয়া ছাড়া দাফনের ঘটনা তদন্তে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসককে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে গত ২৮ জুলাই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।
















































